আরও একটি ভবন এবং রাস্তা
সম্প্রসারণ এখন সময়ের দাবি

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ চারতলা ভিত বিশিষ্ট এক তলা ভবন হবে। থাকবে তিনটি ক্লাসরুম ও একটি টয়লেট ব্লক। এমন একটি ভবন নির্মাণের জন্য দু’টি ধাপে টেন্ডার দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। এ দু’টি ধাপের একটি পাইলিং ও অপরটি ভবন নির্মাণ। বিগত ছয়মাস আগেই এ কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে আনুষ্ঠানিকতা। খুলনা কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের নতুন ঠিকানার কার্যক্রমের এমনই চিত্র।
খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা মডেল থানাধীন হাফিজ নগর এলাকার দুই একর সাত শতক খাস জমি বরাদ্দ নিয়েই এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে কলেজটির বর্তমান শিক্ষার্থী সংখ্যা সাড়ে আটশ’। এক তলায় মাত্র তিনটি ক্লাসরুমে তৃতীয় শ্রেণি থেকে এইচএসসি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া আদৌ সম্ভব নয়। এজন্য এ ভবনটিকে চারতলায় উন্নীত করার পাশাপাশি আরও একটি ভবন নির্মাণের জন্য প্রক্রিয়া হাতে নেয়া এবং প্রধান সড়ক থেকে কলেজ পর্যন্ত রাস্তা সম্প্রসারণ করা জরুরি বলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
কলেজের সাথে সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানায়, খুলনা কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের যাত্রা হয়েছিল ২০১৬ সালে। খুলনা জিলা স্কুলের পূর্ব পাশের ভবনেই চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। ইতোমধ্যে চারটি এইচএসসি পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে কলেজটি। যার মধ্যে তিনটিতে সরাসরি পরীক্ষা হয়েছে আর গত বছর হয় অটোপাস। চলতি বছর থেকে শুরু হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা। শুরু থেকে চার বছর তৃতীয়, ৬ষ্ঠ ও এইচএসসি ক্লাসে ভর্তি হলেও এ বছর থেকে তৃতীয় থেকে এইচএসসি পর্যন্ত সব ক্লাসেই ভর্তি করা হয়েছে। খুলনার জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় চলছে কলেজটি। নতুন ঠিকানায় কলেজটি স্থানান্তরের অংশ হিসেবে ২০১৬ সালে সোনাডাঙ্গার হাফিজ নগরে দুই একর সাত শতক জমি বরাদ্দ দেয়া হয় কলেজটির নামে। যেখানে রয়েছে দু’টি প্লট। একটি প্লটে বালু ভরাট করে একতলা বিশিষ্ট এ ভবনটির নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়।
ভবন নির্মাণ বিষয়ে খুলনার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী নাফিজ আক্তার বলেন, ৮০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দরপত্র মূল্য ধরে মূল ভবন নির্মাণের জন্য গত বছর(২০২০) ৪ আগষ্ট কার্যাদেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ভবনটি নির্মাণ করতে গিয়ে দেখা গেলো পাইলিংয়ের জন্য পৃথক টেন্ডার দিতে হবে। এজন্য আবারো পাইলিংয়ের টেন্ডার আহবান করে কার্যক্রম শুরু হয়। সেজন্য দরপত্র মূল্য ধরা হয় ৭৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। যার কার্যাদেশ দেয়া হয় গত ১৩ জানুয়ারি। সেই থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মদীনা মেটাল তাদের কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু আনুষ্ঠানিকতা হয়নি। অর্থাৎ খুলনা কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের নতুন ঠিকানায় ভবন নির্মাণের জন্য এ পর্যন্ত এক কোটি ৫৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ অর্থ দিয়ে পাইল ফাউন্ডেশন, তিনটি ক্লাসরুম, একটি টয়লেট ব্লক এবং একটি সিড়িঘর নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটির নাম ‘সেনেটারী এবং পানি সরবরাহ সুবিধাসহ চার তলা ভিত বিশিষ্ট এক তলা ভবন নির্মাণ কাজ’। যার বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, খুলনা।
আজ থেকে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরুর জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে উল্লেখ করে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল বাশার মোল্লা বলেন, আজ বিকেল তিনটায় নতুন ভবনের নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এবং গেষ্ট অব অনার হিসেবে খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলের ভার্চুয়ালি সংযুক্ত থাকার কথা রয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন। তিনি আরও বলেন, ভবন নির্মাণ হলেও এ ভবনটিকে চার তলায় উন্নীত করার পাশাপাশি আরও একটি নতুন ভবন নির্মাণ এবং রাস্তা সম্প্রসারণ না হলে নতুন ভবনে কলেজটি স্থানান্তর করা সম্ভব হবে না। তবে এক তলার নির্মাণ কাজের পাশাপাশি ভবনটির উর্ধমুখী সম্প্রসারণ এবং আরও একটি নতুন ভবন নির্মাণসহ অন্যান্য কার্যক্রম করা হবে বলেও তিনি জানান। এজন্য সার্বিকভাবে কাজটি তদারকি করছেন খুলনার সাবেক জেলা প্রশাসক এবং বর্তমানে ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান(সচিব) মোঃ মোস্তফা কামাল। যেহেতু কাজটি শুরু হয়েছে এবং স্থান নির্ধারণের সময় খুলনার তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তফা কামাল তদারকি করছেন সেহেতু এভাবে চলমান থাকলে ২০২৩ সালের শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন ঠিকানায় কলেজটির কার্যক্রম শুরু করা যাবে বলেও তিনি আশা করছেন।
কেসিসির সাবেক প্যানেল মেয়র ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ হাফিজুর রহমান হাফিজ বলেন, স্কুলটি নির্মাণ হলে এলাকার চিত্র পাল্টে যাবে। এই এলাকায় একটি ভালো মানের স্কুলের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজটির জন্য এখানে স্থান নির্বাচন করার ফলে সে দাবি বাস্তবায়ন হচ্ছে। তবে সময়ের প্রয়োজনে রাস্তা সম্প্রসারণসহ ময়ূর নদীতে একটি সেতু নির্মাণের মধ্যদিয়ে উন্নয়নকে আরও একধাপ এগিয়ে নেয়া সম্ভব বলেও তিনি মনে করেন। যেটি হলে স্কুলের সুফল পাবে পাশর্^বর্তী অনেক এলাকার মানুষ।