কুষ্টিয়ার সীমান্তবর্তী উপজেলা দৌলতপুর যেন মাদকের স্বর্গরাজ্য। হাত বাড়ালেই মিলে নানা ধরণের মাদক। ভারত থেকে পাচার হয়ে আসা এ সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন দেশে প্রবেশ করে লক্ষ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকার মাদক। যা হাত বদল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে দেশের নানা প্রান্তে। সীমান্তরক্ষী বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে মাঝে মধ্যে দু’একজন মাদক বহনকারী (লেবার) ধরা পড়লেও এর মূল হোতারা সবসময়ই থেকে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তাই মাদক পাচার রোধ ও নিয়ন্ত্রণে নেপথ্যের গডফাদার বা হোতাদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি প্রয়োজন সবার সহযোগিতা ও আন্তরিক প্রচেষ্টা বলে অভিভাবক মহল।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে, দৌলতপুর সীমানায় ভারতের সাথে ৪৬ কি. মি. সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে ১৮ কি. মি. ভারত সীমান্তে কাটাতারের বেড়া থাকলেও বাঁকী সীমান্ত রয়েছে উন্মুক্ত। আর এই উন্মুক্ত সীমান্ত দিয়েই সীমান্তরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে প্রতিরাতে ভারত থেকে বাংলাদেশে পাচার হয়ে থাকে লক্ষ/কোটি টাকার ফেনসিডিল, হেরোইন, গাঁজা, ইয়াবা ও এলএসডিসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক। আবার কাটাতারের বেড়ার ওপার থেকেও ছুড়ে ফেলা হয় এপারে মাদকের চালান। যা মাদক বহনকারীদের মাধ্যমে হাত ঘুরে ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
উপজেলার চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের উদয়নগর, বাংলাবাজার, চরচিলমারী, মরারচর, চরপাড়া, চল্লিশপাড়া, মুন্সিগঞ্জ সহ বেশ কিছু উন্মুক্ত সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচার হয়ে থাকে কোনসময় নদী পথে আবার কোনসময় সশস্ত্র প্রহরায় লেবারদের মাধ্যমে। আবার প্রাগপুর ও আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের জামালপুর, মহিষকুন্ডি মাঠপাড়া, বিলগাথুয়া, ধর্মদহ সীমান্তের ওপারে ভারত সীমান্তে কাটাতারের বেড়া থাকায় এসব সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচার হয় নানা কৌশলে। ভারত থেকে পাচার হয়ে আসা এসব মাদক বহনকারীদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে দৌলতপুরসহ দেশের নানা প্রান্তে।তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে মাঝেমধ্যে মাদকের চালান ও মাদক বহনকারীদের কেউ ধরা পড়লেও এর নেপথ্যের মূল হোতারা সবসময়ই থেকে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। নেপথ্যের গডফাদারদের আইনের আওতায় আনা গেলে কমবে মাদকের ভয়াবহতা। আর এজন্য প্রয়োজন প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও শক্ত ভূমিকা বলে মনে করেন সচেতন মহল।
মাদক উদ্ধার অভিযানে সীমান্তরক্ষী বিজিবি’র শক্ত ভূমিকা লক্ষ্য করা গেলেও সে অর্থে পুলিশ বা অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা উল্লেখযোগ্য বা দৃশ্যমান নয়। গত বৃহস্পতিবার রাতেও বিজিবি মিরপুর বাস স্ট্যান্ডে যাত্রীবাহী বাসে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে ৯ হাজার ৭৫৭ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে যার আনুমানিক সিজার মূল্য মূল্য ২৯ লক্ষ ২৭ হাজার ১০০ টাকা। এর কয়েকদিন আগে দৌলতপুরের ঠোটারপাড়া সীমান্ত এলাকা থেকে প্রায় ৯ কোটি টাকা মূল্যের ৭৫ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল ও ১৭ বোতল (৫০ এমএল) ভারতীয় এলএসডি উদ্ধার করেছে এবং সোহেল নামে একজন মাদক কারবারীকে আটক বিজিবি।
মাদক উদ্ধার ও মাদক কারবারীদের আটকের বিষয়ে কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়ন (৪৭ বিজিবি) বিজিবি’র অভিযান এবং চোরাকারবারীসহ মাদক আটকে বিজিবি’র সর্বদা কার্যকর ভূমিকা অব্যাহত থাকবে বলে ৪৭ বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাহবুব মুর্শেদ রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়ে থাকেন।
অপরদিকে সীমান্ত দিয়ে রাতের আঁধারে মাদকের চালান ঢুকলেও পুলিশের দাবী, মাদকের নিয়ন্ত্রণ ও বিস্তার রোধে সর্বদা কঠোর অবস্থানে রয়েছেন দৌলতপুর থানা পুলিশ বলে জানিয়েছেন দৌলতপুর থানার ওসি মো. নাজমূল হুদা।
মাদক নিয়ন্ত্রণে সীমান্তে কঠোর নজরদারী বৃদ্ধিসহ মাদকের সাথে জড়িত নেপথ্যের মূলহোতা বা গডফাদারদের আইনের আওতায় আনা গেলেই কেবল কমবে মাদকের ভয়াবহতা। আর এমটিই মনে করেন এলাকার সচেতন মহল।