আক্রান্তদের মধ্য থেকে
মৃত্যুহার ২.৩২ শতাংশ

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ বিগত এক মাসে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৭০জন। অর্থাৎ গড়ে দু’জনেরও বেশি রোগীর মৃত্যু হয় বিভাগে। একই সাথে বিগত একমাসে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তিন হাজার ১২জন। তবে আক্রান্তের চেয়ে এক মাসে সুস্থ্য হওয়ার সংখ্যা বেশি দেখা গেছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরের দৈনিক প্রতিবেদনে। মে মাসের এক তারিখ থেকে ৩১ তারিখ পর্যন্ত ৩১ দিনে তিন হাজার ১২জন আক্রান্ত হলেও ওই একই সময়ে সুস্থ্য হয়েছেন তিন হাজার ৫৩৩জন। প্রতিদবেদনে দেখা যায়, এক মাসে আক্রান্তের চেয়ে ৫২১জন বেশি সুস্থ্য হয়েছেন। অর্থাৎ আগে যারা আক্রান্ত ছিলেন তাদেরও অনেকে বিগত এক মাসের মধ্যে সুস্থ্য হয়েছেন। এক মাসের হিসাব অনুযায়ী আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার ২.৩২শতাংশ।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: রাশেদা সুলতানা বলেন, আক্রান্ত বেশি হলেও আতংক হওয়ার কিছু নেই। কেননা দেখা দরকার সুস্থ্যতার হার কেমন। যেহেতু খুলনায় আক্রান্তের পাশাপাশি সুস্থ্যতার হার অনেক ভালো সেহেতু ভয়ের কোন কারণ নেই। তাছাড়া ভারত থেকে আগতদের খুলনা বিভাগে যেভাবে কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হচ্ছে সেটি অন্যান্য স্থানের চেয়ে ভালো। তার পরেও আশংকার কথা হচ্ছে যারা এখনও চোরাই পথে ভারত থেকে সীমান্ত পেরিয়ে আসছে তাদের নিয়ে। এজন্য তিনি সীমান্ত পাহারা জোরদার করার আহবান জানান। খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুহারও অনেক কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত মাসের হিসাব অনুযায়ী বিভাগে মৃত্যুহার যেহেতু ২.৩২ শতাংশ সেহেতু করোনার ভয়ে আতংকিত না হয়ে বরং সকলকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত।
স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে দৈনিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, পয়লা মে যেখানে বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ২৭৯ জন সেখানে ৩১ মে এসে দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ২৯১ জনে। অর্থাৎ বিগত এক মাসে আক্রান্ত হয় তিন হাজার ১২জন। আর পয়লা মে সুস্থ্যতার সংখ্যা ছিল ২৭ হাজার ৮২৫জন এবং ৩১ মে এসে সুস্থ্যতার সংখ্যা দাঁড়ায় ৩১ হাজার ৫৮জন। অর্থাৎ এক মাসে সুস্থ্য হয় তিন হাজার ৫৩৩জন।
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত মাসের ৩১দিনের মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই বিভাগের কোন না কোন জেলায় মৃত্যু ছিল। তবে শুধুমাত্র মাগুরা জেলায় কোন মৃত্যু ছিল না। সর্বমোট আক্রান্ত ও মৃত্যুতে ১০ জেলার মধ্যে খুলনায় যেমন সবচেয়ে বেশি রয়েছে তেমনি গতমাসেও আক্রান্ত ও মৃত্যু বেশি ছিল। অর্থাৎ গত মাসে খুলনায় ২৫জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া চুয়াডাঙ্গায় ১০জন, বাগেরহাটে নয়জন, যশোরে আটজন, কুষ্টিয়ায় পাঁচজন, মেহেরপুরে চারজন এবং সাতক্ষীরা, নড়াইল ও ঝিনাইদহে তিনজন করে মৃত্যুবরণ করেছেন।
করোনা আক্রান্তের পর তাদেরকে সেবাদানের জন্য এখনও বিভাগের মধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আওতাধীন করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালটি সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে। যেটি গত বছর নূরনগরের ডায়াবেটিক হাসপাতালে থাকলেও এ বছর সেটির কার্যক্রম খুমেক হাসপাতালের আইসিইউ ভবনে চলছে। বিগত এক মাসে এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩৩ জনের মৃত্যু হলেও এর মধ্যে খুলনা বিভাগের ছিল ২৫জন। বাকী বাকী আটজন অন্যান্য বিভাগের রোগী ছিলেন। অর্থাৎ খুলনা করোনা হাসপাতালে খুলনা বিভাগ ছাড়াও পাশর্^বর্তী ঢাকা বিভাগের আওতাধীন গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর এবং বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলার রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন সেটি এ প্রতিবেদন থেকেও দেখা যায়।
করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুহার খুলনা বিভাগে অনেকটা সহনশীল পর্যায়ে রয়েছে উল্লেখ করে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও যেহেতু এটি সীমান্ত এলাকা সেহেতু জনসাধারণকে আরও সচেতন হতে হবে। কেননা ইতোমধ্যে বাংলাদেশের যাদের শরীরে ভারতীয় ধরণ পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে খুলনারও কয়েকজন রয়েছে। এজন্য চোরাই পথে যারা ভারত থেকে এসে কোয়ারেন্টাইনে থাকছেন না তাদের বিষয়টি নিয়েই সকলকে ভাবা উচিত। তবে যারা পাসপোর্টে ভারতে গিয়ে দেশে ফিরছেন তাদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার জন্য বিভাগের বিভিন্ন জেলায় যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সেটি সন্তোষজনক বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
অবশ্য করোনা পরিস্থিতির বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও করোনার টিকা নিয়ে শেষ পর্যায়ে এসে জটিলতা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে যারা করোনা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন এমন অন্তত: দুই লাখ লোক দ্বিতীয় ডোজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কেননা প্রায় সাড়ে ছয় লাখ লোক প্রথম ডোজ নিলেও দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন সাড়ে চার লাখের মতো। আর এরই মধ্যে টিকা শেষ হওয়ায় দ্বিতীয় ডোজ থেকে দুই লাখ লোকের বঞ্চিত হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে অবশ্য খুলনার বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক বলেন, যেহেতু প্রথম ডোজ নেয়ার তিন থেকে চার মাস পর দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার সুযোগ রয়েছে। সুতরাং ভয়ের কারণ নেই। আশা করা যাচ্ছে ওই সময়ের মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী আরও টিকা আসবে। তবে যারা টিকা কার্ড নিয়ে বিদেশে যেতে চাচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিতে পারে বলে আশংকা রয়েছে। অনেকেই প্রথম ডোজ নিয়ে দু’মাস পর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েই টিকা সনদ সংগ্রহ করে বিদেশে যাবেন এমন প্রত্যাশায় রয়েছেন। কিন্তু তাদের জন্য নির্দিষ্ট দিন আসার আগেই টিকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। খুলনা বিভাগের অনেক উপজেলায়ই ইতোমধ্যে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া বন্ধ হয়ে গেছে।
খুলনার সিভিল সার্জনের দপ্তর জানায়, বিগত কয়েকদিন ধরে জেলার ১৪টি কেন্দ্রের মধ্যে শুধুমাত্র নগরীর পাঁচটি কেন্দ্রে টিকা দেয়া হয়েছে। আবার নগরীতে যে পরিমান টিকা রয়েছে তা দিয়েও সব লোককে এসএমএস দেয়া হচ্ছে না। শুধুমাত্র কিছু লোককে বাছাই করে দ্বিতীয় ডোজের ম্যাসেজ দেয়া হচ্ছে। যে টিকা আছে তা দিয়ে হয়তো আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলতে পারে বলেও সূত্রটি জানায়। সে ক্ষেত্রে খুলনা মহানগরীসহ এ জেলায় ৫০ হাজার লোক দ্বিতীয় ডোজ থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
যদিও খুলনার সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, যেহেতু সরকারের পক্ষ থেকে ভারতীয় টিকা আনার জন্য এখনও চেষ্টা চলছে সেহেতু হতাশ হওয়ার কিছু নেই।