সংবাদ আপডেট

গাজী মনিরুজ্জামান ঃ চলমান তীব্র তাপদাহ ও বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বয়স্কদের চেয়ে শিশুরা বেশী ডায়ারিয়া, নিউমোনিয়া, চোখ ওঠা, পানিশূন্যতা, চিকেনপক্স, জন্ডিস, হিট্স্টোক, সর্দি, জ¦রসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আর আক্রান্ত এসকল ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে মা-বাবারা চিকিৎসা নিতে ভিড় করছেন শিল্প ও বন্দর নগরী খুলনার রতন সেন সরণীতে অবস্থিত খুলনা শিশু হাসপাতালে।
হঠাৎ করে অতিরিক্ত রোগীর আগমনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা দিতে যেমন হিমসিম খাচ্ছেন। তেমনি দূর-দূরান্ত থেকে আসা অভিভাবকরা বেডের অভাবে আদরের সোনামনিকে ভর্তি করাতে না পেরে হাহাকার করছেন।
অভিভাবকরা জানান, খুলনা শিশু হাসপাতালে কম খরচে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শসহ ভালো চিকিৎসাসেবা পাওয়া য়ায়। তাই অনেক অভিভাবক তাদের শিশুদের অন্য হাসপাতালে সাময়িক ভর্তি করে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং খুলনা শিশু হাসপাতালে বেড ফাঁকা হওয়ার ব্যাপারে খোঁজ খবর রাখছেন। বেড ফাঁকা হলেই শিশুকে এখানে নিয়ে আসছেন।
হাসপাতালের অফিস সূত্রে জানা যায়, গতকাল ২১ এপ্রিল, রবিবার বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বহিঃবিভাগে ও আন্তঃবিভাগে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন ছিল ২৫৯ জন শিশু রোগী। এছাড়া চলতি এপ্রিল মাসের ০১ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত মোট ৮ হাজার ৭০৬ জন শিশু বহির্বিভাগ ও আন্তবিভাগে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। মোট ভর্তি শিশুর রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ১৯ জন। এর মধ্যে ডায়ারিয়া আক্রান্ত ২৫৩ জন ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত ৮৪ জন।

মার্চ ’২৪ এ চিকিৎসা নিতে আসা শিশু রোগীর সংখ্যা মোট ১৭ হাজার ৩৯৪ জন। এরমধ্যে ভর্তি ছিল ১ হাজার ৩১৪ জন। আর ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত ছিল ২৯৭ জন ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত ছিল ২৩৪ জন।
চিকিৎসকরা বলছেন, গত কয়েকদিন ধরে অতিরিক্ত গরম ও বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে পানির চাহিদা বেড়ে গেছে। অনিরাপদ পানি ও খাবার গ্রহণের ফলে শিশুর সাথে সাথে মাও অনেক সময় ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
দুই বছর বয়সী শিশু রিফাতকে নিয়ে এসেছেন বাবা একরামুল কবীর। তিনি বলেন, ছেলের হঠাৎ করে পাতলা পায়খানা শুরু হয়। স্থানীয় ফার্মেসী থেকে ওষুধ খাইয়েছি। কিন্তু কোন পরিবর্তন না হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে শিশু হাসপাতালে এসেছি। এখন ছেলে তার আগের চেয়ে ভালো আছে বলে জানান। রিফাতের মত আরো অনেক শিশু ডায়ারিয়া আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের উপ-পরিচালক মোঃ আমিরুল আজাদ দৈনিক পূর্বাঞ্চলকে জানান, ২১ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সন্ধ্যা ৬টায় খুলনার বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ছিল ৭২ শতাংশ। এছাড়া গত ২০ এপ্রিল খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সন্ধ্যা ৬টায় বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমান ছিল ৬৭ শতাংশ।
মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ ব্যাংক সংলগ্ন রতন সেন সরনীতে ২৫০ বেডের খুলনা শিশু হাসপাতালটি ৭৬ শতক জমির উপর অবস্থিত। ১৯৮০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশদের রয়্যাল এয়ার ফোর্সের পরিত্যক্ত একটি টিনশেড ঘরে মহানগরীর কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উদ্যোগে বেসরকারিভাবে হাসপাতালটি যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে হাসপাতালটিতে ডাক্তার, কর্মকর্তা ও কর্মচারী, নার্স ও ওয়ার্ডবয় মিলে মোট ২৯৩ জন ৩ শিফ্টে শিশু রোগীদের সেবা দিচ্ছেন।

খুলনা শিশু হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ সৈয়দ ইমতিয়াজ আহমেদ দৈনিক পূর্বাঞ্চলকে জানান, দিনের বেলা গরমের তীব্রতা ও রাতের বেলায় হঠাৎ তাপ নেমে যাবার কারণে আবহাওয়ার পরিবর্তন সদ্যজাত শিশুসহ সকল শিশু খাপ খাওয়াতে পারছে না। ফলে তারা নিউমোনিয়া, ডায়ারিয়া, জন্ডিস, সর্দি-জ¦রসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
আরএমও ডাঃ সৈয়দ ইমতিয়াজ আরো বলেন, শিশুদের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ৬ মাসের কম বয়সী শিশুদের পর্যাপ্ত বুকের দুধ পান করাতে হবে। জ্বর হলে জ¦র ছেড়ে দিলে ঘাম শুকিয়ে যাবার আগে ঘাম মুছে দিতে হবে। ৬ মাসের চেয়ে বড় শিশুদের পর্যাপ্ত তরল পানিও, টাটকা ফল, বিশুদ্ধ পানি, ডাবের পানি ইত্যাদি খাওয়াতে হবে। জরুরী প্রয়োজন ছ্াড়া কোন অবস্থাতেই শিশুদের রোদে বের করা যাবে না। জন সমাগম এলাকায় শিশুদের নিয়ে বেড়ানো যাবে না। অসুস্থ শিশুর অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিতে হবে।

 

 

আলোচিত সংবাদ

বিজ্ঞাপন