কেশবপুর উপজেলার ব্যাসডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল মামুন। বয়স ৩৪ বছর।লেখা পড়ায় ফ্যাশন ডিজাইনিংএ স্নাতক পাশ করে ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরী নিয়ে ছিলেন,মাস শেষে ভালো বেতনও পেতেন।চাকুরী তার ভালো লাগতো না। সব সময় মনে হতো আমি নিজেই মালিক হবো সেটা উদ্যোক্তা হয়ে নিজের প্রতিষ্ঠানে কাজ করবো।তার সেই ইচ্ছা পূরন হয়েছে।তিনি নিজেই উদ্যোক্তা হয়েছেন ।গড়ে তুলেছেন সাগরদাঁড়ি কপোতাক্ষ নদের তীরে একটি জলস প্রাণীর খামার।এখন তিনি সফল একজন উদ্যোক্তা।অ্যাকুয়া ক্রাব নাম দিয়েছেন তার খামারের।
উক্ত খামারে চাষ করেছেন বগদা,গলদা ও ভেনামি চিংড়ির সাথে কাঁকড়ার চাষ।
এই খামারে তিনি ২ কোটী টাকা খরচ করেছেন।এরই মধ্যে ৫০ লক্ষ টাকা আয় হয়েছে।গতবছর লাভ হয়ে ছিলো ২০ লক্ষ টাকার মত।তিনি জানান ২০১৮ সালে চাকুরি ছেড়ে তিনি চট্রগ্রামের ভেটেরেনারি এ্যান্ড এ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৎস্য বিজ্ঞানে একটি কোর্স করেন।
এরপর কুমিল্লায় এক বন্ধুর সঙ্গে চিংড়ি চাষ শুরু করেন আব্দুল্লাহ আল মামুন।সেখানে একদিন জালে ধরা পড়ে দুটি কাঁকড়া।সেদুটি বিক্রি কওে মনে হলো চিংড়ি মাছের থেকে কাঁকড়া চাষে লাভ বেশী। পরের বছর মহাখালিতে বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টাওে একটি প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়ে বিজয়ী হন।সেখানে ২৩ লাখ টাকার পুরস্কার পান তিনি।পুরস্কারের ২৩ লাখ টাকা তার প্রাথমিক পুজি হিসেবে উৎসাহের সৃষ্টি করে। লোনা পানিতে কাঁকড়া ভালো হয় বলে তিনি কপোতাক্ষ নদঘেষা ৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন জলোজ প্রাণির খামার।ই্উরোপের দেশ নেদারল্যান্ডসে যে ভাবে কাঁকড়ার চাষ হয় সেটা অনুস্নরন করেন।
একই সাথে বাংলাদেশ শিল্প ও গবেসনা পরিষদ থেকে এ পদ্বতি সম্পর্কে শেখেন তিনি।বর্তমানে প্রকল্পটি তার লাভজনক প্রকল্পে রুপ নিয়েছে।তার খামাওে কঠের বাক্সে প্রতিটি কাকঁড়া আলাদা কওে চাষ করা হচ্ছে।একটি কাঁকড়া এনে ছাড়ার ২৫ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে সে খোলস পাল্টে নরম খোলসের কাঁকড়ায় পরিনত হয়।সেই সময় এটি বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে।
তিনি বলেন এখানে দু ধরনের কাঁকড়ার চাষ হচ্ছে।একটি নরম খোলসের কাঁকড়া আরেকটি শক্ত খোলসের কাঁকড়া।বিদেশে নরম খোলসের কাঁকড়ার চাহিদা বেশি।কারন হিসেবে জানান নরম খোলসের কাঁকড়া পুরোটাই খাওয়া যায়।বর্তমানে এই খামারে ৭৩ হাজার কাঠের বক্সে কাঁকড়ার চাষ হচ্ছে।১৭টি গ্রেডের নরম খোলসের কাঁকড়া গ্রেড ভেদে প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয় বলে জানান খামার মালিক।
কাঁকাড়াগুলো সুন্দরবনের বিভিন্ন উপকুলের নদী থেকে সংগ্রহ করেন প্রতি কেজি ৫২০ টাকা দরে। খাদ্য হিসেবে কাঁকড়ার জন্য তেলাপোয়া মাছ কেটে কেটে।এর একটি অংশ দেয়া হয় চিংড়ি মাছের জন্য।একই খামাওে এই পদ্বতিতে চিংড়ি ও কাঁকড়া বেড়ে ্ওঠে।নরম খোলসের কাঁকড়া বর্তমানে অষ্ট্রেলিয়া,কোরিয়া,মালয়েশিয়া ও চিনে রপ্তানি করা হচ্ছে বলে জানান খামার মালিক মামুন।এসব কাঁকড়া ধরে কোল্ডস্টোরেজে রেখে প্যাকেট করে বিদেশে পাঠানো হয়। শিগগিরই কাঁকড়ার রেডি ফুড প্যাকেটজাত করে বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।রপ্তানির জন্য কাঁকড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের বিষয়ে আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, খামারের বক্স থেকে নরম খোলসের কাঁকড়া তুলে মিঠাপানিতে রাখা হয়, যাতে লবণাক্ততা না থাকে। এরপর ৪০ মিনিট অক্সিজেন দেওয়া হয়।
তারপর পুনরায় সেগুলো মিঠাপানিতে ধোয়া, গ্যাস দেওয়া, ক্লোরিন দ্রবণে ভেজানো এবং আইসবাথ করানোর পর কাঁকড়া প্যাকেটে ঢোকানো হয়। এসব কাঁকড়া সাতক্ষীরার মৌতলা এলাকায় পাঠিয়ে সেখান থেকে বায়ারের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়ে থাকে।খামার মালিকের ভাষায়, এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য নিজের লাভের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। তিন বছর আগে যখন খামার করেন তখন খামারে শ্রমিক ছিলেন ৮ জন। এখন কাজ করছেন ২২ জন শ্রমিক। ভবিষ্যতে খামারে ২ লাখ কাঁকড়া চাষ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন তিনি। সেটা করতে পারলে আরও বেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।
এব্যপারে কেশবপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুদীপ বিশ্বাস জানান তিনি প্রকল্পটি দেখেছেন। প্রকল্পটি অনেক লাভজনক, কর্মসংস্থানও বেশি হচ্ছে। সে কারণে বলা যায়, এটি ভালো প্রকল্প। এটি যেহেতু লাভজনক প্রকল্প, সেকারনে অনেকেই এ বিষয়ে উৎসাহিত হবেন বলে আমার বিশ্বাস ।