/ সাফল্যের ঝলক ম্লান করে দিচ্ছে সংকট

সাফল্যের ঝলক ম্লান করে দিচ্ছে সংকট

মুহাম্মদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

এম এ হাওলাদার: দেশসেরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পাওয়া খুলনার বটিয়াঘাটার মুহাম্মদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখন টিকে থাকার লড়াই করছে। শিক্ষার মান ভালো হওয়ায় প্রতিদিনই বাড়ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। কিন্তু শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতের মারাত্মক বৈষম্য, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে বিদ্যালয়টির অর্জিত সাফল্য ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে শিক্ষার্থী এক হাজার ২৮৪ জন। অথচ শিক্ষক মাত্র ১৪ জন। সরকারি নিয়মে একজন শিক্ষকের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৩০ জন শিক্ষার্থী থাকার কথা। কিন্তু ওই স্কুলে গড়ে একজন শিক্ষককে সামলাতে হচ্ছে ৯১ জন শিক্ষার্থী। ফলে বারান্দা, স্টোররুম এমনকি পরিত্যক্ত ভবনেও চলছে ক্লাস ও পরীক্ষা। ঝড়-বৃষ্টিতে শিক্ষার্থীদের বই-খাতা ভিজে যায়, সৃষ্টি হয় নানা ভোগান্তি।

অভিভাবকরা বলেন, আশপাশের বহু কিন্ডারগার্টেন ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে শিক্ষার্থী সংকটে। পক্ষান্তরে মুহাম্মদনগর বিদ্যালয়ে জায়গা না থাকায় নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি সম্ভব হচ্ছে না।

অবকাঠামোগত দুর্বলতা: ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের নিজস্ব জমি মাত্র ১০ শতক। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আরও ৬ শতক জমি থাকলেও তা অপর্যাপ্ত। ২০০২ সালে নির্মিত ভবন এখনও ব্যবহৃত হচ্ছে, তবে জীর্ণ অবস্থায়। ২০২০ সালে নির্মিত দোতলা ভবনটিও নড়বড়ে।
বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ নেই, অভিভাবকদের বসার জায়গাও নেই। রাস্তার অপর প্রান্তে টিনশেড ঘরে গাদাগাদি করে বসতে হয়, যেখানে নেই ফ্যান বা টয়লেট সুবিধা। ছুটির সময় বিদ্যালয়ের সামনে তীব্র যানজট হয়, ফলে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে।

অভিভাবকদের উদ্বেগ: অভিভাবক বাসন্তী দাস, ফাতেমা মরিয়ম বেগম, আখি, মুক্তা খানম ও পেয়ারা বেগমসহ অনেকে বলেন, “শিক্ষার মান ভালো, তাই সন্তানদের এখানে ভর্তি করছি। কিন্তু আসা-যাওয়া, বসার জায়গা না থাকা এবং অবকাঠামোর অভাবে প্রতিদিন দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়।”

জরুরিভাবে যা প্রয়োজন : বিদ্যালয়ে প্রতিটি শ্রেণির চারটি শাখা চালু আছে। আগামী বছর তা ছয় শাখায় পৌঁছাতে পারে। অর্থাৎ একেক শ্রেণিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। শিক্ষক ও অভিভাবকরা বলছেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নতুন শিক্ষক নিয়োগ, স্থায়ী ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ ও জমি অধিগ্রহণ ছাড়া এ সেরা বিদ্যালয়ের সাফল্য দীর্ঘমেয়াদে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। এখনই সরকারের জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন।

বহুতল ভবন দরকার: বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মনিরুজ্জামান ময়না বলেন, “শিক্ষার্থীর চাপ সামলাতে এখনই একটি ১০ তলা ভবন দরকার। সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে, কিন্তু জমি না থাকায় বড় ভবন নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। জমি অধিগ্রহণে সরকারি সহায়তা ছাড়া এ সমস্যা দূর হবে না।”
তিনি আরও জানান, শিফট চালু করেও শিক্ষার্থীর চাপ সামলানো যাচ্ছে না। আগামী বছর শিক্ষার্থী আরও বাড়বে। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যালয়টিতে ভবন নির্মাণের জন্য সবুজ সংকেত দেওয়া হলেও জায়গার অভাবে সেটি করা যাচ্ছে না। এজন্য জমি অধিগ্রহণেরও প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।

সহকারী প্রধান শিক্ষক এমএম এমদাদ আলী বলেন, “স্কুল মাঠ না থাকায় শ্রেণিকক্ষেই পি.টি করাতে হয়। শিফট পরিবর্তনের সময় সড়ক পারাপারে বড় ঝুঁকি তৈরি হয়। এজন্য স্থায়ী ট্রাফিক পুলিশ ও একটি ওভারব্রিজ অত্যন্ত জরুরি।”