খুলনা-৬ আসনের
সংসদ সদস্য

আক্তারুজ্জামান বাবু

* গৌরবের পদ্মা সেতু, আর বাকী ৭ দিন

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ বিশ^ ব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন যে, আমরাই পারি, আমরা পরনির্ভরশীল জাতি নই। পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়ায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একুশ জেলার মানুষ উচ্ছ্বসিত, উল্লসিত, উদ্বেলিত। এমন মন্তব্য করে খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, পদ্মা সেতুর ফলে দক্ষিণবঙ্গে দ্বিতীয় পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি একধাপ এগিয়ে গেলো।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মাহেন্দ্রক্ষণকে সামনে রেখে দৈনিক পূর্বাঞ্চলকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, পদ্মার এপারের একুশ জেলার মানুষ যে কতটা আনন্দিত সেটি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এজন্য অনেকের জীবনও রক্ষা পাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি সর্বনাশা পদ্মা পাড়ি দেয়ার কয়েকটি করুণ কাহিনীও তুলে ধরেন। কখনও স্পীডবোট, কখনও ট্রলার এমনকি ফেরিতে পদ্মা পাড়ি দিতে গিয়েও তাকে পড়তে হয়েছিল মৃত্যুমুখে। একবার, দু’বার নয়, বরং তিন তিন বার তিনি নিজেই মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে আসেন। এছাড়া এম্বুলেন্সে খুলনা থেকে ঢাকায় রোগী নিতে গিয়েও অনেকে পদ্মা পাড়ে অপেক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছেন এমন করুন ইতিহাসও রয়েছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে তেমন দু:সহ যন্ত্রণা আর ভোগ করতে হবে না।
পদ্মা সেতু হচ্ছে আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন এমনটি উল্লেখ করে সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, এমনও নজির আছে যে, পদ্মা পাড়ি দিতে গিয়ে ডাকাতি হয়েছে, নারীরা শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছে আবার অনেকে মারাও গেছে। পদ্মা সেতু চালু হচ্ছে এটি এ অঞ্চলের মানুষের জন্য যে কতটা আনন্দের তা’ ভাষায় প্রকাশ করা যায় না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
পদ্মা সেতুর কাজ শুরুর আগেই দুর্নীতির কথিত অভিযোগ প্রসঙ্গ তুলে ধরে এই সংসদ সদস্য বলেন, যারা দুর্নীতি করেছে, বিদ্যুতের নামে খাম্বা তৈরি করে কোটি কোটি টাকা লুটে নিয়েছে, যারা এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছে কেবল তাদের মুখেই দুর্নীতির শোভা পায়। অথচ জার্মানের সবচেয়ে দামি ও ভারী অত্যাধুনিক হেমার দিয়েই কাজ করা হয় এই পদ্মা সেতুর।
পদ্মা সেতু হওয়া মানেই দক্ষিণাঞ্চলে আর একটি পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হওয়ার পথটি প্রসস্ত হওয়া উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীই বলেছেন, দ্বিতীয় পারমানিবক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে দক্ষিণাঞ্চলে। সুতরাং পদ্মা সেতু হওয়ার পর এ ক্ষেত্রে আর কোন বাঁধা থাকবে না।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সাথে সাথেই এ অঞ্চলের আর্থ সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হবে, বিদ্যুতের ঘাটতি কেটে যাবে এমনটি উল্লেখ করে খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য বলেন, এ অঞ্চলের চিংড়ি, ভেটকি, টেংরা, পারসে মাছের প্রতি সারাদেশের মানুষের চাহিদা আছে। যা ঢাকা বা দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে পাঠাতে অনেক সময় বিড়ম্বনায় পড়তে হতো। মাছ নষ্ট হওয়ার ভয় থাকতো। সর্বোপরি সাম্প্রতিক সময়ে এ অঞ্চলে তরমুজের যে বাম্পার ফলন হয়েছে তা নিয়েও মধ্যসত্যভোগীরা ব্যবসা করেছে। এর ফলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এখন কৃষকরা নিজেরাই পদ্মা সেতুর মাধ্যমে তরমুজ রপ্তানী করতে পারবে। এ অঞ্চলের কাঁচামাল অন্য অঞ্চলে পাঠাতে গিয়ে অনেক সময় পঁচে নষ্ট হতো। যার ফলে কৃষকরা হতো সর্বস্বান্ত। কিন্তু এখন আর কাঁচামাল পাঠাতে গিয়ে পঁচে যাওয়ার ভয় থাকবে না। মধ্যসত্তভোগীদের আর দৌরাত্ম থাকবে না।
সব মিলিয়ে পদ্মা সেতু জাতীয় অর্থনীতিতেও রাখবে ব্যাপক ভূমিকা। কৃষি, শিল্প, বিদ্যুৎ, বন্দর সব ক্ষেত্রেই আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
পদ্মা সেতু চালু হলে খুলনাঞ্চলের পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা আসবে সুন্দরবন দেখতে। সর্বোপরি পদ্মা সেতু নির্মাণ করে দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী যে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সুযোগ করে দিয়েছেন এজন্য তিনি তাকে ধন্যবাদ জানান এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।