খুমেক’র সীমানা প্রাচীর উঁচুকরণ কাজ

স্টাফ রিপোর্টার ঃ পুরাতন সীমানা প্রাচীরে ছিল আরসিসি পাইলিং। কিন্তু এর উপর দিয়ে শুধুমাত্র ইটের গাঁথুনি দিয়েই উঁচু করা হলো প্রাচীরটি। পুরো সীমানা প্রাচীরটি উঁচুকরণ করতেই খরচ দেখানো হয় ১৫ লাখ টাকা। প্রকল্পের নামও ছিল সীমানা প্রাচীর উঁচুকরণসহ মেরামত ও সংস্কার কাজ। কিন্তু সংস্কারের মধ্যে শুধুমাত্র দেয়ালের একপাশে রং করা হলেও হয়নি প্লাষ্টারকাজ। এভাবেই যেনোতেনোভাবে ঝুঁকিপূর্ণভাবেই করা হলো খুলনা মেডিকেল কলেজের সীমানা প্রাচীরের উচুকরণ কাজটি। গণপূর্ত বিভাগ, খুলনা-১এর আওতায় কাজটি সম্পন্ন হয়। তবে গণপূর্ত বিভাগের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী বললেন, টাকার অভাবে শুধুমাত্র ইট দিয়ে একপাশে রং করে অন্যপাশে ফাঁকা রাখা হয়েছে। পরে বাজেট আসলে বাকী কাজ সম্পন্ন করা হবে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের মেরামত শাখার উপসচিব মো: শহীদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়, ২০২০-২১ অর্থ বছরের রাজস্ব বাজেটের আওতায় খুলনা মেডিকেল কলেজের দু’টি সীমানা প্রাচীরসহ ২০টি কাজের জন্য দুই কোটি সাত লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। ওই কাজগুলো ২০২০-২১ অর্থ বছরের হলেও কাজগুলো করা হয় অর্থ বছরের শেষে এসে অর্থাৎ জুন মাসে। এর মধ্যে কিছু কিছু কাজ অর্থ বছর শেষ হওয়ার পরও করা হয়। বিশেষ করে কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের কার্যালয়ে ফ্লোর টাইলস স্থাপনসহ প্রশাসনিক ভবনের সিভিল, স্যানেটরি ও পানি সরবরাহ লাইন মেরামত কাজ এখনও অসম্পূর্ণ রয়েছে। কাজগুলোর মান নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুললেও বাস্তবায়নকারী সংস্থা ও ব্যবহারকারী কর্তৃপক্ষ উভয়ের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে উদাসীনতা। বিশেষ করে কলেজের পূর্ব পাশের সীমানা প্রাচীর উঁচুকরণ কাজটি এতোটাই ঝুঁকিপূর্ণভাবে করা হয়েছে যে, পাশর্^বর্তী বাড়ির লোকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতংক। দেয়াল ঘেষেই এলাকাবাসীর যাতায়াতের পথটি এখন অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, তারা চলাচলের সময় অনেকটা আতংকে থাকেন। আরসিসি পিলার বর্ধিত না করায় তার উপরে লম্বা দেয়ালে শুধুমাত্র ইট দিয়ে গাঁথুনি দেয়ায় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলেও তারা জানান।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সদস্য ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি জিয়াউর রহমান বাবু বলেন, দেয়ালটি সম্প্রসারণ করা হলেও পুরাতন আরসিসি কলমের উপরে শুধুমাত্র ইট দিয়ে গাঁথুনি দেয়ায় সেটি বড় ধরনের ঝড় তুফানের সময় ভেঙ্গে পড়ার আশংকা রয়েছে। তাছাড়া দেয়ালটির কোন পাশেই যেমন প্লাষ্টার করা হয়নি তেমনি ভেতরের অংশে শুধুমাত্র রং দিয়ে যেনোতেনোভাবে কাজটি সম্পন্ন করা হয়েছে। আবার বাইরের অংশে প্লাষ্টার ও রং কিছুই করা হয়নি। পুরাতন দেয়ালের ওপর যে তারকাটার এ্যাংগেল ছিল সেটি তুলে উপরে কোনরকমে লাগিয়ে রাখা হয়েছে। তাও আবার অনেক জায়গায় নেই। তার মতে প্রাচীরটি পুরাতন আরসিসি কলমের রড বের করে উপরেও রড দিয়ে আরসিসি পিলার বর্ধিত করে তারপর ইটের গাঁথুনি দেয়া হলে টেকসই হতো। কিন্তু এখন হয়েছে অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ। ঠিক একইভাবে কলেজের দক্ষিণ পাশের দেয়ালটিও করা হয়েছে। সেখানেও ব্যয় দেখানো হয়েছে ১৫ লাখ টাকা।
যদিও কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা: মো: আব্দুল আহাদ বলেন, তিনি প্রাচীরের ভেতরের অংশে রং করা দেখেছেন, বাইরের অংশ কিভাবে করা হয়েছে সেটি তিনি দেখেননি। ইট দিয়ে গাঁথুনি দিয়ে উঁচু করা হলেও মাঝে মাঝে থাকা আরসিসি পাইলিং উঁচুকরণের বিষয়টি প্রাক্কলিত মূল্যে নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে, বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত বিভাগ, খুলনা-১এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো: শহীদুল ইসলাম বলেন, বাজেট না থাকায় দেয়ালের প্লাষ্টার করা যায়নি। তবে পরবর্তীতে বাজেট পাওয়া গেলে প্লাষ্টার করে রং দেয়া হবে। কিন্তু একপাশে প্লাষ্টার ছাড়াই রং কেনো করা হলো জানতে চাইলে তিনি এর কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তাছাড়া পুরাতন দেয়ালের উপরে আরসিসি পিলার না দিয়ে শুধুমাত্র ইটের গাঁথুনি দেয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, এতে সমস্যা হবে না।
এদিকে, অর্থ বছরের শেষে এসে শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠানেই ২০টি সংস্কার কাজের জন্য ব্যয় দেখানো হয়েছে দুই কোটি সাত লাখ টাকা। যে কাজগুলো করাও হয় জুন মাসে। এটি নিয়ে বিভাগীয় হিসাব দপ্তরও প্রশ্ন তুললেও পরে অজ্ঞাত কারণে এটি আর বেশিদূর এগোয়নি। এভাবেই সরকারি অর্থ লোপাটের বিষয়গুলো ধামাচাপা পড়ে বলেও অনেকে মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ, সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ গণপূর্ত বিভাগ করলেও ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের কারণে সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েরই আর একটি প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের(এইচইডি) মাধ্যমে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্মাণ, সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে খুলনা ও সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কাজ এইচইডির মাধ্যমে করানো হবে বলে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদিও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশের পর গণপূর্ত বিভাগ ব্যবহারকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছ থেকে প্রশংসাপত্র সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে।