এক মাসের মধ্যেই
হস্তান্তরের আশাবাদ

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অভ্যন্তরে প্রায় নয় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হলো খুলনা মাল্টিপারপাস ভবন। পাঁচ তলার এ ভবনটি এখন খুমেক হাসপাতাল ও খুলনা মেডিকেল কলেজের মধ্যবর্তী স্থানের একটি দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। যদিও ভবনটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ এখনও চলমান। তবে এ কাজের জন্য এখন থেকে আর সর্বোচ্চ এক মাসের মধ্যেই ভবনটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা সম্ভব হবে বলে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী জানিয়েছেন।
এদিকে, ১৮ মাসের সময় নিয়ে ২০২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সারাদেশের ১০টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অভ্যন্তরের ন্যায় খুলনায়ও এ ভবনের কাজটি শুরু হয়। কিন্তু মাঝপথে করোনা অতিমারীর কারণে ভবনের নির্মাণ কাজে কিছুটা বিঘœ ঘটে। এজন্য চলতি বছরের ২৬ মার্চ পর্যন্ত আরও এক দফায় সময় বৃদ্ধি করা হয়। বর্ধিত সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ না হলেও অনেকটাই সম্পন্ন হয়। সর্বশেষ বিদ্যুতের সাব-ষ্টেশন নির্মাণের ক্ষেত্রে কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি হয়।
ওয়েষ্ট জোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানীর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৪এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শোয়াইব হোসেন বলেন, খুমেক হাসপাতালের মাল্টিপারপাস ভবনে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য যে আবেদন করা হয়েছিল সেটি ছিল অসম্পূর্ণ। এছাড়া সাব ষ্টেশনের মালামাল খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়-কুয়েট থেকে পরীক্ষা করাতেও কিছুটা সময় ক্ষেপন হয়। সব মিলিয়ে কাগজপত্র ঠিক করে দেয়ার সর্বোচ্চ ১৪ দিনের মধ্যেই সংযোগ দেয়া সম্ভব বলেও তিনি জানান।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বা এইচইডি’র খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, পাঁচতলা বিশিষ্ট এ ভবনটির নিচ তলায় থাকছে রোগীর দর্শনার্থীদের জন্য বসার জায়গা, ক্যান্টিন, একটি ফার্মেসী, একটি ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর এবং নারীদের জন্য ব্রেষ্ট ফিডিং রুম।
এ ভবনের দ্বিতীয় তলায় থাকবে ওষুধ, মেডিকেল যন্ত্রপাতি এবং ইপিআই’র জন্য তিনটি পৃথক ষ্টোর এবং ষ্টোর কীপারের কক্ষ।
তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় থাকবে ডাক্তারদের জন্য সাতটি করে মোট ১৪টি ডরমেটরী, জিমনেশিয়াম, রেষ্ট রুম এবং বিনোদন কক্ষ।
ভবনের ৫ম তলায় থাকবে পাঁচ তারকা মানের তিন স্যুট ও একটি কনফারেন্স রুম।
এছাড়াও ভবনটির ছাদে আধুনিক মানের টাইলস বসিয়ে নকশা করা হয়েছে। তাছাড়া ছাদে বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে সোলার সিস্টেমও রাখা হয়েছে। ভবনের নিচের সামনের অংশে ফুল বাগানের জন্য জায়গা রাখা হয়েছে। নিচ তলা থেকে দোতলার ষ্টোর পর্যন্ত ওষুধ ও অন্যান্য মেডিকেল যন্ত্রপাতি ওঠানো-নামানোর জন্য একটি লিফট স্থাপন করা হলেও যাত্রী বহনের জন্য লিফট এখনও বসানো হয়নি। তবে এজন্য জায়গা রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে বরাদ্দ সাপেক্ষে সেখানে লিফট বসানো হতে পারে বলেও জানান উক্ত প্রকৌশলী। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আর মাত্র একমাসের মধ্যেই ভবনটি খুমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: মো: রবিউল হাসান বলেন, এ ভবনটির কার্যক্রম শুরু হলে হাসপাতালের ষ্টোর ও ষ্টোর কীপারকে সেখানে স্থানান্তর করা হবে। এর ফলে আরও একটি ওয়ার্ডের কার্যক্রম যেমন শুরু করা যাবে তেমনি হাসপাতালের দোতলায় বর্তমানে যে ক্যান্টিনটি রয়েছে সেটিও বন্ধ করে সেখানে প্যাথলজী বিভাগ সম্প্রসারণ করা যাবে। এছাড়া ডরমেটরিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষীয় কয়েকজনের থাকার জায়গা হলে একদিকে যেমন হাসপাতালের শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে তেমনি রোগীর দর্শনার্থীদেরও বিচ্ছিন্নভাবে ঘুরে বেড়াতে হবে না। একটি ফার্মেসী থাকলে সেখান থেকেও রোগীরা সুলভ মূল্যে ওষুধ কেনার সুযোগ পাবে। যেটি সার্বিক দিক দিয়ে স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি হবে বলেও তিনি আশা করছেন।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আশুতোষ কর্মকার বলেন, দেশের ১০টি জেলায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অভ্যন্তরে এমন ১০টি মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি ভবনই একই ডিজাইনের করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাড়ে পাঁচ হাজার বর্গফুটের আয়তনবিশিষ্ট এ ভবনটি তৈরিতে খরচ হয় আট কোটি ৯৪ লাখ টাকা। ভবনটি নির্মানের জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ঢাকার মাজেদা এন্টারপ্রাইজ।