খুলনার পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শয্যাভাব, অব্যবস্থাপনা ও রোগীর স্বজনদের অসংবেদনশীল আচরণের মধ্যে একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) দুপুরে হাসপাতালে বারান্দায় চিকিৎসাধীন এক বৃদ্ধা রোগী তুচ্ছ ঘটনায় দু’পক্ষের সংঘর্ষ দেখে আতঙ্কে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে চিকিৎসক।
নিহত নারীর নাম খুকুমনি বেগম (৭৫)। তিনি পাইকগাছা উপজেলার আরাজী ভবানীপুর গ্রামের আলী সানার স্ত্রী। বার্ধক্যজনিত পেটব্যথা ও উচ্চ রক্তে-চিনির জটিলতা নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে বেড না পেয়ে তাকেও রাখা হয় হাসপাতালের বারান্দায়।
স্বজনদের ভাষ্য অনুযায়ী, খুকুমনির ছেলে হাফিজুল ইসলাম মাকে বারান্দার শয্যায় রেখে প্রস্রাবের নমুনা নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় এক পাশের রোগীর ফ্যানের তারে তার পা আটকে যায়, ফলে ফ্যানের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। এতে উত্তেজিত হয়ে অপর রোগীর স্বজনরা হাফিজুল ও তার বোনকে গালিগালাজ শুরু করেন। প্রতিবাদ করলে শুরু হয় হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কি।
এ সময় কয়েকজন মিলে হাফিজুল ও তার বোনকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। তাদের মা খুকুমনি বেগম তখন পাশেই শুয়ে ছিলেন এবং এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি দেখে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. সঞ্জয় কুমার মণ্ডল বলেন, “খুকুমনি বেগম আজ সকালে খুবই অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি হন। মারামারির ঘটনার পর তিনি হঠাৎ নিস্তেজ হয়ে যান। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে।”
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শয্যার সংকটের কারণে অনেক রোগীই বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন, যা স্বাভাবিক চিকিৎসা পরিবেশকে ব্যাহত করছে। স্বজনদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও আগেও ঘটেছে বলে জানান একজন সিনিয়র নার্স।
ঘটনার খবর পেয়ে ডিএসবি সার্কেল আরিফুল ইসলাম ও পাইকগাছা থানার একটি টিম ঘটনাস্থলে ছুটে যান। নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তারা ঘটনাটি তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন।
এ ঘটনার পর এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন,কেন একজন বয়স্ক, গুরুতর অসুস্থ নারীকে বারান্দায় চিকিৎসা নিতে হয়? কেন হাসপাতালের ভেতরে এমন সহিংসতা ঘটে, তাও রোগীর সামনে?