খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার থুকড়া গ্রাম যেন আচমকাই আতঙ্কের জনপদে রূপ নিয়েছে। বিষাক্ত দেশি মদ পানে প্রাণ হারিয়েছেন দুই যুবক। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন আরও অন্তত চারজন। একে একে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই, এলাকায় দেখা দিয়েছে আতঙ্ক, ক্ষোভ ও চাপা উত্তেজনা।
নিহত দুই যুবকের পরিবার একদিকে শোকে বিহ্বল, অন্যদিকে আতঙ্কিত অসুস্থরা গোপনে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন যেন কেউ কিছু জানতে না পারে।
নিহতরা হলেন থুকড়া গ্রামের জামিরুল ইসলাম সরদারের ছেলে রাসেল সরদার (২৮) ও রেজওয়ান গাজীর ছেলে রবিউল ইসলাম (৩২)।
দুজনই স্থানীয় গরু ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরিবারের দাবি তারা আগে মদপানে অভ্যস্ত ছিলেন না, তবে সম্প্রতি এলাকার একটি ‘নতুন উৎস’ থেকে মদ সংগ্রহ করেছিলেন।
গুরুতর অসুস্থরা হলেন, থুকড়া গ্রামের বারিক বিশ্বাসের ছেলে এনামুল হক (২৮), মজিদ বিশ্বাসের ছেলে মুকুল বিশ্বাস (২৭), জাহাতাপ বিশ্বাসের ছেলে বুলবুল (৫০) এবং রামকৃষ্ণপুর গ্রামের সতীন সরদারের ছেলে রবি সরদার (৩৫)।
বেঁচে যাওয়া ভুক্তভোগী বুলবুল (৫০) বলেন,“হাফপ্যান্ট পরা সময় থেকে নেশা করি। কিন্তু এ রকম বিষাক্ত মদ কখনও খাইনি। মনে হচ্ছে ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে। এখন শুধু তেঁতুল খেয়ে পড়ে আছি।”
বুলবুল জানান, তিনি আড়াইশো টাকা দিয়ে মদ কিনেছিলেন আঃ হালিম সরদারের কাছ থেকে। বিষাক্ততা বোঝার আগেই শরীরে শুরু হয় ঝাপসা দেখা, বমি ও প্রচণ্ড পেটব্যথা।
অসুস্থ এনামুল হক বিশ্বাস (২৮) জানান,“শুক্রবার রাতে আমরা তিন বন্ধু আমি, সবুজ গাজী ও মুকুল বিশ্বাস বাজারের পাশে বসে এক বোতল মদ পান করি। সকালে বমি, চোখে ঝাপসা দেখা শুরু হয়।” তারা অভিযোগ করেন, এ মদও এসেছে মাদক ব্যবসায়ী হালিম সরদারের কাছ থেকে।
স্থানীয়রা জানান, গত শনিবার বিকেলে রাসেল সরদার অসুস্থ হয়ে পড়লে খুলনা গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে রাত সাড়ে ১২টায় মারা যান। রোববার সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
অপরদিকে শুক্রবার রাতে থুকড়া গ্রামের রেজওয়ান গাজীর ছেলে রবিউল ইসলাম (৩২) অসুস্থ হলে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিউল মারা যায়।
নিহত রবিউল ইসলামের ভাবী পান্না বেগম জানান,“হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছিল হার্ট অ্যাটাক। পরে আর কিছু বুঝিনি। তাড়াতাড়ি দাফন করেছি।”
অনেকেই বলছেন, সামাজিক লজ্জা ও আইনি হয়রানির আশঙ্কায় পরিবারগুলো মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছে। এমনকি জীবিত ভুক্তভোগীরাও গোপনে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন, যেন কেউ না জানে তারা এই ‘মদপান চক্রে’ যুক্ত ছিলেন।
রঘুনাথপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই ইব্রাহিম বলেন,“ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”
ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা জানান,“আমরা বিষয়টি শুনেছি। এখনও নিহতদের পক্ষ থেকে কেউ অভিযোগ করেনি। পুলিশ তৎপর রয়েছে।”
কিন্তু স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলেছেন জানাজানি হওয়ার আগেই যদি কেউ অভিযুক্ত হয়, তবে মামলা নিতে এত দেরি কেন?
থুকড়া গ্রামে স্থানীয়ভাবে দীর্ঘদিন ধরে গোপনে মদ ও মাদক বিক্রি চলছে, এমন অভিযোগ নতুন নয়। স্থানীয়ভাবে হালিম সরদার ও তার ঘনিষ্ঠ একটি চক্রের নাম উঠে আসছে বারবার। তাদের বিরুদ্ধে এর আগেও অভিযোগ উঠলেও, তৎপর তদন্ত বা কঠোর আইনি ব্যবস্থা দেখা যায়নি।