আজ চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ
প্রচারণায় সময় থাকছে তিনদিন

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ অনিয়মের অভিযোগে বার বার পিছিয়ে অবশেষে আদালতের নির্দেশে আগামী ১৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ওষুধ ব্যবসায়ীদের সর্ববৃহৎ সংগঠন বাংলাদেশ কেমিস্টস্ এন্ড ড্রাগিস্টস্ সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচন। ২০২১-২৩ শেসনের জন্য ওইদিন দেশের আটটি বিভাগীয় সদরে ভোটের মাধ্যমে প্রথমে ৪৩সদস্যের পরিচালনা বোর্ড গঠিত হবে। এরপর পরবতী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে নির্বাচিত ৪৩জন পরিচালকের ভোটে নির্বাচিত হবেন একজন সভাপতি, একজন সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাতজন সহ-সভাপতি। বাকী ৩৪জন পরিচালক হিসেবে থাকবেন নির্বাহী পরিষদে।
এদিকে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশের ওষুধ ব্যবসায়ীদের মধ্যে চলছে নির্বাচনী আমেজ। যদিও আদালতের রায়ের ২৩দিন পর পুন:তফশীল ঘোষণা এবং চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর প্রচারণায় মাত্র চারদিন সময় পাওয়ায় অনেক প্রার্থীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনিয়মের কারণে আগের কমিটির সভাপতির চিঠিতে গঠিত আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদত্যাগ, ভোটার তালিকা নিয়ে অস্বচ্ছতাসহ নানা কারণে এবারের নির্বাচনও অনেকটা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বলেও অনেকের আশংকা। তাছাড়া নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে খুলনা শাখার ভোটার তালিকায় অবৈধ ভোটার রয়েছে এমন দাবিকেও উপেক্ষা করে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবারের ভোট। যদিও নির্বাচন বোর্ডের খুলনা বিভাগীয় রিটার্নিং অফিসার সৈয়দ মাসুদ আলী নিলু বলেছেন, ভোটার তালিকা সম্পর্কে আপত্তি করে চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও তার কাছে এ সংক্রান্ত কোন নির্দেশনা এখনও আসেনি। নির্বাচনী তফশলী অনুযায়ী আজ রোববার চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের কথা রয়েছে।
অপরদিকে, এবারের বিসিডিএস নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশের ন্যায় খুলনায়ও প্রার্থীরা দু’টি প্যানেলে বিভক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। বিসিডিএস খুলনা শাখার মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি মো: মোজাম্মেল হকসহ চারজন প্রার্থী মোজাম্মেল-কাজী কামাল পরিষদে এবং খুলনা শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি কবির উদ্দিন বাবলুসহ শাহজালাল বাচ্চু-বাবলু পরিষদে তিনজন প্রার্থী রয়েছেন। আজ রোববার চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের মধ্যদিয়েই মূলত: নির্বাচনী মূল প্রচারণা শুরু হবে। যদিও আগামী ১৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার পয়লা বৈশাখ এবং ১৫ এপ্রিল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় প্রচারণায় সময় থাকছে মাত্র তিনদিন। সারাদেশের ১৬ হাজার ৫৬জন ভোটারের কাছে এ সময় মোটেই যথেষ্ঠ নয় বলেও অনেকে মনে করছেন।
এ সম্পর্কে সম্প্রতি আহমেদ ফয়েজ নামের এক প্রার্থী তার নিজস্ব ফেসবুক পেজে বিসিডিএস’র কেন্দ্রীয় কমিটির বর্তমান প্রশাসক বরাবর খোলা চিঠি দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে আগামী ১৬ এপ্রিলের নির্বাচনও বাতিলসহ নতুন করে নির্বাচন বোর্ড গঠনের দাবি জানিয়েছেন।
খোলা চিঠিতে তিনি লিখেছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভিত্তিতে তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পত্রের মাধ্যমে গত ৩১ মার্চ দায়িত্বভার গ্রহণ করে কেমিস্টদের অভিভাবকের ভূমিকা পালন করছেন। এজন্য অভিভাবক হিসেবে প্রশাসকের কাছে আদালতের রায়ের আলোকে এ-ফ্রেশ তফশিলের মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্বাচন দেয়ার দাবি জানানো হয়। সেখানে আরও উল্লেখ করা হয়, নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বাস্তবায়ন না করে এ-ফ্রেশ তফসিল না-দিয়ে সংশোধিত তফসিল দিয়েছেন। তাও আবার রায়ের ২৩ দিন পর। যদি রায়ের সাতদিন পরও সংশোধিত তফসিল ঘোষণা করা হতো তাহলে পরবর্তী প্যানেলের পরিচালকবৃন্দ ১৬ থেকে ১৮ দিন প্রচারণার সুযোগ পেতেন। কিন্তু নির্বাচন বোর্ডের এই ইচ্ছাকৃত বিলম্বের কারণে পরবর্তী প্যানেলের প্রার্থীরা প্রচারনার সুযোগ পাবেন মাত্র ৪ কার্যদিবস। এই অল্প সময়ের মধ্যে সারাদেশে আটটি বিভাগ এবং ৬৪ জেলা অসংখ্য উপশহরে প্রার্থীরা কিভাবে প্রচারণা চালাবেন সেটিও বিচারের দাবি জানানো হয় প্রশাসকের কাছে।
এদিকে, বিসিডিএস’র কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচনী প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে উল্লেখ করে নির্বাচন বোর্ডের খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধি ও রিটার্নিং অফিসার সৈয়দ মাসুদ আলী নিলু বলেন, আগামী ১৬ এপ্রিল সকাল ৯টা হতে বিকেল চারটা পর্যন্ত নগরীর সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল সংলগ্ন লেট নাইট হোটেলে ভোট গ্রহণ করা হবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দু’টি পক্ষের সাথে আলোচনা করেই ভোট গ্রহণের স্থান নির্বাচন করা হয় বলেও তিনি জানান। বিশেষ করে বিভাগের ১০ জেলা থেকে আগত ভোটারদের জন্য যাতায়াত সুবিধার কথা বিবেচনা করেই ওই স্থান নির্বাচন করা হয় বলেও তিনি জানান। তবে কেন্দ্র থেকে যে কোন সময় যে কোন নির্দেশনা আসুক না কেন সে নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করা হবে বলেও তিনি জানান।
নির্বাচনে একটি পরিষদের প্রধান ও খুলনা শাখার মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি মো: মোজাম্মেল হক গত ২০ মার্চ নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে বেশকিছু ভোটারের নম্বর উল্লেখ করে তাদেরকে অবৈধ বলে দাবি করেছেন। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, খুলনা জেলা শাখায় এবার মোট ১২০৮জন ভোটার থাকলেও তার মধ্যে ৬৬৬জনেরই টিআইএন নম্বর ঠিক নেই। অর্থাৎ প্রশ্নবিদ্ধ ভোটার তালিকা দিয়ে নির্বাচন কোনক্রমেই স্বচ্ছ হতে পারে না। তার পরেও তিনি স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার জন্যই প্রার্থী হয়েছেন।
অপরদিকে একাধিক ওষুধ ব্যবসায়ী জানান, নির্বাচনের আর মাত্র ছয়দিন বাকী থাকলেও এখনও পর্যন্ত খুলনার অনেক ভোটারের কাছে পরিচয়পত্র এসে পৌছেনি। এটিও নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আর একটি অস্বচ্ছতা বলেও তাদের দাবি।
এ প্রসঙ্গে খুলনার রিটার্নিং অফিসার সৈয়দ মাসুদ আলী নিলু বলেন, ভোটারদের কাছে পরিচয়পত্র পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। যাদের কাছে না পৌঁছবে তারা ভোটের দিন এসে কার্ড সংগ্রহ করে ভোট দিতে পারবেন। তবে এ প্রসঙ্গে ভোটারদের দাবি কার্ড সংগ্রহ করতে গিয়ে যে সময় ব্যয় হবে তারপর আবার ভোট দেয়া অনেকের পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে। এ বিষয়টিও আগে স্পষ্ট করা দরকার বলেও কয়েককজন ভোটার মনে করেন।