/ দৌলতপুরে পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ চরমে, দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট

দৌলতপুরে পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ চরমে, দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট

বন্যার্তদের জন্য ২০ টন চাল বরাদ্দ

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদীতে গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত নতুন করে পানি না বাড়লেও দুর্ভোগ বেড়েছে পানিবন্দী অসহায় মানুষের। সেই সাথে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট।

পাবনা ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি সর্বশেষ ২ সেন্টিমিটার বেড়ে ১২ দশমিক ৯২ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হয়। গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত পানির উচ্চতা অপরিবর্তিত রয়েছে। বিপদসীমা ১৩ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার হওয়ায় বর্তমানে পানি বিপদসীমার চেয়ে শূন্য দশমিক ৮৮ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে।

উপজেলার চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৩৫টি গ্রমের ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। পুরো প্লাবিত হয়েছে চিলমারী ইউনিয়নের ৬টি গ্রাম। তলিয়ে গেছে চলাচলের রাস্তা ও ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। পানির সঙ্গে বেড়েছে পোকামাকড় ও সাপের উপদ্রব। গত বৃহস্পতিবার সকালে বিষাক্ত রাসেল ভাইপারের দংশনে নুর ইসলাম (৩৪) নামে এক যুবক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। মানব খাদ্যের সংকটের পাশাপাশি গবাদিপশুর খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। তলিয়ে গেছে চারণভূমি ও ফসলের মাঠ। পদ্মার তীরঘেঁষা ফিলিপনগর ও মরিচা ইউনিয়নের চরের আবাদি জমিও প্লাবিত হয়েছে। এখানকার নদীপাড়ের মানুষও রয়েছেন বন্যা ও নদী ভাঙন আতঙ্কে। চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পানি প্রবেশ করায় ১৭টি প্রাথমিক, ৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসার পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। সবমিলিয়ে বন্যা দুর্গত এলাকায় জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

এদিকে, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা ও দৌলতপুর উপজেলা প্রশাসন বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে পানিবন্দীদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত পানিবন্দী ও বন্যার্তদের জন্য ২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হলে তা বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ৩২০ প্যাকেট ত্রাণসামগ্রী ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সরকারি ত্রাণ সহায়তার বিষয়ে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডল জানান, আমি শুক্রবার ৫ টন চাল পেয়েছি। তা নৌকায় করে বন্যাকবলিত ও পানিবন্দীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। তবে নদীতে আজ নতুন করে পানি বাড়েনি বলে তিনি উল্লেখ করেন।

চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান বলেন, নতুন করে পানি না বাড়লেও মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। সুপেয় পানির সংকট, খাবার সংকট ও গবাদিপশু খাবার নিয়ে এখানকার মানুষ বেশি বিপাকে রয়েছে। আমি আমার ইউনিয়নের জন্য আজ (শুক্রবার) পর্যন্ত ১০ টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি যা পানিবন্দী অসহায়দের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে।

বন্যা দুর্গতদের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে পানিবন্দীদের মাঝে সরকারের বরাদ্দকৃত চাল পৌঁছে দিয়েছি যা পর্যায়ক্রমে বিতরণ হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ২০ টন চাল পেয়েছি। প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তা অব্যাহত থাকবে। এছাড়া ৩২০ প্যাকেট ত্রাণসামগ্রী ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।