সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে গড়ে ওঠা প্রেমের সম্পর্কের টানে চীনের সাংহাই থেকে বাংলাদেশে এসেছেন এক তরুণ। টিকটকে পরিচয়, ইউটার্চে কথোপকথন আর মাত্র চার মাসের প্রেমের সূত্রে তিনি বিয়ে করলেন মাদারীপুরের খেয়াঘাটের মাঝির মেয়ে সুমাইয়া আক্তারকে। এ ঘটনা জানাজানি হতেই স্থানীয়দের ভিড় লেগেছে নবদম্পতিকে এক নজর দেখার জন্য।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের উত্তর মহিষেরচর গ্রামের আড়িয়াল খাঁ নদীর খেয়াঘাটের মাঝি সাইদুর মুন্সি ও গৃহিণী ইয়াসমিন বেগমের বড় মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (১৯) মাদারীপুর সরকারি সুফিয়া মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। তিন বোনের মধ্যে সুমাইয়া বড়।
অন্যদিকে সাংহাই শহরের বাসিন্দা সিতিয়ান জিং (২৬) সেখানে একটি রেস্টুরেন্ট ব্যবসা পরিচালনা করেন। বাবা সি জিং নিং ও মা ওয়াং ইং এর দুই সন্তানের মধ্যে তিনি বড়।
সুমাইয়া প্রথমে সিতিয়ান জিং-এর টিকটক ভিডিও দেখে তার ভক্ত হন। পরে ইউটার্চ অ্যাপের মাধ্যমে তারা যোগাযোগ শুরু করেন। ভাষাগত বাধা কাটাতে সফটওয়্যারের অনুবাদের সাহায্যে কথা চলতে থাকে। এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
মাত্র চার মাসের সম্পর্কের পর গত ২৪ জুলাই বাংলাদেশে আসেন সিতিয়ান জিং। ঢাকার একটি হোটেলে একদিন অবস্থান করার পর ২৬ জুলাই সুমাইয়ার বাবা ও আত্মীয়দের সঙ্গে মাদারীপুরের মহিষেরচরে পৌঁছান। ২৭ জুলাই স্থানীয়ভাবে কোর্ট ম্যারেজের পর গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সামাজিকভাবে বিয়ের আয়োজন করা হয়।
সুমাইয়া বলেন, “টিকটক দেখে তার ভক্ত হয়েছিলাম। পরে কথা বলতে বলতে প্রেমে জড়িয়ে যাই। কিন্তু মাত্র চার মাসের প্রেমে সিতিয়ান চীন থেকে বাংলাদেশে আসবে, তা ভাবিনি। ও বলেছিল বাংলাদেশে আসছে, আমি বিশ্বাস করিনি। ইন্ডিয়ায় পৌঁছালে বিশ্বাস করি। ওর মা-বাবা সব জানেন এবং চেয়েছেন বিয়ের পর আমাকে চীনে নিয়ে যাক। ও এক মাস বাংলাদেশে থাকবে, এর মধ্যে আমার সব কাগজপত্র তৈরি হবে।”
সিতিয়ান জিং বলেন, “বাংলাদেশ আমার ভালো লেগেছে, তবে গরম অনেক বেশি। অনেক মানুষ আমাকে দেখতে আসে বলে ভয় লাগে। আমি ভালোবেসে বাংলাদেশে এসেছি, সুমাইয়াকে বিয়ে করেছি। কাগজপত্র তৈরি হলে তাকে চীনে নিয়ে যাব। আমার পরিবার বিষয়টি জানে এবং তারা সুমাইয়াকে চীনে নিয়ে যেতে বলেছেন।”
সুমাইয়ার বাবা সাইদুর মুন্সি বলেন, “আমার মেয়ের সঙ্গে সিতিয়ানের মোবাইলের মাধ্যমে প্রেম হয়। এরপর সে বাংলাদেশে এসে বিয়ে করেছে। ছেলে ভালো, অমায়িক এবং অহংকারবোধ নেই। আমরা খুব খুশি।”
প্রতিবেশী জুলেখা বেগম বলেন, “আমরা আগে কখনও চীনের মানুষ দেখিনি। সুমাইয়ার জন্য দেখতে পারলাম। ছেলেটি আমাদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলে, ভালো মানুষ মনে হচ্ছে। শুনেছি সুমাইয়াকেও চীনে নিয়ে যাবে। এমন ঘটনা আমাদের এলাকায় আগে ঘটেনি।”
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. রুবেল হাওলাদার জানান, “কোর্ট ম্যারেজের পর সামাজিকভাবে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। চীনের ওই ছেলের ব্যবসা আছে, কিছুদিনের মধ্যে সুমাইয়াকেও নিয়ে যাবে।”