/ গরীবের ফ্রি বুফে

গরীবের ফ্রি বুফে

তারকা হোটেলের মতো আয়োজনে নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য বিনামূল্যে বুফে খাবারের আয়োজন করছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ফুডব্যাংকিং খুলনা কল্যাণ সংস্থা

এ এইচ হিমালয়: ঝকঝকে সাভিং বোলে সাজানো রয়েছে ভাত, ডাল, সবজি ও ডিম। খাবার পরিবেশনের জন্য পেছনে দাড়িয়ে আছে উর্দি পরা তরুণ-তরুণী। দামি রেস্তোরার মতোই সব আয়োজন।

ব্যতিক্রম শুধু অতিথিরা। কেউ খালি খায়ে, কেউ মলিন পোশাকে খাবার নিচ্ছেন। এরপর রিকসা অথবা ফুটপাতে মাদুরে বসে খাবার খেয়ে চলে যাচ্ছেন। পোশাক ও মুখ মলিন হলেও খাবার খেয়ে তৃপ্তির আভা ছিল সবার চোখে-মুখে।

দৃশ্যটি খুলনা নগরীর শিববাড়ি মোড়ে। রিকসা চালকসহ নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষের জন্য বিনামূল্যে এমন বুফে খাবারের আয়োজন করেছিল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ফুড ব্যাংকিং খুলনা কল্যাণ সংস্থা। প্রতি রবিবার এই স্থানে অসহায় ও নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য বিনামূল্যে খাবারের আয়োজন করেন তারা।

সংগঠনটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির মেঘ জানান, অনেকে সিনেমা, নাটকে তারকা মানের হোটেলের বুফে খাবারের ছবি দেখেছেন। কিন্তু সেখানে প্রবেশের সামর্থ্য কারোরই নেই। নিম্ন আয়ের মানুষেরা যাতে দামী হোটেলের অনুভূতি বুঝতে পারেন, এজন্য তারকা মানের হোটেলের আদলে বুফের আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল রোববার ১৭০ জন মানুষ খাবার খেয়েছেন।

ফুডব্যাংকিং খুলনা কল্যাণ সংস্থা খুলনার পরিচিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। বিয়েসহ পারিবারিক অনুষ্ঠানে বেঁচে যাওয়া খাবার দুঃস্থদের মাঝে বিতরণের মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু করে সংগঠনটি। তাদের অস্থায়ী কার্যালয় নগরীর ফারাজীপাড়া এলাকার পারিজাত ভবনে (সাবেক স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলীর বাসভবন)। কার্যালয়ের ভেতরে তারা চালু করেছিলেন নাম ‘গরীবের মেহমান খানা’। পরে সেটি খুলনা রেলস্টেশন এলাকায় স্থানারিত হয়। প্রতি বুধবার সেখানে ১৬০ জন মানুষ খাবার পান। এরপর তারা শুরু করেন ‘তৃপ্তির আহার’। এই কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিদিন ৫০ জনের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়। গত সপ্তাহ থেকে তারা গরীবের বুফে কর্মসূচি শুরু করেছেন।

রবিবার দুপুর ২টায় শিববাড়ি মোড়ে গিয়ে দেখা গেছে, টাইগার গার্ডেন হোটেলের বিপরীতে ফুটপাতের ওপর খাবারের আয়োজন করা হচ্ছে। সড়ক ও ফুটপাতের ওই অংশটি আগে থেকেই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। সেখানে দামী হোটেলের সাভিং প্লেট সাজানো হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবীদের কয়েকজন নির্ধারিত পোশাক, হাতে গ্লোবস, মাথায় মাস্ক দিয়ে খাবার পরিবেশন করছেন। অন্যরা তাদের সহযোগিতা করছিলেন। পাশেই ছোট ব্যানারে লেখা ছিল ‘গরীবের ফ্রি বুফে’।

দুপুর আড়াইটার খাবার বিতরণ শুরু হয়। কয়েকজন লাইনে দাড়িয়ে খাবার নেওয়া শুরু করেন। কিছু সময়ের মধ্যে রিকসা চালকরা এসে লাইনে দাড়িয়ে যান। বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত এটি চলে।

রিকসা চালক ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘প্রথমে দেখে ভাবছিলাম বড় হোটেলের নষ্ট খাবার সবাইরে দেচ্ছে। পরে দেহি না; ভাত, ডিম, সবজি সব গরম-তাজা। ফ্রি হুইনে খাইলাম। খুব ভাল লাগতেছে’।

আরেক রিকসা চালক সুজাত আলী বলেন, ‘সবাই লাইনে দাড়াইয়া ভাত খাতিছে দেইএ (দেখে) দাড়াইছি। ফ্রি হুইনে আমিও নেলাম। রানদা ভালো হইছে। আল্লাহ পোলাগুলারে ভালো করুক’।
তারা জানান, প্রতিদিন দুপুরে খাবার খেতে ৫০/৬০ টাকা খরচ হয়। আয় কম হলে দুপুরে খান না। বিনামূল্যে খাবারে সবার জন্য উপকার হচ্ছে।

খাবার পরিবেশনের দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবী খুলনার নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী জারিন তাসনিম রোজা বলেন, ‘অন্য সময় খাবার দিলে কাড়াকাড়ি করতে দেখি। কিন্তু আমাদের পোশাক, অন্যান্য আয়োজন দেখে তারাও বেশ সতর্ক ও সুশৃংখল হয়ে খাবার নিচ্ছে। মনে হচ্ছে তারাও বড় কোনো হোটেলে খাবার খেতে এসেছে।’

সরকারি সুন্দরবন কলেজের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান বলেন, ‘আমরা নিজেরা বাজার করে, নিজেদের বাবুর্চী দিয়ে রান্না করিয়েছি। আয়োজনের মতো মানও ছিল সর্বোচ্চ।’

ফুডব্যাংকিং খুলনা কল্যাণ সংস্থার সভাপতি শাহরিয়ার কবির মেঘ বলেন, আমাদের অনেকদিন দিনের ইচ্ছা অসহায় মানুষগুলোকে দামী হোটেলের মতো খাওয়াবো। এজন্য ঢাকা থেকে বড় হোটেলের সাভিং প্লেট কিনে এনেছি। সেভাবে পরিবেশ তৈরি করেছি।তিনি বলেন, সবকিছু আমরা নিজেরা করার জন্য ১৭০ জনের আয়োজনে মাত্র ৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আমাদের স্বেচ্ছাসেবী ও দাতা সদস্যরাই এই অনুদান দিয়েছেন। অর্থ সংকটের কারণে এখন সপ্তাহে একদিন ‘গরীবের বুফে’ চলছে। ভবিষ্যতে প্রতিদিনই আমরা এমন আয়োজন করতে চাই।