/ শর্তের বেড়াজালে বেনাপোলে মাছ আমদানি বন্ধের পথে

শর্তের বেড়াজালে বেনাপোলে মাছ আমদানি বন্ধের পথে

যশোর ব্যুরো: কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নতুন শর্তারোপ করায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে মাছ আমদানি বন্ধের পথে। নির্ধারিত শুল্কের চেয়ে বেশি শুল্ক আদায় করায় মাছ আমদানিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন আমদানিকারকরা। এতে প্রতিদিন সরকারের বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায় কমছে।

বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে মাছ আমদানি হয়েছিল ৩৫ হাজার ৪৯৩ মেট্রিক টন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা কমে আমদানি হয়েছে ১৭ হাজার ১১৮ মেট্রিক টন। অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কম আমদানি হয়েছে ১৮ হাজার ৩৭৫ মেট্রিক টন।

গত রোববার সন্ধ্যায় বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে মাত্র দুই ট্রাক মাছ বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ৭ ট্রাক মাছ আসে বেনাপোল বন্দরে। শনিবার কোনো মাছ আমদানি হয়নি এ বন্দর দিয়ে। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন বন্দর দিয়ে ১৫-২০ ট্রাক মাছ আমদানি হয়ে থাকে। সেখানে শেষ তিনদিনে মাত্র ৯ ট্রাক মাছ আমদানি হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সামুদ্রিক মাছে কেজি প্রতি শুল্ক নির্ধারণ করেছে ৫০ সেন্ট মার্কিন ডলার (৩৮ টাকা)। কিন্তু বেনাপোল কাস্টমস হাউস কেজি প্রতি ৭৫ সেন্ট (৫৭ টাকা) শুল্ক আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে প্রতি কেজিতে ২৫ সেন্ট বা প্রায় ২০ টাকা অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। এতে প্রতি চালানে কয়েক লাখ টাকা বাড়তি গুণতে হচ্ছে তাদের। তবে রাজস্ব বোর্ডের নির্ধারণ করা মিঠা পানির মাছে কেজি প্রতি ১.৫০ সেন্ট (৮৮ টাকা) শুল্ক বহাল রয়েছে। এছাড়া প্রতি ট্রাকে ৮০ শতাংশ মিঠাপানির মাছ ও ২০ শতাংশ সামুদ্রিক মাছ থাকতে হবে বলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নতুন শর্ত দিয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, এই শর্তে ভারত থেকে মাছ আমদানি করলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে আমদানিকারকদের।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স জান্নাত এন্টারপ্রাইজের মালিক আল ফেরদৌস আলফা বলেন, অতিরিক্ত শুল্ক ও অযৌক্তিক শর্তের কারণে আমরা চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছি। আগের তুলনায় ট্রাকপ্রতি মাছ আমদানিতে প্রায় ২৫ শতাংশ খরচ বেড়েছে। ফলে লাভের পরিবর্তে লোকসানের ভাগই বেশি। বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জানান, মাছ আমদানির খাতে বেনাপোল বন্দর থেকে সরকারের প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে দুই কোটি টাকা রাজস্ব আসে। আগে গ্রোস ওজন ১৩৫ কেজি থেকে বরফ ও কার্টনের ওজন বাদ দিয়ে নিট ওজন ৬৬ কেজিতে শুল্কায়ন করা হতো। বর্তমানে গ্রোস ওজন ১০০ কেজি থেকে নীট ওজন ৫৫ কেজি হিসেবে শুল্ককর পরিশোধ করতে হচ্ছে। সে হিসেবে আমদানিকারকে অতিরিক্ত অর্থ গুণতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কাস্টমসের সঙ্গে কথা বলা হলেও কোনো প্রতিকার হয়নি। এতে আমদানি খরচ বাড়ায় বাধ্য হয়ে মাছ আমদানি বন্ধ রাখা ছাড়া উপায় নেই।

এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টমসের উপ-কমিশনার মীর্জা রাফেজা সুলতানা বলেন, মাছ আমদানিতে বাধা নেই, মিঠা পানির মাছ ৮০ শতাংশ ও সামুদ্রিক মাছ ২০ শতাংশ শুল্ক দিয়ে আমদানি করতে হবে এ তথ্যটি সঠিক নয়। মাছ ব্যবসায়ীরা মিঠা পানির মাছ ও সামুদ্রিক মাছ আমদানিতে যে ঘোষণা দেন, তার সঙ্গে আমদানি করা পণ্যের কোনো মিল থাকে না। যার ফলে গত সপ্তাহে আমদানিকৃত মাছের বেশ কয়েকটি চালানে অনিয়মের সত্যতা পাওয়ায় জরিমানা করা হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, মাঝে শুধু শনিবার ভারত থেকে মাছ আমদানি হয়নি। রোববার দুই ট্রাক আমদানি হয়েছে। মাছ আমদানি স্বাভাবিক আছে। বৈধভাবে মাছ আমদানিতে বেনাপোল কাস্টমস হাউজের সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে।