* ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৬৮ জন

* একদিনে ৬ জনের মৃত্যু

* শনাক্তের হারও ঊর্ধ্বমুখী

স্টাফ রিপোর্টার ঃ শুধু বাড়ছে করোনা রোগী। তীল ধারণের ঠাঁই নেই খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে। হাসপাতালের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রোগী ছিল গতকাল শুক্রবার। এ যাবতকালের মধ্যে এতো বেশি সংখ্যক রোগী কখনই ভর্তি থাকেনি এ হাসপাতালে। গতকাল সকালের হিসাব অনুযায়ী এ হাসপাতালে রোগী ছিল ১৬৮জন। ১৩০ বেডের এ হাসপাতালে বাড়তি রয়েছে ৩৮জন। যদিও হাসপাতালের পরিচালক ডা: মো: রবিউল হাসান বলেন, গতকাল থেকে সাবেক গ্যাষ্ট্রোলজি বিভাগে আরও ২০টি বেড সংযুক্ত করে করোনা রোগী রাখা হয়েছে। সেখানে অবশ্য হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে যাদের করোনা শনাক্ত হয়েছে তাদেরকেই রাখা হয় বলে তিনি জানান। সব মিলিয়ে খুলনা করোনা হাসপাতাল এখন কানায় কানায় পূর্ণ। বিকল্প হিসেবে খুলনা জেনারেল হাসপাতালে আগামীকাল রোবাবার থেকে রোগী ভর্তি হলে হয়তো কিছুটা চাপ কমবে খুমেক হাসপাতালের এ করোনা ইউনিটে। তবে প্রতিনিয়ত যে হারে করোনার রোগী বাড়ছে তাতে রীতিমতো শংকিত চিকিৎসকরা।
খুলনা করোনা হাসপাতালের বিগত ১৮ দিনের হিসাবে দেখা যায়, পয়লা জুন এ হাসপাতালে যেখানে ৯৯জন রোগী ছিল সেখানে গতকাল শুক্রবার ছিল ১৬৮জন। করোনা হাসপাতালের মুখপাত্র ডা: সুহাস রঞ্জন হালদারের দেয়া তথ্য মতে, এ মাসের বিগত ১৮ দিনে ক্রমান্বয়ে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তিনি বলেন, পয়লা জুন ৯৯জন রোগী থাকলেও ২ জুন বেড়ে দাঁড়ায় ১০৯জনে। এভাবে ৩ জুন ১১৫জন, ৪জুন ১০১জন, ৫জুন ১১৩জন, ৬জুন ১২৫জন, ৭জুন ১১৯জন, ৮জুন ১২৯জন, ৯জুন ১৩০জন, ১০জুন ১২৬জন, ১১জুন ১৪৩জন, ১২জুন ১৩১জন, ১৩জুন ১৪৩জন, ১৪জুন ১৪১জন, ১৫জুন ১৫৪জন, ১৬জুন ১৩৯জন, ১৭জুন ১৫৯জন এবং গতকাল শুক্রবার ১৬৮জন রোগী ভর্তি ছিল।
একদিনে মৃত্যু ছয়জন ঃ ভর্তি রোগীর সংখ্যা যেমন ঊর্ধ্বমুখী তেমনি প্রতিনিয়তই এ হাসপাতালে মৃত্যুর হারও যেন কমছে না। বৃহস্পতিবার রাত দেড়টা থেকে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত এ হাসপাতালে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়।
এদের মধ্যে নড়াইলের মিজাপুরের মিজানুর রহমান(৫০) ৭ জুন ভর্তি হয়ে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটা ৩৫ মিনিটে, খুলনার দিঘলিয়ার বারাকপুরের মোস্তফা শেখ(৬০) ১১ জুন ভর্তি হয়ে বৃহস্পতিবার রাত ২টা ২০ মিনিটে, যশোরের কেবশবপুরের কোন্দবপুরের ফজিলা বেগম(৬৯) ১০ জুন ভর্তি হয়ে বৃহস্পতিবার রাত ২টা ৪০ মিনিটে, রূপসার নৈহাটি এলাকার আবুল হোসেন(৬০) ৩১ মে ভর্তি হয়ে গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায়, সাতক্ষীরার কলারোয়ার উকাপুরের সাবদুল(৫১) ১২ জুন ভর্তি হয়ে গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ছয়টায় এবং নগরীর লবণচরা ইসলামপাড়ার শাহজাহান(৪৯) গতকাল ভর্তি হয়ে গতকালই সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় মৃত্যুবরণ করেন।
এছাড়া বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী গতকাল সকাল পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় বিগত ২৪ ঘন্টায় আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে বিভাগে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৭৭৫জনের। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: রাশেদা সুলতানা এটি নিশ্চিত করেছেন।
করোনা শনাক্তের হারও ঊর্ধ্বমুখী ঃ খুলনা করোনা হাসপাতালে যেমন রোগীর চাপ বাড়ছে তেমনি করোনা শনাক্তের হারও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। গতকালও খুলনা মেডিকেল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাবে ৪৪৮টি নমুনা পরীক্ষার পর ১৭১জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর মধ্যে খুলনার ১৪৯জন, বাগেরহাটের আটজন, সাতক্ষীরার দু’জন, যশোরের পাঁচজন, নড়াইলের একজন, গোপালগঞ্জের তিনজন, পিরোজপুরের একজন, মাগুরার একজন এবং ফরিদপুরের একজন রয়েছেন বলে খুমেক’র উপাধ্যক্ষ ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজ জানিয়েছেন।
এছাড়া খুমেক ল্যাবসহ নগরীর অন্যান্য ল্যাব এবং জেলার নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিগত ২৪ ঘন্টার হিসাব তুলে ধরে সিভিল সার্জনের দপ্তর বলছে, ওই সময়ে সর্বমোট ৬৭৮টি পিসিআর ও এন্টিজেন পরীক্ষার পর ২২৬জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। খুলনার সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া বিভাগের ১০ জেলায় গতকাল পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৩ হাজার ৬৪৪জন এবং সুস্থ্য হয়েছেন ৩৩ হাজার ৯৩৪জন। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর থেকে দেয়া দৈনিক করোনা বিষয়ক প্রতিবেদনে এমনটি উল্লেখ করা হয়।