বেড়িবাঁধ দাবিতে গ্রামবাসীদের মানববন্ধন
এম. পলাশ শরীফ, মোরেলগঞ্জঃ বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে পানগুছি নদীর অব্যাহত ভাঙ্গন থেমে নেই। নতুন করে ভাঙ্গনে হুমকির মুখে ৩ গ্রামের দুই হাজার পরিবার। বুধবার বেলা ১১টায় স্থানীয় ভুক্তভোগীরা পাঁচ কিলোমিটার স্থায়ী বেড়িবাঁধের দাবিতে মানববন্ধন করেন।
সরেজমিনে জানা গেছে, উপকূলীয় বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের নদীর তীরবর্তী হোগলাবুনিয়া ইউনিয়নের সানকিভাঙ্গা, বদনীভাঙ্গা, পাঠামারা, হাজিগঞ্জ বাজার অভিমুখি বলেশ্বর সিমান্তবর্তী তিন গ্রামের প্রায় ২ হাজার পরিবারের ৮ হাজার মানুষের এখানে বসবাস।
পানগুছি নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যাদের জীবনযাত্রা। নতুন করে আবারও ভাঙ্গনের মুখে আশংকায় রয়েছে বসতবাড়ি, ফসলী জমি, ৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বদনী ভাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বিএস রহমতিয়া দাখিল মাদ্রাসা, ৪টি মসজিদ, বাটা বাজার, বদনীভাঙ্গা বাজার, পানগুছি বাজার ও হাজিগঞ্জ বাজার। স্বাধীনতা পরবর্তী ৮০’র দশক থেকে পানগুছি নদীর এ ভাঙ্গন প্রতিনিয়ত অব্যাহত রয়েছে। প্রতিবছরই নদীগর্ভে নতুন নতুন স্থান থেকে ভেঙে যাচ্ছে বসতবাড়ি নদীতে চলে যাওয়ায় সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে শত শত পরিবার হয়েছে অভিবাসন। চলে গেছেন রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায়। এ অব্যাহত ভাঙ্গনের কারণে দিন দিন ফসলী জমি কমে যাচ্ছে তেমনি পূর্ণিমার জোয়ারের প্রবল স্রোতে রাস্তাঘাট ভেঙে যাচ্ছে। গবাদী পশু নিয়ে পড়ছে হয়েছে চরম বিপাকে। শুধুমাত্র আমন ফসলের ওপর নির্ভর করে চলতে হচ্ছে এ অঞ্চলের কৃষকসহ জনসাধারণের। এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার বিঘা ফসলী জমি পানগুছি নদীর করাল গ্রাসে বিলীন হয়েছে।
কৃষক আতাহার আলী শেখ, সালেহা বেগম, তোফাজ্জেল মাতুব্বর, আব্বাস ডাক্তার, সেলিম খান, বাবুল মাতুব্বার, ওবায়দুল মাতুব্বারসহ একাধিক বাসিন্দারা বলেন, দীর্ঘ বছরধরে শুনে আসছি বেড়িবাঁধ হবে। কবে হবে বেড়িবাঁধ? ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি নদী ভেঙে যাচ্ছে। অনেকেরই ৩০/৪০ বিঘা জমি নদীতে চলে গেছে। বাড়িঘর না থাকায় নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছেন হাজারও পরিবার। সরকারের কাছে দাবি বদনীভাঙ্গা হয়ে হাজিগঞ্জ বাজার বলেশ্বরের সীমান্ত পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার স্থায়ী বেড়িবাঁধ হলে ৩ গ্রামের মানুষের দৈন্যন্দিন জীবনযাপন আর ব্যাহত হবে না। কলেজ অধ্যক্ষ সাবিনা ইয়াসমিন, সংশ্লিষ্ট ইউপি মেম্বর শহিদুল ইসলাম বলেন, ভেড়িবাঁধের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করা হলেও কোন প্রতিকার মেলেনি। নদীর অপরপ্রান্তে বেড়িবাঁধের কাজ চলছে। বৈষম্যের শিকার হয়ে ওই প্রকল্পের সাথে সংযুক্ত হয়নি বেড়িবাঁধের কাজ। পানিউন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট দাবি ৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের।
এ বিষয়ে মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাবিবুল্লাহ বলেন, নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে উপকূলীয় এ উপজেলায় কিছু অংশে বেড়িবাঁধের কাজ চলমান রয়েছে। নতুন করে কয়েকটি স্থানে ভাঙনের কথা শুনেছি। বিষয়টি উপজেলা মাসিক সমন্বয়ে তুলে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মাধ্যমে পানিউন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।
বাগেরহাট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মদ আল বিরুনী বলেন, মোরেলগঞ্জ উপজেলায় ইতোমধ্যে পানগুছি প্রকল্পের মাধ্যমে ৬শ ৫০ কোটি টাকার বেড়িবাঁধের কাজ ২০২৩ সালে খাউলিয়া থেকে ফেরীঘাট পর্যন্ত সাড়ে ৪ কিলোমিটার এবং শ্রেণিখালী এলাকায় দেড় কিলোমিটার বেড়িবাঁধের কাজ চলমান রয়েছে। ভাঙ্গনকবলিত বিভিন্ন স্থানে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। পরবর্তীতে ব্লগ ফেলা হবে। হোগলাবুনিয়ার ভাঙ্গনের বিষয়টি তিনি অবহিত নন। স্থানীয়রা লিখিতভাবে জানালে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।