/ সাত মাসের মাথায় কুয়েটের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন ফাঁস

সাত মাসের মাথায় কুয়েটের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন ফাঁস

স্টাফ রিপোর্টার: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)- এর ১৮ ফেব্রুয়ারির ছাত্রদল-সাধারণ শিক্ষার্থী সংঘর্ষের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ফাঁস হয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে কুয়েটের কয়েকজন শিক্ষকের ই-মেইলে অপরিচিত একটি ঠিকানা থেকে ২৬ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন পাঠানো হয়।

প্রতিবেদনে ১৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনাপ্রবাহ, শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের সম্পৃক্ততা, আহতদের তালিকা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা এবং ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনের ঘটনার সারসংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়, ১৬ ফেব্রুয়ারির ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে কুয়েটে সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি শুরু হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। এর জেরে ১৮ ফেব্রুয়ারির বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমর্থিত শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ মিছিল বের করে। ক্যাম্পাসে ছাত্রদল সমর্থিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। পরে বহিরাগতরা অস্ত্রসহ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে পরিস্থিতি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে বহু শিক্ষার্থী আহত হয়। এতে কুয়েটের উপাচার্য (ভিসি) ও উপ-উপাচার্য (প্রোভিসি) ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা তাঁদের অবরুদ্ধ করে রাখে। এমনকি কুয়েট মেডিক্যাল সেন্টারেও ভিসিকে ঘিরে অপমান ও হুমকি দেওয়া হয়।

এসময় শিক্ষার্থীরা কুয়েট প্রশাসনের কাছে কয়েকটি দাবি তোলেন। যার মধ্যে ছিল- ছাত্রদল সমর্থিত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার, ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ, বহিরাগতদের প্রবেশ রোধে ব্যবস্থা, সহায়তাকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের শাস্তি এবং পুরো ক্যাম্পাস সিসিটিভির আওতায় আনা।

সংঘর্ষের পর আন্দোলন দীর্ঘায়িত হয়। ক্যাম্পাসে লাল কার্ড প্রদর্শন, গ্রাফিতি, প্রার্থনা কর্মসূচি থেকে শুরু করে একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে ভিসিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। অবশেষে ২৫ ফেব্রুয়ারির বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর গত ২২ সেপ্টেম্বর ৩৬ জন শিক্ষার্থীকে শাস্তি দেওয়া হয়। এর মধ্যে চারজনকে বহিষ্কার এবং ৩২ জনকে সতর্ক করা হয়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ও বহিরাগতদের সম্পৃক্ততার কারণে পরিস্থিতি দ্রæত অবনতির দিকে যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেরি ও প্রশাসনিক দুর্বলতা সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তদন্ত কমিটি ভবিষ্যতে ক্যাম্পাসকে রাজনীতিমুক্ত রাখার প্রস্তাব দিয়েছে। পাশাপাশি ছাত্রকল্যাণ দপ্তরকে শক্তিশালী করা, সিসিটিভি নজরদারি বাড়ানো এবং একটি জনসংযোগ বিভাগ গঠনের সুপারিশ করেছে।

উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষের পর ১৯ ফেব্রুয়ারির তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদের প্রশাসন যে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে সেই কমিটিই দীর্ঘদিন পর এই প্রতিবেদন দেয়। কুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এম.এম.এ. হাসেমকে সভাপতি ও ছাত্র কল্যাণ পরিষদের সহকারী পরিচালক শাহ মুহাম্মদ আজমত উল্লাহকে সদস্য সচিব করে গঠিত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ ও প্রফেসর ড. আবু জাকির মোর্শেদ। পরবর্তী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও দীর্ঘ সাত মাসের মাথায় এসে চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। যদিও এর পরে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্র্যণালয় থেকে পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটির কার্যক্রম এখনও চলমান রয়েছে। এজন্য যেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির কমিটি হয়েছে সেখানে কুয়েট গঠিত এমনকি যে ভিসিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে সেই ভিসি গঠিত কমিটির কার্যকরিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে কমিটির চারজনেরই স্বাক্ষর রয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদন ফাঁস হওয়া প্রসঙ্গে কুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. ইকরামুল হক বলেন, যেহেতু এক দপ্তর থেকে অন্য দপ্তরে প্রতিবেদন চালাচালি হয় সেহেতু যে কোনভাবেই এটি ফাঁস হয়ে গেছে। তবে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্বলতা নয় বলেও তিনি মনে করেন। তদন্ত প্রতিবেদন ফাঁস হওয়ায় বিশ্ববিদ্যলয়ের পরিস্থিতি অশান্ত হওয়ার কোন আশংকা নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।