মালামাল কেনার উদ্যোগ ক্ষীণ,
চরম সংকটে পড়ার আশংকা

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ চাহিদার শেষ নেই। কিন্তু মালামাল কেনারও কোন উদ্যোগ নেই। অথচ শেষ হয়ে যাচ্ছে অর্থ বছর। জুন মাস শেষেই পরিচালক যাচ্ছেন অবসরে। এরপর কি হবে হাসপাতালের ? কিভাবে চলবে ? তার কোন ভাবনাই যেন নেই কারও মধ্যে। এ চিত্র খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি অর্থ বছরের শেষে এসেও যদি চাহিদা অনুযায়ী মালামাল না কেনা হয় তখন আগামী অর্থ বছরই শুধু নয়, এর ঘানি টানতে হবে পরবর্তী কয়েক বছর। কেননা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অথবা স্বাস্থ্য মন্ত্রণাণলয়ের অনুমোদন নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিটি হাসপাতালের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করা হয় তা’ একবার ফেরত গেলে পরবর্তী কয়েক বছর এজন্য বেগ পোহাতে হয়। যেমনটি গত অর্থ বছরে হয়েছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্ষেত্রে। ওই হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক চাহিদা অনুযায়ী মালামাল না কেনায় প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা ফেরত গেছে। এখন শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালেও যেটি হচ্ছে তাতে খুমেক হাসপাতালের চেয়ে দ্বিগুণ অর্থ ফেরত যেতে পারে এমনটিও আশংকা রয়েছে।
এদিকে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সংস্কারের জন্য বলা হলেও আইসিইউ’র ভেন্টিলেটরসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি সংস্কার না করায় শেষ পর্যন্ত ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ বা নিমিউ থেকে সম্প্রতি সংস্কার করা হয়েছে। এজন্য দীর্ঘদিন পর গত সপ্তাহে আইসিইউ সচল হয়েছে বলে হাসপাতালের কারিগরির সাথে সংশ্লিষ্ট একজন জানিয়েছেন।
এছাড়া মাত্র একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী দিয়ে চলছে হাসপাতালের প্রকৌশল বিভাগ। দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে ইনষ্টুমেন্ট কেয়ারটেকার ও
ইলেক্ট্রো মেডিকেল টেকনিশিয়ানের দু’টি পদ। এর একটি পদ আগে থেকেই শূণ্য ছিল। বাকীটা সম্প্রতি খালি হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যুর কারনে। এজন্য ওয়েষ্ট ম্যানেজমেন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট পরিচালনা করা, মেশিনপত্র সরবরাহকারী কমপক্ষে ২০টি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ ও সমন্বয়, গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা সবকিছুই সামাল দিতে হচ্ছে ওই একজনকেই। হাসপাতালের পরিচালকের কাছে এ ব্যাপারে একাধিকবার পত্র দিয়ে লোক চাওয়া হলেও কোন লোক দেয়া হয়নি বলেও জানান উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো: আমিরুল ইসলাম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালের ওয়েষ্ট ম্যানেজমেন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্টটি কোন সপ্তাহে একদিন আবার কোন সপ্তাহে দু’দিন চালানো হয়। ওই প্লান্টের মাধ্যমে হাসপাতালের মেডিকেল বর্জ্য জীবানুমুক্ত করা হয়। যেটি নিয়মিত চালু না থাকার ফলে মেডিকেল বর্জ্য দিয়ে রোগ-জীবানু ছড়ানোর আশংকা রয়েছে।
অপরদিকে, হাসপাতালের প্যাথলজী বিভাগ, আইসিইউ বিভাগ, ইউরোলজি বিভাগ, নেফ্রোলজি বিভাগ, নিউরো মেডিসিন বিভাগ, সিসিইউ বিভাগ, রেডিওলজি বিভাগ, নিউরো সার্জারী বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগে একাধিক যন্ত্রপাতির চাহিদা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়। ওইসব যন্ত্রপাতি কেনার জন্য দীর্ঘদিন আগে টেন্ডারও আহবান করে মালামাল কেনার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিককালে হঠাৎ করে বিভিন্ন অজুহাতে তা’ কেনা থেকে বিরত রয়েছে বর্তমান প্রশাসন।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক পর্যায়ের একজন চিকিৎসক বলেন, কালার ডপলার, অটোক্লেভ মেশিন, মাইক্রোস্কোপ প্রিমোস্টট, ফার্মাসিইউটিক্যালস রেফ্রিজারেটর, ইলেক্ট্রলাইট প্যানেল, ইটিভি সেট, অপারেশন নিউরো মাইক্রোস্কোপ, ক্লিনার অব মাইথিক, ক্লিনিং সলুশন, কন্ডিশনিং সলুশন, চিমনিসহ প্যাথলজি বিভাগের জন্য বেশকিছু ক্যামিক্যালের চাহিদাপত্র দেয়া হলেও সেগুলো কেনা হচ্ছে না। এর ফলে আর কিছুদিন পরই হাসপাতালের অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ হয়ে যেতে পারে এমন আশংকাও করেন তিনি।
যদিও হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের ইনচার্জ ডা: সুকুমার সাহা বলেন, চাহিদাপত্র হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে দেয়াই তাদের দায়িত্ব। এরপর কর্তৃপক্ষ যেভাবে মালামাল বা কেমিক্যাল সরবরাহ করবেন সেভাবেই প্যাথলজী বিভাগ কাজ করবে। এর বাইরে তাদের কিছুই করার নেই। এক কথায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যেভাবে তাদেরকে নির্দেশনা দেবেন সেভাবেই তারা কাজ করতে প্রস্তুত বলেও জানান।
হাসপাতালের এমন সংকটের ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে পরিচালক ডা: মুন্সী মো: রেজা সেকেন্দারের মোবাইলে গতকাল ফোন দিয়ে পাওয়া যায়নি। পরে তাকে এসএমএস দিয়েও এ বিষয়ে কোন মন্তব্য বা বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পরে কথা হয় হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: এসএম মোর্শেদের সাথে। তিনি বলেন, গতকাল শনিবার পর্যন্ত পরিচালক ছুটিতে ছিলেন। গতকাল পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন ডা: কামরুল হক। সার্বিক বিষয়ে তিনিই বলতে পারবেন।
তবে ডা: এসএম মোর্শেদ যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন সে কারণে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মালামাল কেনার ব্যাপারে অবশ্য প্রকিউরমেন্টসহ বিভিন্ন কমিটি রয়েছে। এক একটি কমিটির এক এক ধরনের কাজ। তিনি রয়েছেন রিসিভ কমিটিতে। মালামাল কেনার পর যখন রিসিভ করার প্রয়োজন হবে তখনই তিনি সেগুলো রিসিভ করবেন। এর বাইরে আর কিছুই তিনি বলতে পারবেন না বলেও উল্লেখ করেন।
এছাড়া ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা: কামরুল হককেও গতকাল ফোন দিয়ে পাওয়া যায়নি।