সোহেল মাহমুদ: খুলনার নারী উদ্যোক্তাদের স্বাবলম্বী করছে নারী উদ্যেক্তা মেলা। খুলনা অনলাইন সেলারস্ গ্রুপ আয়োজিত তিনদিন ব্যাপি নারী উদ্যোক্তা মেলার উদ্যোক্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায় মেলার মাধ্যমে তারা জীবনে সফল হয়েছেন এবং নতুন উদ্যোক্তারা সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। পণ্য উৎপাদন করে বাজারজাত করতে গিয়ে নতুন উদ্যোক্তারা যখন হতাশ হয়ে ব্যবসা ছেড়ে চাকুরীর কথা ভাবছেন, তখন তাদের পাশে দাড়িয়েছে ‘খুলনা অনলাইন সেলারস্ গ্রুপ’। উদ্যোক্তারা জানান, অনেক ভয়ে তারা মেলায় অংশ নিলেও এখন তারা আশাবাদী। গত বৃহস্পতিবার নগরীর হোটেল রয়্যাল ইন্টারন্যাশনাল এর তৃতীয় তলায় তিন দিন ব্যাপি নারী উদ্যোক্তা মেলার উদ্বোধন হয়।
মেলার আয়োজক লিন্ডা ফাতেমা তুজ জোহরা জানান, এবারের আয়োজনে ৫০টি স্টলে ৫০জন নারী উদ্যোক্তা তাদের পণ্য নিয়ে মেলায় অংশ নিয়েছেন। তিনি জানান, খুলনা অনলাইন সেলারস্ গ্রুপ তাদের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় বর্তমানে যার প্রায় তিন লাখ ফলোয়ার রয়েছেন। তিনি বলেন, অনলাইনে প্রদর্শন করলেও সরাসরি দেখে পণ্য কিনতে মানুষ বেশী আগ্রহী থাকে, পাশাপাশি সব ধরনের উদ্যোক্তদের এক ছাদের নীচে আনার উদ্দেশেই তাদের এই আয়োজন। তিনি বলেন, বর্তমানে খুলনার কয়েক হাজার নারী উদ্যোক্তা তাদের পণ্য বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তিনি নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে মেলায় নতুন উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা সাহস দিয়ে থাকেন। তিনি জানান তার অনুপ্রেরণায় খুলনার কয়েক হাজার নারী উদ্যোক্তা স্বাবলম্বী হয়েছেন, পাশাপাশি তারা নতুন উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করছেন।
মেলায় আসা শাহীন মাহমুদ বলেন, উদ্যোক্তা হিসেবে আমি একদম নতুন করে আমার যাত্রা শুরু করেছি আমার প্রতিষ্ঠান গার্ডেন চয়েজ, আমি গাছের চারা ও জিপসাম এর প্রোডাক্ট তৈরী করি। তিনি বলেন এই ধরনের মেলার মাধ্যমে কি হয়, আমরা যারা ঘরে থেকে কাজ করি, তারা আস্তে আস্তে আমাদের প্রোডাক্টগুলোকে নিয়ে আমাদের ক্রেতাদের সামনে আসতে পারি। যেখানে লোকরা জনতোইনা আমার আমার কাজের কোন মূল্যায়নই সেখান থেকে অনেক সহজেই এই মেলার মাধ্যমে আমি আমার ক্রেতাদের সাথে সামনা সামনি দেখা করতে পারছি। এটা অনেক বড় ব্যাপার, শুধু আমি না আমার পাশাপাশি আরো যারা এখানে আছেন তার সবাই ঘরে বসে ব্যবসা পরিচালনা করছে তারা একটা প্লাটফর্ম পেয়েছে নিজেদেকে তুলে ধরার। তিনি বলেন, নারী অগ্রযাত্রার জন্য এধরনের মেলা অনেক ভালো এবং অনে বড় সুযোগ নিয়ে আসে।
মেলায় আসা আনঞ্জুমস্ এর স্বত্ত্বাধিকারী শবনাম জাহিদা বলেন, আমরা যারা অন-লাইন উদ্যোক্তা তাদের জন্য মেলা একটি সময় উপযোগি ব্যবস্থা। আমাদের অনেকেরই সপ থাকেনা তাদের জন্য মেলার মাধ্যমে ক্রেতার সাথে সরাসরি যোগাযোগ আমরা মেলার মাধ্যমে পেয়ে থাকি এবং পরিচিতিটা বাড়ে, পাশাপাশি ক্রেতার চাহিদা আমরা জানতে পারি। সবকিছু মিলে মেলাটা সবার জন্য একটি উপকারি দিক। তিনি জানান মেলার তিন দিনে তিনি পঞ্চাশ হাজার টাকার বেশী বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন যারা আয়োজক রয়েছেন তাদের আয়োজন অনেক সুন্দর হলেও স্টল ভাড়াটা নতুনদের জন্য একটু বেশী, ভাড়াটা একটু কম হলে আরো বেশী উদ্যোক্তা তৈরী হবে।
নতুন উদ্যোক্তা বিবিএর ছাত্রী তাওসী জান্নাত বলেন, গত চার মাস ধরে তিনি বিভিন্ন নকশার মোম তৈরী করছেন এবং মেলার আয়োজক লিন্ডা ফাতেমা তুজ জোহরার অনুপ্রেরণায় তিনি মেলায় অংশ নেন এটি তার দ্বিতীয় মেলা। নিনি বলেন, মেলায় ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন। তার পণ্যের প্রতি মানুষের আগ্রহের কারনে তিনি এটিকে আরো এগিয়ে নিতে চান।
মেলায় অংশ নেওয়া নায়লা রহমান বলেন, লিন্ডা ফাতেমা তুজ জোহরা আপুর এবারের আয়োজনে বিক্রি ভালো হয়েছে। বলেন আমি মেলায় দুদিন অংশ নিয়েছি। তবে দীর্ঘদিন পর হোটেল রয়্যাল ইন্টারন্যাশনাল আবার নতুন রূপে চালু হওয়ায় মানুষের উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও ভালোই সাড়া পড়েছে। তিনি বলেন, মেলার প্লাটফর্মটা উদ্যোক্তাদের সাথে ক্রেতাদের একটা সম্পর্ক তৈরী করে, যা তাদের ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
মেলায় আসা ‘ইফতিস কিচেন’ এর স্বত্ত্বাধিকারী জান্নাতুল ফেরদৌস ইফতি বলেন, এটি আমার দ্বিতীয় মেলা, অনেক ভালো সাড়া পেয়েছি। তিনি বলেন, হোম মেড ফুডের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। এবং যে কোন নারী খুব কম পঁজি নিয়ে বাড়িতে বসেই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। তিনি বলেন, মেলায় স্টল ভাড়াটা হোম মেড ফুড ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক বেশী হয়ে যায়। কারন খাবারের দাম অন্যন্য পণ্যের চেয়ে অনেক কম, সেক্ষেত্রে অর্ধেক লাভ করলেও টিকে টাকা কঠিন।
নারী উদ্যাক্তা সুলতানা জাহান বলেন, গাছের প্রতি ভালোবাসা থেকে আমি কিছু গাছ ও হ্যঙ্গার নিয়ে এসছি পাশাপাশি আমার কিছু মেয়েদের পোষাক ও রয়েছে। মেলায় আসলে বিক্রি অনেক ভালো হয়। এবারের মেলাতে আমার বিক্রি ভালো হয়েছে।
মেলার আয়োজক লিন্ডা ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, আজ মেলা শেষ হলো। আমার ৫০ উদ্যোক্তা সবাই খুশী। বিক্রিও ভালো হয়েছে। তিনি বলেন, আমার উদ্যোক্তাদের জন্য আমি খুচরা টাকা, পজ মেশিনসহ সব ধরনের সুবিধা আমি দিতে চেষ্টা করেছি এবং শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ভাবে মেলা শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, এবারের মেলায় নতুন কয়েকটি পণ্য মেলায় যুক্ত হয়েছে এবং জনপ্রিয়তা পেয়েছে, যা থেকে নতুন উদ্যোক্তার অনুপ্রাণিত হয়েছে।
মেলা বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারি পৃষ্টপোষকতায় যদি আয়োজকদের স্বল্পমূল্যে মেলার উপযোগি জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয় তাহলে এখানকার নারী উদ্যোক্তরা এগিয়ে যাবে। তাদের পণ্য পৌছে যাবে দেশ বিদেশের বাজারে।