মোট বেড ৫৬২টি
আসছে আরও ১৮৭

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ খুলনায় বাড়লো আরও ১৩৭টি করোনার বেড। এ নিয়ে সর্বমোট বেডসংখ্যা দাঁড়ালো ৫৬২টিতে। নতুন করে বৃদ্ধি হওয়া ১৩৭টি বেডের মধ্যে ৫০টি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এবং ৮৭টি খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। সব মিলিয়ে খুলনা মহানগরীর পাঁচটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে এখন করোনার রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। খুমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ২শ’টি, জেনারেল হাসপাতালে ৮০টি, শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ৪৫টি, গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫০টি এবং সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮৭টি বেডে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: রবিউল হাসান বলেন, হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আগে থেকেই ১৫০টি বেডে রোগী ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। এর মধ্যে ১৩০ বেড হাসপাতালের আইসিইউ ভবনের নিচতলা ও দোতলা এবং ২০টি বেড রয়েছে হাসপাতালের সাবেক গ্যাষ্ট্রোলজি বিভাগে। গতকাল রোববার থেকে হাসপাতালের সাবেক অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে আরও ৫০টি বেড নিয়ে করোনা ইউনিটের পরিধি বৃদ্ধি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সেখানে বেডগুলো সংযোজন করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। একইসাথে প্রতিটি বেডের সাথে সংযোগ দেয়া হয়েছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইনও। যদিও গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে কোন রোগী ছিল না বলে দেখা যায়।
হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার গতকাল সকালে জানান, সেখানে সকাল পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ছিলেন ২০৬ জন রোগী। যার মধ্যে রেড জোনে ১৪১ জন, ইয়োলো জোনে ২৬ জন, আইসিইউতে ১৯ জন এবং এইচডিইউতে ২০জন চিকিৎসাধীন ছিলেন। অর্থাৎ হাসপাতালটি ২শ’ বেডে উন্নীত করা হলেও আরও ছয়জন বেশি সেখানে অবস্থান করছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, খুলনায় সাম্প্রতিক সময়ে করোনার প্রভাব প্রকট আকার ধারণ করায় বিভাগীয় প্রশাসন, বিভাগী স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর, জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পক্ষ থেকে নগরীর দু’টি বেসরকারি হাসপাতালকে করোনার ইউনিট করার প্রস্তাব দেয়া হয়। একটি নগরীর ময়লাপোতা মোড়ের সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অপরটি নগরীর বৈকালী মোড়ের আদ দ্বীন আকিজ মেডিকেল হাসপাতাল।
সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে যে, সেখানে শনিবার থেকেই করোনার ইউনিট চালু হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক প্রশাসন ডা: এম, এ আলী স্বাক্ষরিত এক পত্রে বলা হয়, বর্তমানে সেখানে কোভিড র‌্যাপিড এন্টিজেন টেষ্ট, ৪৮ বেডের হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সমৃদ্ধ ডেডিকেটেড কোভিড জেনারেল ওয়ার্ড, ২৫ বেডের ডেডিকেটেড কোভিড কেবিন ইউনিট, সাত বেডের ডেডিকেটেড কোভিড আইসিইউ ইউনিট এবং ছয় বেডের ডেডিকেটেড কোভিড এইচডিইউ ইউনিট চালু করা হয়েছে।
আবার হাসপাতালের ম্যানেজার প্রশাসন ও এইচআর আব্দুল হামিদ বলেন, করোনা ইউনিটে জেনারেল ওয়ার্ডে বেড রয়েছে ৪৯টি। সর্বমোট ৮৭টি বেডের মধ্যে করোনা সন্দেহের রোগীদের জন্য পৃথক বেড রয়েছে মোট ৩১টি। এর মধ্যে ২৪টি সাধারণ বেড ও সাতটি কেবিন। বাকী ৫৬টি বেড রেডজোন হিসেবে অর্থাৎ করোনা শনাক্ত হওয়া রোগীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। ওই ৫৬টির মধ্যে আবার সাতটি আইসিইউ ও ছয়টি এইচডিইউ ইউনিট রয়েছে।
যদিও খুলনার সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, সেখানে করোনার ইউনিট চালু হয়েছে কি না সেটি তার জানা নেই। কেননা করোনার ইউনিট চালু হলে অবশ্যই সিভিল সার্জন কার্যালয়কে অবহিত করতে হবে এবং প্রতিদিনের রিপোর্ট জানাতে হবে। যা কিছুই জানানো হয়নি। সুতরাং তারা যদি করোনা ইউনিট চালু করেও থাকে সেটি সিভিল সার্জন হিসেবে তার জানা নোই।
এ প্রসঙ্গে সিটি মেডিকেলের ম্যানেজার প্রশাসন ও এইচআর বলেন, গতকাল জেলা প্রশাসকসহ সর্বমোট ১৩টি জায়গায় চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। আজ সকাল থেকে যথারীতি সিভিল সার্জন অফিসে রিপোর্ট করা হবে। সুতরাং এ নিয়ে আর সমস্যা থাকার কথা নয়।
গতরাতে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, গতকাল রাত পর্যন্ত ৮৭ বেডের মধ্যে ৫৭জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে বিগত ২৪ ঘন্টায় ভর্তি হয়েছেন ১৮জন। ভর্তি ৫৭জনের মধ্যে সাতজন আইসিইউতে এবং চারজন এইচডিইউতে রয়েছেন। এছাড়া বিগত ২৪ ঘন্টায় ওই হাসপাতালে ৫৪টি এন্টিজেন পরীক্ষা হয়েছে। যার মধ্যে পজিটিভ হয় ২১জনের।
তবে সিভিল সার্জন অফিসকে অবহিত দেরিতে করা হলেও খুলনায় এ নিয়ে বর্তমানে ৫৬২ বেডে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। এর মধ্যে আইসিইউ সংখ্যা ৪৬টি ও এইচডিইউ ৩৭টি। ৪৬টি আইসিইউ’র মধ্যে খুলনা মেডিকেলে ২০টি, আবু নাসেরে ১০টি, গাজী মেডিকেলে নয়টি এবং নতুন করে চালু হওয়া সিটি মেডিকেলে সাতটি রয়েছে আর ৩৭টি এইচডিইউ’র মধ্যে খুলনা মেডিকেলে ২০টি, গাজী মেডিকেলে ১১টি এবং সিটি মেডিকেলে ছয়টি রয়েছে বলেও সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
আদ দ্বীন হাসপাতালে হচ্ছে ১৮৭ বেড ঃ অপরদিকে, নগরীর বৈকালী মোড়ের আদ দ্বীন আকিজ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ম্যানেজার মো: হোসেন আলী বলেন, খুলনার বিভাগীয় কমিশনার, বিভাগীয় পরিচালক(স্বাস্থ্য), জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনের পরামর্শক্রমে তারা ১৮৭টি বেড নিয়ে করোনা ইউনিট চালুর প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যে আটটি আইসিইউসহ ১৩৬ বেডের রোগীদের ফ্রি চিকিৎসা দেয়া হবে। বাকী ৫১টি বেডের রোগীদের কাছ থেকে নেয়া হবে অর্থ। সিভিল ও স্বাস্থ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত খরচের হিসাব চাওয়া হয়েছিল। সেটি দেয়া হয়েছে। এখন তাদের প্রস্তুতি রয়েছে। যখনই নির্দেশ দেয়া হবে তখন থেকেই করোনা ইউনিটে রোগী ভর্তি করে সেবা হবে বলেও তিনি জানান।
অবশ্য গতকালকের হিসাব অনুযায়ী খুলনা মহানগরীরত পাঁচটি হাসপাতালে বেডের তুলনায় ৯৭জন রোগী কম রয়েছে। অর্থাৎ পাঁচটি হাসপাতালে মোট বেডসংখ্যা ৫৬৩টি হলেও তার বিপরীতে রোগী ভর্তি আছেন ৪৬৫জন। অর্থাৎ একমাত্র খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোথাও অতিরিক্ত রোগী নেই। সেখানে গতকাল সকাল পর্যন্ত ২০০ বেডের বিপরীতে রোগী ছিলেন ২০৬জন, জেনারেল হাসপাতালে ৮০ বেডের বিপরীতে রোগী ছিলেন ৬৬জন, শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ৪৫ বেডের বিপরীতে রোগী ছিলেন ৪২জন, গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫০টি বেডের বিপরীতে রোগী ছিলেন ৯৪জন আর সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮৭ বেডের বিপরীতে রোগী ছিলেন ৫৭জন।