আমির হোসেন আমু, মোংলা(বাগেরহাট): দেশী-বিদেশী পণ্যবাহী জাহাজের আগমন ও আমদানী-রপ্তানীতে গতি ফিরেছে মোংলা সমুদ্র বন্দরের। একই সঙ্গে বেড়েছে কার্গো হ্যান্ডলিং, রাজস্ব আয় ও নীট মুনাফা। এ ছাড়া বন্দরের আধুনিকায়নে প্রতিবেশী দেশসমূহে ট্রানজিট পণ্য মোংলা বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানির সুদূরপ্রসারী সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
মোংলা সমুদ্র বন্দরের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও জয়ন্তী উৎসব অনুষ্ঠানে সোমবার এ তথ্য জানান কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান। তিনি আরও বলেন,বিগত অর্থবছরে(২০২৪-২৫) এ বন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৮৮ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন থাকলেও অর্থবছর শেষে বন্দরে ১ কোটি ৪ লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার পাশাপাশি ১৫ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন বেশি কার্গো হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। এ ছাড়া কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার টিইইউজ থাকলেও ১ হাজার ৪শ৫৬ টিইইউজ বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়। অপর দিকে বছর শেষে বন্দরে ৩৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা রাজস্ব হয়েছে। বন্দরের নীট মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা ২০ কোটি ৪৬ লাখ ২০ হাজার টাকা টার্গেট থাকলেও ৬২ কোটি ১০ লাখ টাকা নীট মুনাফা অর্জিত হয়।
তিনি আরও জানান, চলতি অর্থ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে জাহাজ এসেছে ৩৫৬ টি, কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ১৩ হাজার ৮শ’ ৫৪ টিইউজ, রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানি হয়েছে ৪ হাজার ১শ’৩৯ টি, পন্য আমদানি-রপ্তানি ৪৪ লাখ টন। এছাড়া আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহের ফলে প্রথমবারের মতো প্রতি ঘন্টায় ২৪ টিরও বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হচ্ছে। বন্দর জেটির সম্মুখে নিয়মিত ড্রেজিং নাব্যতা ঠিক থাকায় ৫ টি জেটিতে একই জাহাজে পণ্য হ্যান্ডলিং করা যাচ্ছে। এতে প্রতিবেশী দেশসমূহে ট্রানজিট পণ্য মোংলা বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানির সুদূরপ্রসারী সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
অপর দিকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রাণপ্রবাহ এ বন্দরটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বর্তমানে খাদ্যশস্য, সিমেন্ট ক্লিংকার, সার, মোটর গাড়ী, মেশিনারিজ, চাল, গম, কয়লা, তেল, পাথর, ভুট্টা, তেলবীজ, এলপিজি গ্যাস আমদানি এবং সাদামাছ, চিংড়ি, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, হিমায়িত খাদ্য, কাকড়া, ক্লে, টাইলস, রেশমী কাপড় ও জেনারেল কার্গো রপ্তানির মাধ্যমে দেশের চলমান অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছে। মোংলা বন্দর ব্যবহার করে স্থল, নৌ এবং রেলপথের মাধ্যমে রাজশাহী, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের পণ্য পরিবহন আরও সহজ এবং দ্রুত হচ্ছে। মোংলা বন্দরকে আরো আধুনিক ও বিশ্বমানের করে গড়ে তোলার জন্য বেশ কিছু প্রকল্প চলামান রয়েছে ও কিছু প্রকল্প ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য হাতে নেয়া হয়েছে বলেও জানান চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান।
১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের যাত্রা শুরু হয়। বন্দরের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীও জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে উচ্ছ্বাসপূর্ণ লগ্ন অনুযায়ী রাত ১২ টা ১ মিনিটে পশুর চ্যানেলে অবস্থানরত দেশী, বিদেশী সকল জাহাজে এক মিনিট বিরতিহীন হুইসেল বাজানো হয়। পরে সকাল ১১ টায় কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতিতে বন্দরের সদর দপ্তর হতে বন্দরের জেটি ফটক পর্যন্ত র্যালি বের হয় এবং কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান বেলুন ও কবুতর উড়িযে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন। পরে বন্দর জেটির অভ্যন্তরে ৭৫তম বন্দর প্লাটিনাম জয়ন্তী উৎসব অনুষ্টানে কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর মোঃ শফিকুল ইসলাম সরকার, সদস্য (অর্থ) ও পরিচালক (প্রশাসন) (অ:দা:) কাজী আবেদ হোসেন (যুগ্মসচিব), সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) ড. এ. কে. এম. আনিসুর রহমান (যুগ্মসচিব), পরিচালক (বোর্ড) কালাচাঁদ সিংহ (যুগ্মসচিব), ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, হারবার মাস্টার, কর্নেল মো: ফিরোজ ওয়াহিদ, বিভাগীয় প্রধানসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বন্দর ব্যবহারকারী উপস্থিত ছিলেন।
এ সমুদ্র বন্দরের কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ বন্দরে ১৩ জন কর্মকরতা-কর্মচারীকে এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ ৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী হিসেবে সর্বোচ্চ জাহাজ কয়লা, মাসুল প্রদান, সার, সাধারন পণ্য, গ্যাস,কন্টেইনারবাহী জাহাজ আনয়নকারী, গাড়ির জাহাজ, মালামাল হ্যান্ডলিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ২৯ টি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। বিদায় সংবর্ধনা দেয়া হয় ৫৬ জন অবসর প্রাপ্ত জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে। এ অনুষ্ঠানে মোংলা সমুদ্র বন্দরকে বিশ্বমানের নিরাপদ ও আধুনিক বন্দর ব্যবস্থাপনা গৃহীত নানা প্রকল্প তুলে ধরা হয়।