# সর্বোচ্চ সংখ্যা যেন কমছেই না

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ সর্বোচ্চ, সবচেয়ে বেশি, তার চেয়েও বেশি। এভাবেই প্রতিদিন গণমাধ্যমে লেখা হচ্ছে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা। এ যাবতকালের মধ্যে বিগত ২৪ ঘন্টায়ই সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে দেশে অর্থাৎ ১৬৪জন। আর সেই সাথে খুলনা বিভাগেও। গতকাল সকালে দেয়া বিভাগীয় প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় বিগত ২৪ ঘন্টায় বিভাগের ১০ জেলায় ৫১জনের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ বিগত পাঁচ দিনে এ বিভাগে মৃত্যু হয়েছে ১৯৫ জনের। সব মিলিয়ে যার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৬৫জনে। এছাড়া খুলনা বিভাগের মধ্যে খুলনা জেলায়ও বিগত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অর্থাৎ ১৩জন। এর আগের দিনের প্রতিবেদনে বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে নয়টিতেই মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখ করা হয় ১৫জন।
মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ছে করোনা শনাক্তের সংখ্যাও। খুলনার আরটি পিসিআর ল্যাবটি বন্ধ থাকলেও আগের ২৪ ঘন্টায় বিভাগের ১০ জেলায় এক হাজার ৪৭০জনের করোনা শনাক্ত হয়। গতকাল থেকে অবশ্য খুলনার ল্যাবটি সচল হওয়ায় আজ থেকে শনাক্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে এমন আশংকাও সংশ্লিষ্টদের। এ নিয়ে গতকাল সকাল পর্যন্ত বিভাগে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ৬২ হাজার ছাড়িয়েছে বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: রাশেদা সুলতানা উল্লেখ করেছেন। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী গতকাল সকাল পর্যন্ত বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬২ হাজার ৩৪জন।
তিনি বলেন, খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় চারটি ল্যাবে পিসিআর পরীক্ষা, ৫৯টি কেন্দ্রে এন্টিজেন পরীক্ষা আর ১১টি কেন্দ্রে জীন এক্সপার্ট পরীক্ষা হয়। কিন্তু এ পর্যন্ত কতটি পিসিআর, কতটি এন্টিজেন এবং কতটি জীন এক্সপার্ট পরীক্ষা হয়েছে সেটি তিনি আলাদা করে জানাতে পারেননি।
এ বিষয়ে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরের সহকারী পরিচালক(রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা: ফেরদৌসী আকতার বলেন, বিভাগের জেলাগুলো থেকে প্রতিদিন ২৪ ঘন্টার মোট পরীক্ষার ফলাফল তাদেরকে জানানো হয়। এজন্য এ পর্যন্ত কোন ধরনের পরীক্ষা কতটি হয়েছে সেটি তার জানা নেই।
করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ উল্লেখ করে খুলনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা: মো: আব্দুল আহাদ বলেন, বর্তমানে প্রায় মানুষই মৌসুমী জ¦রে আক্রান্ত হচ্ছে। যেটি করোনার অন্যতম লক্ষ্যণ। কিন্তু মানুষ অবহেলা করে বাসায় বসেই ওষুধ খেয়ে জ¦র-সর্দি-কাশি থেকে সুস্থ্য হওয়ার চেষ্টা করছেন। এজন্য যেমন তারা প্রথম দিকে চিকিৎসকদের স্মরনাপন্ন হচ্ছেন না, তেমনি এখনও গ্রামে-গঞ্জে এমনকি শহরেও অনেকের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা বিরাজ করছে যে, করোনা বা করোনার লক্ষ্যণ আছে এমনটি জানতে পারলে মানুষ তাকে একঘোরে করে ফেলতে পারে। এজন্য যতটা সম্ভব বিষয়টি ঢেকে রাখা হয়। কিন্তু যখন পরিস্থিতি প্রকট আকার ধারণ করে তখনই কেবল হাসপাতালে আসতে বাধ্য হয়। আর যখন হাসপাতালমুখি হয় তখন চিকিৎসায় ভালো হয় খুব কম। অথচ যদি আগেই হাসপাতালমুখি হওয়া যেতো তাহলে সুস্থতার হার বাড়তো।
পক্ষান্তরে রোগীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, হাসপাতালে আসলেও যেহেতু বেড পাওয়া যায় না সে কারণে তারা বাড়িতেই চিকিৎসায় সুস্থ্য হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু যখন অক্সিজেন লেবেল একেবারেই কমে আসে তখনই তারা হাসপাতালমুখি হন। অনেকে আবার এক হাসপাতালে স্থান না পেয়ে হাসপাতালে যাতায়াত করতে করতে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। যেহেতু খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিট ছাড়া খুলনার অন্য দু’টি সরকারি হাসপাতালে উপসর্গের রোগী ভর্তি করা হয় না সেহেতু ওই দু’টিতে ভর্তির জন্য অপেক্ষা করতে হয় নুমনা পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার আগ পর্যন্ত। উপসর্গ নিয়ে খুমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তির সুযোগ থাকলেও সেখানেও বেডের অতিরিক্ত রোগী আগে থেকে ভর্তি রয়েছেন। গতকাল সকালেও ওই হাসপাতালে ১৩০ বেডের বিপরীতে রোগী ছিল ১৮৭জন।
বেড় বাড়ল আরও ৪০টি ঃ খুলনার তিনটি সরকারি ও একটি বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়। ওই চারটি হাসপাতালে আগে ছিল ৩৬৫টি বেড। এর মধ্যে খুমেক হাসপাতালে ১৩০টি, জেনারেল হাসপাতালে ৭০টি, শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ৪৫টি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২০টি। কিন্তু গতকাল সোমবার থেকে গাজী মেডিকেলে আরও ৩০টি ও জেনারেল হাসপাতালে ১০টি বাড়িয়ে মোট খুলনায় মোট বেড সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০৫টিতে। কিন্তু গতকাল রাতে অন্য দু’টি সরকারি হাসপাতালের সব বেড পরিপূর্ণ থাকলেও খুমেক হাসপাতালে ছিল অতিরিক্ত রোগী ছিল। আর সকালে গাজী মেডিকেলে ১২০ বেডের বিপরীতে ১১৯টি রোগী থাকলেও বিকেলে জানানো হয় সেখানের করোনা ইউনিটকে মোট ১৫০ বেডে উন্নীত করা হয়েছে। এভাবে প্রতিনিয়ত রোগী বাড়ছে আর হাসপাতালগুলোও ক্রমান্বয়ে বেড সংখ্যা বাড়াচ্ছে।
২৪ ঘন্টায় ১২জনসহ মোট মৃত্যু ১৬ ঃ খুলনার সরকারি-বেসরকারি চারটি হাসপাতালে বিগত ২৪ ঘন্টায় সর্বমোট ১২জনের মৃত্যু হয়েছে বলে গতকাল সকালে হাসপাতালগুলো থেকে জানানো হয়।
খুমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, বিগত ২৪ ঘন্টায় সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়। এরা হলেন, যশোরের কেশবপুরের আ: জলিল খান(৫২), খুলনার পাইকগাছার আ: রউফ(৪৫), নগরীর সোনাডাঙ্গার হাবিবুর রহমান(৮০), রাফেজা(৫৮) ও সুভাষ(৮২)।
এছাড়া খুমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে রোববার দিবাগত রাত ১২টা পাঁচ মিনিট থেকে গতকাল রাত পৌনে ১১টা পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হয় বলে হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়। এরা হলেন, যশোর সদর থানাধীন পরিচিয়া এলাকার হাজেরা বেগম(৪৫), খুলনার চানমারী এলাকার মমতাজ বেগম(৫৫), নগরীর খালিশপুরের রহিমা পারভীন(৫৫) এবংবাগেরহাটের ফকিরহাটের মানসা বাজারের শুভ্রত পাল(৪৫)।
শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে রোগী ভর্তির প্রথম দিনেই একজনের মৃত্যু হয় বলে সেখানকার করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা: প্রকাশ চন্দ্র দেবনাথ জানিয়েছেন। ওই হাসপাতালে প্রথম মৃত্যুবরণকারীর নাম ওয়াহিদুজ্জামান(৬৬) এবং তিনি নগরীর নিরালার বাসিন্দা।
খুলনা জেনারেল হাসপাতালে বিগত ২৪ ঘন্টায় দু’জনের মৃত্যু হয় বলে সেখানকার মুখপাত্র ডা: কাজী আবু রাশেদ জানিয়েছেন। এরা হলেন, খুলনার বটিয়াঘাটার হায়দার(৭৫) ও নগরীর খানজাহান আলী থানাধীন যোগীপোল এলাকার মমতাজ(৬০)।
খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা: গাজী মিজানুর রহমান বলেন, বিগত ২৪ ঘন্টায় ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোট চারজনের মৃত্যু হয়। এরা হলেন, বাগেরহাটের ফকিরহাটের সরদার মোহাম্মদ আলী(৬৫), নগরীর টুটপাড়ার মো: আব্দুল্লাহ(৭৭), বয়রা সেন্ট্রাল রোডের মোশারফ হোসেন(৬৮) এবং বাগেরহাটের চিতলমারীর পুষ্প রানী বালা(৮১)।
খুমেক পিসিআর ল্যাব সচল ঃ চারদিন পর খুলনা মেডিকেল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাবে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো ১৮২টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে বলে খুমেক’র উপাধ্যক্ষ ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজ জানিয়েছেন। এর মধ্যে ৭৫জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্ত হওয়া ৭৫ জনের মধ্যে খুলনার ৫০জন, বাগেরহাটের ২৩জন, যশোরের একজন এবং ঝিনাইদহের একজন রয়েছেন বলেও তিনি জানান। এর আগে গত ৩০ জুন ল্যাবটিতে জীবানুর সংক্রমণ (Contaminated)হওয়ায় পরীক্ষা বন্ধ রেখে ল্যাবটি জীবানুমুক্ত(De-Contaminated) করা হয়। প্রথম দু’দিন অবশ্য খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের ল্যাব থেকে কিছু পরীক্ষা করা হলেও তৃতীয় দিনে সেখানেও ত্রুটি দেখা দেয়ার পর সর্বশেষ রোববার থেকে খুমেক’র ল্যাবে পরীক্ষামূলক নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়।