নিজস্ব প্রতিনিধি, রূপসা(খুলনা): রূপসায় কৃষি ব্যাংকের টাকা লুটের ঘটনায় থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে মোঃ ইউনুস শেখ (৩৮) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। তার নিকট থেকে ১লাখ ৫২ হাজার টাকা ও লুটে কাজে ব্যবহারিত বিভিন্ন মালামাল উদ্বার করে। সে পেশায় গাড়ির গ্যারেজের গ্রাইন্ডিং মেশিন মিস্ত্রী। এ ঘটনায় ব্যাংকের ম্যানেজার থানায় মামলা দায়ের করেন, যার নং- মামলা নং- ১৭, তারিখ-১৬/০৮/২০২৫, ধারা-৩৮০/৪৫৪ পেনাল কোড।
পুলিশ জানায়, টাকা লুটের ঘটনার পর থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান এর নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মো: আশরাফুল আলম অভিযান চালিয়ে রবিবার ভোরে ইউনুসকে গ্রেফতার করে। ইউনুস উপজেলার বাগমারা এলাকার কৃষি ব্যাংক রূপসাঘাট শাখার উপরে পরিবার নিয়ে বসবাস করে এবং নিচেই তার ওয়াকশপ এর ব্যবসা করে এবং বাগমারা এলাকার মোঃ ইনছান শেখের ছেলে (ইসমাইলের ভাড়াটিয়া) হিসেবে বসবাস করে আসছে।
ইউনুস জানায়, উক্ত ব্যাংক হইতে তাকে ১০ লাখ টাকা লোন দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন কাগজপত্র জমা নেয় ব্যাংক কতৃপক্ষ। তাকে লোন না দিয়া ১৪ আগস্ট বৃহস্পতিবার ব্যাংক ম্যানেজার ও লোন অফিসার তাকে ব্যাংক হইতে অপমান করে বের করে দেয়। সেই রাগে ১৫ আগস্ট শুক্রবার ভোর বেলা ফজরের নামাজের পর ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মী আবুল কাশেম চলে গেলে সে ৪ তালা থেকে দেখে নিচে এসে তার গ্যারেজ থেকে গ্রাইন্ডিং মেশিন কাটিং ডিক্স সংযুক্ত করে দোতলায় ব্যাংকের মূল গেটে আসিয়া গ্রাইডিং মেশিন দ্বারা তালা কাটিয়া ভিতরে প্রবেশ করে। হাত ও পায়ের ছাপ না থাকে সে জন্য হাত ও পায়ে মোজা ব্যবহার করি(চুরি শেষে মোজাগুলি ছাদে পুড়িয়ে ফেলে) এবং মাথায় একটি সাদা রংয়ের টিস্যু কাপড়ের ব্যাগ দিয়ে মুখ আড়াল করার চেষ্টা করে বলে সে জানায়।
ইউনুস আরো জানায়, গ্রাইন্ডিং মেশিন দিয়ে ব্যাংকের দরজার বাইরের কলাপ্সিবল গেটের তালা এবং ব্যাংকের কাঠের দরজার তালা কাটিয়া ব্যাংকের ভিতরে প্রবেশ করে প্রথমে সিসি ক্যামেরা গুলি ব্যাংকের ভিতরে থাকা ছোট তোয়ালে রোমাল দিয়া ঢেকে রাখে। অতপর গ্রাইন্ডিং মেশিন দিয়ে ভল্ট রুমের তালা কেটে ভিতরে প্রবেশ করে ভল্টের ভিতরে সিসি ক্যামেরা ঢেকে রাখে। গ্রাইন্ডিং মেশিন দিয়ে ভল্টের কবজা গুলি এবং পিতলের হ্যান্ডেল কেটে ফেলে। এসময় প্লাস্টিক চটের ব্যাগে ৫০ টাকা নোটের অনেক গুলি বান্ডিল সহ ২০ টাকা, ১০ টাকা, ১০০ টাকা ও ২০০টাকা নোটের অনেক গুলি বান্ডিল ভরে নেই।
পরে জুম্মার নামাজ শেষে আবারও ব্যাংকে প্রবশে করে স্ক্রু ড্রাইভার এর সাহায্যে ছোট ড্রয়ারটি খুলে ৫০০ টাকা ও ১০০০ টাকার নোটের অনেক গুলি বাল্ডিল লুঙ্গিতে করে ব্যাংকের উপরে ০৩ তলায় বিমা কোম্পানীর পাশে খালি ফ্লাটের রুমে দরজার পিছনে রাখে। সেখান থেকে ৫০ টাকা নোটের বান্ডিল নিয়ে রূপসা বাজার এর বিভিন্ন দোকানদার সহ অন্যান্য পাওনাদার ও কিছু সমিতির কিস্তি/দেনা পরিশোধ করে। এছাড়া ইউনুসের মেয়ের মামলা নিষ্পত্তির জন্য টাকা লেনদেন করার উদ্দেশ্যে খুলনায় যায়।
পরবর্তীতে বিভিন্ন পাওনাদারের বিভিন্ন দেনা পরিশোধ করে। আটক ইউনুসের নিকট থাকা গ্যারেজের ড্রয়ারে ও কাছে রাখে। লুটকৃত টাকা থেকে তার বাড়ি ভাড়া বাবদ ১০ হাজার ও সংসার খরচ বাবদ ১০ হাজার তার স্ত্রীকে দেয়। ঐদিন রাত অনুমান ১০ টায় পুলিশসহ ব্যাংকের লোকজন ২য় তলায় কৃষি ব্যাংকে আসে। তা দেখে সে দ্রুত চলে যায়।
পুলিশ গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে টাকা পয়সা ও অন্যান্য মালামাল উদ্ধার করে বলে আটক ইউনুস স্বীকারোক্তী জানায়। খুলনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট্র অন্যন্যা রায় এর আদালতে ব্যাংকের তালাভেঙ্গে টাকা চুরি করার কথা স্বীকার করে জবানবন্দী প্রদান করেন।