/ রেলভূমির ভাড়া বেড়ে হঠাৎ তিনগুণ, বিপাকে খুলনার ৬ হাজার ব্যবসায়ী

রেলভূমির ভাড়া বেড়ে হঠাৎ তিনগুণ, বিপাকে খুলনার ৬ হাজার ব্যবসায়ী

৭ হাজার টাকার ছোট দোকানের ভাড়া একলাফে ২৪ হাজার

গুদাম, আড়ৎ ও বড় দোকানের ভাড়া বেড়েছে দেড় থেকে আড়াই লাখ পর্যন্ত

এ এইচ হিমালয়: মাত্র ৪ বছরের ব্যবধানে তিনগুণ বাড়ানো হয়েছে রেলভূমির ভাড়া। গত ১ জুলাই থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের ভূসম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নতুন নীতিমালা জারি করা হয়। এতে প্রতি বর্গফুট উন্মুক্ত স্থানের ভাড়া প্রতি ফুট ৭০ টাকা থেকে বেড়ে ২০০ টাকা করা হয়েছে। ভ্যাট ও আয়করসহ ভাড়া বেড়ে হয়েছে প্রতি ফুট ২৪০ টাকা।

অর্থ্যাৎ রেলের জমিতে ছোট যে দোকানের (১০০ বর্গ ফুট) ভাড়া ৭ হাজার টাকা ছিল, সেটি একলাফে বেড়ে ২৪ হাজার হয়েছে। তুলনামূলক বড় দোকান, গুদাম এবং আড়তের ভাড়া (এক হাজার বর্গ ফুট) আগে ছিল ৭০ হাজার টাকা। সেই ভাড়া বেড়ে এখন হয়েছে দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা। হঠাৎ ভাড়া বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছে রেলভূমি ব্যবহারকারী খুলনার ৬ হাজার ব্যবসায়ী।

সংশ্লিষ্টরা জানান, খুলনার বড় বাজার, কদমতলা, স্টেশন রোড, বড় বাজারের একাংশ, ডাকবাংলো মোড়, রেলওয়ে হাসপাতাল রোডসহ আশপাশ এলাকায় রেলের জমি ভাড়া নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তারা রেলের কাছ থেকে জমি ভাড়া নিয়ে সেখানে নিজ খরচে দোকান নির্মাণ করে ব্যবসা করছেন। পাশাপাশি নিয়মিত রেলওয়েকে ভাড়া প্রদান করছেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, গত কয়েকবছর ধরে ব্যবসায় মন্দাভাব চলছে। এর মধ্যে তিনগুণেরও বেশি ভাড়া বৃদ্ধি করা হয় বেশিরভাগই ভাড়া পরিশোধ করতে পারবে না। অনেকেই দোকান ছেড়ে দিতে হবে, অন্যথায় লাইসেন্স নবায়ন না করেই ‘অবৈধ দখলদার’ হিসেবে ব্যবসা করতে হবে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কিছুদিন আগেও রেল ভূমির প্রতি বর্গফুটের ভাড়া ছিল ২৫ টাকা। এরপর ভাড়া বাড়িয়ে ৫০ টাকা এবং ২০২১ সালে ৭০ টাকা করা হয়। মাত্র চার বছরের ব্যবধানে গত ১ জুলাই থেকে সেই ভাড়া বাড়িয়ে প্রতি বর্গফুট ২০০ টাকা করা হয়েছে। ভ্যাট ও আয়কর মিলিয়ে ভাড়া পড়ছে প্রতি ফুট ২৪০ টাকা। অথচ ভৈরব নদের তীরে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ব্যবসায়ীদের কাছে ভূমি ভাড়া দেয়। সে ভূমির ভাড়া প্রতি বর্গফুটে ৩ টাকা। জেলা প্রশাসনও ব্যবসায়ীদের কাছে জমি ইজারা বা ভাড়া দেন। তাদের ভাড়া প্রতি বর্গফুট ৩ টাকা ৮৮ পয়সা।

খুলনা কাঁচা পাকা মাল আড়ৎদার সমিতির সভাপতি আবদুর রব মাস্টার পূর্বাঞ্চলকে বলেন, রেলের বিপুল জমির মধ্যে অল্প জমিতে রেললাইন রয়েছে। বাকি রেল ভূমির কোথাও ডোবা-নালা, কোথাও বন-জঙ্গল, কোথাও আবর্জনার স্তুপ হয়েছিল। রেলের এসব জমি ব্যবসায়ীদের মাঝে বরাদ্দ দেয়ায় ব্যবসায়ীরা নিজ খরচে এ সব ডোবা-নালা ভরাট, ময়লার স্তুপ অপসারণ করে নিজ খরচে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। পতিত ভূমি ভরাট করে ব্যবহার উপযোগী করে সেখানে স্থাপনা নির্মাণের সম্পূর্ণ ব্যয় ব্যবসায়ীরাই বহন করেন। তারা নিজ অর্থ জমিতে বিনিয়োগ করে উল্টো দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়েকে ভাড়া প্রদান করে আসছে। পাশাপাশি সিটি করপোরেশনকে ট্রেড লাইসেন্স ফি, সরকারকে মোটা অংকের ভ্যাট ও আয়কর প্রদান করছেন। কোন ধরনের বিনিয়োগ ছাড়াই রেল যেভাবে ভাড়া বৃদ্ধি করছে-সেটা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক প্রকার জুলুম।

খুলনা স্টেশন রোড ব্যবসায়ী বহুমূখী সমবায় সমিতির সভাপতি আবু সাঈদ শেখ বলেন, খুলনার কদমতলা, বড়বাজার, স্টেশন রোড, ডাকবাংলো মোড়, রেলওয়ে হাসপাতাল রোডসহ আশপাশের রেলের জমি ভাড়া নিয়ে প্রায় ৫/৬ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে প্রায় ৩০ হাজার কর্মচারী। বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় লক্ষাধিক কোটি টাকা। প্রায় তিনগুণের বেশি ভাড়া দেওয়া অধিকাংশ ব্যবসায়ীদের পক্ষে সম্ভব না। এই ভাড়া দিতে বাধ্য হলে সব ব্যবসায়ীই লোকসানের মুখে পড়বেন। অনেকেই দোকানপাট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন। এতে হাজার হাজার মানুষ বেকার হবে। ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পুঁজি আটকে যাবে। সব মিলিয়ে খুলনার অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসবে।

রেলভূমি ব্যবহারকারী ও খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি শরীফ আতিয়ার রহমান বলেন, অপরিকল্পনা ও লুটপাটের কারণে এক সময় শিল্প নগরী খুলনা এখন মৃত নগরী। অধিকাংশ কল কারখানা বন্ধ হয়ে হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। এ সময় খুলনার বড়বাজার, স্টেশন রোড, কদমতলা, ডাকবাংলোসহ আশপাশ এলাকার ব্যবসায়ীরা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন। কিন্তু রেলওয়ের অযৌক্তিক ও খামখেয়ালীর কারণে এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধের উপক্রম হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ অযৌক্তিক ভাড়া প্রত্যাহার না করলে যে পরিমাণ ক্ষতি হবে তা কোনোভাবেই পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। এই ভাড়া প্রত্যাহার না করলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামবো।