চলতি মাসেই শেষ
হয়ে যাচ্ছে মেয়াদ

স্টাফ রিপোর্টার ঃ খুলনার সিভিল সার্জনের আওতাধীন জেনারেল হাসপাতালসহ নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত আউটসোর্সিং কর্মচারীদের নিয়ে সংশ্লিষ্টদের রশি টানাটানি অব্যাহত রয়েছে। বিগত প্রায় চার বছর ধরে চলছে এমনটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে কর্মরত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ২১৪জন আউটসোর্সিং কর্মচারীর পাশাপাশি শুরু থেকে প্রায় দু’বছর কাজ করা ২১১ জন কর্মচারীর বিষয়টি এখনও ঝুলন্ত রয়েছে। দু’বছর কাজ করার পর দেড় বছরের মাথায় ২১১ জন আউটসোর্সিং কর্মচারীর বেতন-ভাতা দেয়া হলেও বাকী ছয়মাসের বেতন এখনও পায়নি ওই ২১১জন। আর মাঝপথে ২০২০ সালের পয়লা ডিসেম্বর থেকে অন্য একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২১৪জন আউটসোর্সিং কর্মচারী কাজ করে আসলেও ইতোমধ্যে একদফায় তাদের মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত করা হয়েছে। বিধি অনুযায়ী নতুন করে লোক নিয়োগের জন্য এখনই টেন্ডার প্রক্রিয়া হাতে নেয়া না হলে আগামী পয়লা এপ্রিল থেকে আবারও নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হবে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
এদিকে, সদ্য বিদায়ী সিভিল সার্জন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর গত ১০ ফেব্রুয়ারি ৪৭৮ নম্বর স্মারকের এক পত্রে বর্তমান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের আরও এক দফায় মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করেছেন। এ প্রসঙ্গে বর্তমান সিভিল সার্জন বলছেন টেন্ডার কমিটির সভা ডেকে রেজুলেশন না করে সিভিল সার্জন এককভাবে এভাবে মহাপরিচালক বরাবর পত্র লিখতে পারেন না। এটি বিধি বহির্ভুত বলেও তিনি দাবি করেন। পক্ষান্তরে বর্তমান সিভিল সার্জনও নতুন করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের জন্য কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় একদিকে যেমন স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য মাঠ পর্যায়ের লোক সংকটের আশংকা রয়েছে তেমনি আগের ও বর্তমান মিলিয়ে সর্বমোট ৪২৫ জন আউটসোর্সিং কর্মচারীর মধ্যেও হতাশা দেখা দিয়েছে।
সদ্য বিদায়ী সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ স্বাক্ষরিত গত ১০ ফেব্রুয়ারির পত্রে উল্লেখ করা হয়, খুলনা জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে ২০২০-২১ অর্থ বছরের জন্য আউটসোর্সিং কর্মচারীদের নিয়োগের জন্য ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। যার আলোকে ওই বছরের পয়লা ডিসেম্বর থেকে ২১৪জন আউটসোর্সিং কর্মচারী তাদের কার্যক্রম শুরু করেন। ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ গত বছর ৩০ জুন উত্তীর্ণ হলেও এক দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত করা হয়। ওই পত্রে বর্তমান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ আরও তিন মাসের জন্য অর্থাৎ আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির অনুরোধ জানানো হয়।
এ ব্যাপারে বর্তমানে গোপালগঞ্জে কর্মরত খুলনার তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, নতুন করে মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য পত্র দেয়া হয়নি বরং বর্তমান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ ৩০ জুন পর্যন্ত রয়েছে। শুধুমাত্র অর্থ ছাড় দেয়ার কথা বলা আছে ৩১০ মার্চ পর্যন্ত। সে জন্য পত্র দিয়ে স্পষ্ট করতে বলা হয়েছে যে, বর্তমান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের জন্য এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত অর্থ ছাড় দেয়া হবে না এখনই টেন্ডার আহবান করতে হবে সেটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য।
অবশ্য খুলনার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসাব রক্ষক মাহফুজুর রহমান বলেন, তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ ওই পত্রটি দিলেও এ সংক্রান্ত কোন মিটিং হয়নি এমনকি এজন্য কোন রেজুলেশনও তৈরি করা হয়নি।
বর্তমান সিভিল সার্জন ডা: সুজাত আহমেদ বলেন, মিটিং করে রেজুলেশন আকারে সুপারিশ না পাঠালে সেটি বিধি বহির্ভুত। এককভাবে সিভিল সার্জনের এমন পত্র লেখার কোন সুযোগ নেই বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য, খুলনা জেনারেল হাসপাতাল, খুলনা সিভিল সার্জনের কার্যালয়সহ নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে ২০১৯ সালের মে মাস থেকে ২১১ জন আউটসোর্সিং কর্মচারী প্রথমে কাজ শুরু করেন। তারা ছিলেন, ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু বেতন দেয়া হয় ওই বছরের জুন মাস পর্যন্ত। অর্থাৎ ২০২০ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসের বেতন না পেয়ে তারা চাকরীহারা হন। ডিসেম্বর থেকে নতুন ঠিকাদার কার্যক্রম শুরু করলে নতুন করে লোক নেয়া হয় ২১৪জন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত আগে কাজ করা ২১১ জন আউটসোর্সিং কর্মচারী বেতনের অপেক্ষায় আছেন। পাশাপাশি নতুন করে তাদেরকে কাজের সুযোগ দেয়া হবে এমনটিও প্রত্যাশা করছেন। ইতোমধ্যে অনেকে চাকরী হারিয়ে এবং বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সরকারি চাকরী হয়েছে এমনটি প্রচার হওয়ায় কেউ কেউ নিজ এলাকায়ও যেতে পারছেন না লজ্জায়। সব মিলিয়ে একদিকে পুরাতন ঠিকাদারের নিয়োগ দেয়া ২১১ জন আউটসোর্সিং কর্মচারীর যেমন দিন কাটছে অনিশ্চয়তায় তেমনি নতুন ঠিকাদারের আওতাধীন ২১৪জন আউটসোর্সিং কর্মচারীও সংকটে পড়তে পারেন এমনটি আশংকা করা হচ্ছে।
অপরদিকে, খুলনার বর্তমান সিভিল সার্জন ডা: সুজাত আহমেদ বলেন, বর্তমান ঠিকাদারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া হাতে নেয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, শীঘ্রই এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দিক নির্দেশনা পাওয়া যাবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনার আলোকে বিধি অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।