টিকা নিতে লাগবে অনলাইন রেজিষ্ট্রেশন
স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশে এখনো প্রতিরোধযোগ্য রোগ টাইফয়েড জ্বরে প্রতি বছর লাখো মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। সময়মতো চিকিৎসা না পেলে এই রোগ মারাত্মক জটিলতা ও মৃত্যুর কারণ হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
সাম্প্রতিক এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, প্রতি বছর বিশ্বে আনুমানিক ৯০ লাখ মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হন এবং প্রায় এক লাখ ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। দক্ষিণ এশিয়া ও সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চল এই রোগের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ ২০২১-এর তথ্যমতে, বাংলাদেশে এক বছরেই আনুমানিক ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৫১৮ জন টাইফয়েড রোগী শনাক্ত হয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ রোগে শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যে বলা হয়, ২০০০ সাল থেকে টাইফয়েড সংক্রমণের হার কিছুটা কমলেও ১৯৯০ সালের তুলনায় বিশ্বব্যাপী রোগটির প্রাদুর্ভাব এখনো উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে।
বাংলাদেশে সংক্রমণের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে অনিরাপদ পানি ও খাদ্য গ্রহণ, নিম্নমানের স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা। এখনো জনসংখ্যার একটি বড় অংশের মধ্যে মৌলিক স্বাস্থ্যচর্চা- যেমন সঠিকভাবে হাত ধোয়া, নিরাপদ পানি ব্যবহার ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য সংরক্ষণের অভ্যাসের অভাব বিদ্যমান।
টাইফয়েড প্রতিরোধে সরকার আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে বিশেষ টিকাদান কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের এ টিকা দেওয়া হবে। এ জন্য আগে থেকে অনলাইনে নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক।
খুলনা সিটি করপোরেশন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের যৌথ উদ্যোগে জেলায় ৬ লাখ ৩ হাজার ৩৯৫ জন শিশুকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলার ৯টি উপজেলায় ৪ লাখ ৩১ হাজার ২৫ জন এবং সিটিতে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩৭০ জন শিশুকে টিকা দেওয়া হবে।
বুধবার দুপুরে নগর স্বাস্থ্য ভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, টিকা ক্যাম্পেইনের আওতায় কেসিসি এলাকায় পাঁচশত ৬৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটি কেন্দ্রে টাইফয়েড টিকা প্রদান করা হবে। টাইফয়েড জ্বর থেকে শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে সরকারের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) আওতায় আগামী ১২ অক্টোবর থেকে দেশব্যাপী টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন-২০২৫ পালিত হবে। খুলনায় টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন (টিসিভি) এর আওতায় প্রথম দুই সপ্তাহ (১২-৩০ অক্টোবর) পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে এবং পরবর্তী দুই সপ্তাহ (১-১৩ নভেম্বর) কমিউনিটিতে নিয়মিত এবং স্থায়ী কেন্দ্রে টাইফয়েড টিকা প্রদান করা হবে। ক্যাম্পেইনে নয় মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী সকল শিশুকে একডোজ টিকা প্রদান করা হবে। এই টিকা পেতে জন্মনিবন্ধন সনদের তথ্য (১৭ ডিজিট) দিয়ে www.vaxepi.gov.bd ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি খুলনার বিভাগীয় কমিশনার ও সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোঃ ফিরোজ সরকার বলেন, টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন সফল করতে গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সকল শিশু যেন টিকা নিতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। জন্ম নিবন্ধন সদন না থাকলেও শিশু টিকাদান কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় টিকা নিতে পারবে। কোন শিশু অসুস্থ থাকলে টিকা নিতে না পারলেও পরবর্তীতে সুস্থ হলে টিকা দিতে পারবে। তিনি সকলের অবগতির জন্য জানান এই টিকা শতভাগ নিরাপদ, এটি কোন পরীক্ষামূলক টিকা নয়। সুস্থ-সবল-জাতি গঠনে টাইফয়েড টিকাদান শতভাগ সফল হবে বলে তিনি আশা করেন।
কেসিসির চারটি জোনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক এক লাখ ২৪ হাজার ৫৭৬ জন ও কমিউনিটি ভিত্তিক ৪৭ হাজার ৭৯৪ জন শিশুকে টিকা দেওয়া হবে বলেও এসময় জানানো হয়।
এসময় কেসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শরীফ আসিফ রহমান, খুলনা প্রেসক্লাবের আহবায়ক এনামুল হক, সদস্য সচিব রফিউল ইসলাম টুটুল, কেসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শরীফ শাম্মীউল ইসলাম, সিনিয়র সাংবাদিক শেখ দিদারুল আলমসহ প্রিন্ট ও ইলেক্টনিক মিডিয়ার কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টশনের মাধ্যমে টিকাদান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মেডিকেল অফিসার ডা. নাজমুর রহমান সজিব।
টিকা ক্যাম্পেইনে দুইশত ৫২ জন টিকাদানকারী, তিনশত ৫০জন স্বেচ্ছাসেবী, ৬২জন প্রথম সারির সুপারভাইজার, আটজন দ্বিতীয় সারির সুপারভাইজার, চারজন কোল্ড চেইন ম্যানেজমেন্ট এবং চারজন আইটি ম্যানেজমেন্ট দায়িত্ব পালন করবেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
এর আগে সকালে সিভিল সার্জন অফিসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জেলার ৯টি উপজেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক দুই লাখ ৮৯ হাজার ৪৪৩ জন এবং কমিউনিটি ভিত্তিক এক লাখ ৪১ হাজার শিশুকে এক ডোজ টাইফয়েড টিকা দেওয়া হবে। তবে বর্তমানে জেলার নিবন্ধনের হার ২৩ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, টাইফয়েড টিকা নিরাপদ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত। তবে শিশুর শারীরিক অসুস্থতা থাকলে বা খালি পেটে টিকা দেওয়া যাবে না। পরবর্তীতে সুস্থ হলে টিকা নেওয়া সম্ভব। জন্ম নিবন্ধনের পাশাপাশি কোনো শিশু টিকার বাইরে না থাকে, সে বিষয়েও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এসময় সভাপতির বক্তৃতা করেন, খুলনার সিভিল সার্জন ডা. মোছাঃ মাহফুজা খাতুন। স্বাগত বক্তৃতা করেন, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. মিজানুর রহমান এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, ডব্লিউএইচও-এর মেডিকেল অফিসার ডা. নাজমুর রহমান সজিব।
নিরাপদ পানি ও খাদ্য গ্রহণ, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং টিকাদান কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে টাইফয়েড জ্বরের সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে কমানো সম্ভব বলে এসময় জানানো হয়।