এ সপ্তাহের বিশেষ প্রতিবেদন
এমএ হাওলাদার ও শিপন ভূইয়া: একসময় যে রুমা বেগম ছিলেন দারিদ্র্যের শিকার, আজ তিনি নিজের খামারের মালিক। ১৭ হাজার টাকার সহায়তা, নিজের পরিশ্রম আর দৃঢ় সংকল্প- এই তিনে বদলে গেছে এক নারীর জীবন, বদলে গেছে এক পরিবারের ভবিষ্যৎ।
খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত হুমাখালী গ্রাম। একসময় ওই গ্রামের রুমা বেগমের জীবন ছিল অন্ধকারে ঢাকা- দারিদ্র্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সুপেয় পানির সংকট আর রোগবালাই যেন তার সংসারের নিত্যসঙ্গী। স্বামী আব্দুল মজিদ সানা ছিলেন দিনমজুর, আর রুমা অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনোমতে চালাতেন চার সদস্যের পরিবার।
একটি ছেলে সন্তান, বৃদ্ধ শাশুড়ি, স্বামী আর সংসারের হাল- সব মিলিয়ে রুমার প্রতিদিন ছিল টানাপোড়েন ও অনিশ্চয়তায় ভরা। কিন্তু সেই জীবনেই একদিন এলো আশার আলো। রুমা যুক্ত হলেন স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা ‘জাগ্রত যুব সংঘ (জেজেএস)’- এর একটি গ্রুপে। সেখান থেকেই শুরু তার জীবনের নতুন অধ্যায়।
জেজেএস-এর ‘বাঁধাকপি’ গ্রুপের সদস্য হয়ে রুমা হাঁস-মুরগি ও মাছ চাষের বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন। এরপর ধাপে ধাপে তিনি পান মোট ১৭ হাজার টাকা সহায়তা। প্রথমে ৭ হাজার, পরে আরও ১০ হাজার টাকা। এই টাকায় তিনি প্রথমেই বাড়ির পুকুরটি গভীর করেন, পাকা ঘাট বানান এবং উঠোনের এক কোণে বানান হাঁস-মুরগির আলাদা ঘর। দেশি প্রজাতির পাশাপাশি কিছু চিনা হাঁসও তোলা হয়। শুরু হয় এক নতুন যাত্রা।
রুমার খামারে প্রথমে অল্প কিছু হাঁস-মুরগি ছিল। ডিম বিক্রি থেকে আসতে থাকে নিয়মিত আয়। নিজের হাতে তৈরি দেশীয় খাবারে তিনি হাঁস-মুরগিকে বড় করতে থাকেন। ভাত, ধান ও কুড়ো মিশিয়ে তৈরি করেন খাবার, বাইরের খাদ্যের ওপর নির্ভরশীলতা নেই বললেই চলে। রোগ হলে নিজেই যান পশু হাসপাতালে। প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তার পরামর্শ নেন। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে হাঁস-মুরগির সংখ্যা। মাত্র দেড় বছরের মধ্যে তা’ দাঁড়ায় ৯৩টিতে।
এখন পুকুরভরা মাছ আর উঠোনজুড়ে হাঁস-মুরগির কিচিরমিচিরে রুমার বাড়ি যেন এক ছোট্ট খামার। চারপাশে নেট দিয়ে ঘেরা, হাঁস-মুরগি নিরাপদে ঘুরে বেড়ায়।
রুমা আজ আর গৃহকর্মী নন, তিনি একজন আত্মনির্ভর নারী উদ্যোক্তা। হাঁস-মুরগি ও মাছ চাষ থেকে পাওয়া আয় দিয়ে সংসারে এনেছেন স্থিতি, নিজের জীবনেও মর্যাদা। তার দেখাদেখি আশপাশের অনেক নারী এখন উদ্যোক্তা হওয়ার পথে এগিয়ে আসছেন।
জেজেএস-এর ‘উপকূলীয় বাসিন্দাদের সহনশীলতা বৃদ্ধি ও অতিদরিদ্র পরিবারের আয় উন্নয়ন (ইআরসিসি-২)’ প্রকল্পের সমন্বয়কারী মামুন অর রশীদ বলেন, “আমরা তিনটি মূল বিষয়ে কাজ করছি- জলবায়ু-স্মার্ট কৃষিতে দক্ষতা বৃদ্ধি, মৌলিক জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধি।”
তিনি আরও জানান, এই প্রকল্পের মাধ্যমে উপকূলীয় কৃষক ও নারী উদ্যোক্তারা উন্নত কৃষি ও পশুপালন শিখছেন, পানির সঠিক ব্যবহার জানছেন এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সাথে যুক্ত হয়ে আর্থিক সহায়তা ও ঋণ পাচ্ছেন।