খুলনার মুজগুন্নী মহাসড়ক
এ এইচ হিমালয় : দীর্ঘ একদশকের ওপর ভাঙাচোরা ছিল খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) মুজগুন্নী মহাসড়ক। নগরীর সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকে নতুন রাস্তা পর্যন্ত সড়কটি স্থায়ীভাবে সংস্কারের জন্য মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয়রা। জনদাবির প্রেক্ষিতে ২০২১ সালে সড়ক মেরামতের কাজ শুরু হয় কেসিসি। কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে শেষ হয় ২০২৩ সালের মে মাসে। প্রায় ৫ দশমিক ৩০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়ক মেরামতে ব্যয় হয় প্রায় ২১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
ইতোপূর্বে সড়কে খানাখন্দ তৈরির প্রধান কারণ ছিল জলাবদ্ধতা। পানি জমে সাড়ে ২১ কোটি টাকার সড়ক যাতে নষ্ট না হয়, এজন্য সড়কের দুই পাশে প্রায় ৩৩ কোটি টাকা দিয়ে নতুন ড্রেন তৈরি করা হয়। কিন্তু বিপুল অর্থ ব্যয় ওই এলাকার মানুষের ভোগান্তি কমাতে পারেনি। নির্মাণের পরপরই সড়কে গর্ত তৈরি হয়। দুই বছর পর সেই গর্ত বড় হয়ে সড়কে যান চলাচল আগের মতো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাড়িয়েছে।
এদিকে সংকট বাড়িয়েছে নতুন ড্রেন। নকশা জটিলতার কারণে ৩৩ কোটি টাকার ড্রেন দিয়ে পানি অপসারণ হচ্ছে না। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে সড়কে আগের মতো বৃষ্টির পানি জমে যাচ্ছে। গত জুলাই মাসে ১৪ দিন সড়কটি পানিতে তলিয়ে ছিল। ফলে আগের মতোই বৃষ্টিতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয়রা। নষ্ট হচ্ছে সড়কও।
এ ব্যাপারে সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, অপরিকল্পিতভাবে নকশা প্রণয়ন নি¤œমানের কাজের কারণে সড়কটি দ্রæত নষ্ট হয়েছে, ড্রেনও কাজে আসছে না। রাষ্ট্রের প্রায় ৫৫ কোটি টাকা নষ্ট হওয়ার পেছনে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। না আনলে ভবিষ্যতেও অর্থ অপচয় হবে, মানুষের উপকারে আসবে না।
সম্প্রতি বৃষ্টির দিনে সড়কটি ঘুরে দেখা গেছে, কেডিএর উল্লাশ পার্কের সামনে সড়কটির একপাশ পুরোটাই পানিতে তলিয়ে আছে। পাশে নির্মাণ করা নতুন ড্রেন দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। এর আগে সকালের সামান্য বৃষ্টিতে সড়কটির বিভিন্ন অংশে পানি জমে থাকতে দেখা গেছে।
সড়কের বয়রা বাজার মোড় থেকে বিশেষায়িত হাসপাতাল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে গর্তের ভেতর প্লাস্টিক নির্দেশক দিয়েছেন স্থানীয়রা। কয়েকদিন আগে সেখানে ইটের ফেলা হয়েছে।
কেসিসির নথি থেকে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর সড়কটি সংস্কারের দরপত্র আহŸান করে কেসিসি। ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কোহিনুর এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এর মধ্যে সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকে পুলিশ লাইনস পর্যন্ত প্রথম ২ দশমিক ৭৫৮ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের ব্যয় ছিলো সাড়ে ৯ কোটি টাকা। পরবর্তী ব্যয় বাড়িয়ে ১০ কোটি ৯২ লাখ টাকা করা হয়। ২০২৩ সালের ৩০ মার্চ কাজ শেষ হয়।
নতুন রাস্তা পর্যন্ত দ্বিতীয় অংশের (২ দশমিক ৫৪৫ কিলোমিটার) কাজ যৌথভাবে পায় মোজাহার এন্টারপ্রাইজ ও শহিদ এন্টারপ্রাইজ। এই অংশের ব্যয় ছিল ১০ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এই অংশের কাজ শেষ হয় ২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিল। সড়কের ওই অংশেই নষ্ট হয়েছে বেশি।
এছাড়া ড্রেনটি ৩ ভাগে ভাগ করে ৩টি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ৩টি অংশের ব্যয় হয়েছিল ৩৩ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ড্রেনের কাজ শেষ হয়।
সরেজমিন সড়ক পরিদর্শনের সময় কথা হয় মুজগুন্নী আবাসিক এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, সড়কটি সংস্কারের সময় কাজের মান বজায় রাখতে প্রকৌশলীদের বার বার অনুরোধ করা হয়েছিলো। কিন্তু কাজ হয়নি।
তার সঙ্গে থাকা ইসমাঈল সিরাজী বলেন, আগেও বৃষ্টিতে পানিতে ডুবেছি, গর্তে কষ্ট পেয়েছি। এখনও পাচ্ছি। এতো টাকা খরচের পরও সবাই হতাশ।
স্থানীয়রা জানান, এই সড়ক দিয়ে ৫০০ শয্যার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ২৫০ শয্যার খুলনা বিশেষায়িত হাসপাতালসহ প্রায় ৫০টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে হয়। কেডিএর সোনাডাঙ্গা ও মুজগুন্নী-১ ও ২ আবাসিক এলাকা, বন বিভাগ, ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি, ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপারের কার্যালয়, কর কমিশনারের কার্যালয়, ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি, মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্স, খুলনা মেডিকেল কলেজ, সরকারি নার্সি ইনস্টিটিউট, পুলিশ লাইন স্কুল, নৌবাহিনী স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ প্রায় একডজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং দেড় ডজন সরকারি-বেসরকারি অফিস সড়কের পাশে অবস্থিত। সড়কটি নষ্ট হওয়ায় সবাই ক্ষুব্ধ।
এ ব্যাপারে কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান বলেন, সড়কের আরও উচু করার প্রয়োজন ছিল। সেটা না করায় কয়েকটি স্থানে বৃষ্টির পানি জমে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মুজগুন্নী মহাসড়ক ও এম এ বারী সড়ক মিলিয়ে নতুন একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। প্রকল্পটি দিয়ে সড়কটি দ্রæত মেরামত করা হবে।