/ খুলনার বাজারে সামুদ্রিক মাছের সংকট, দেশি মাছ ও সবজির দাম বেড়েছে

খুলনার বাজারে সামুদ্রিক মাছের সংকট, দেশি মাছ ও সবজির দাম বেড়েছে

স্টাফ রিপোর্টারঃ মা ইলিশ রক্ষায় চলছে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা। ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন উপকূলীয় সমুদ্র ও নদীতে সব ধরনের ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞার কারণে খুলনার বাজারে দেখা দিয়েছে সামুদ্রিক মাছের সংকট। ফলে দাম বেড়েছে দেশি ও চাষের মাছের। একইসঙ্গে বৈরী আবহাওয়া ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে সবজির দামেও বেড়েছে অস্থিরতা। ক্রেতারা বলছেন, বাজার এখন যেন আগুনে পরিণত হয়েছে; বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কমে যাওয়াই এই মূল্যবৃদ্ধির মূল কারণ।

গতকাল শুক্রবার সকালে খুলনার রূপসা, নিউমার্কেট, খালিশপুর ও দৌলতপুরের বিভিন্ন মাছবাজার ঘুরে দেখা গেছে রূপসা মাছ বাজারে ইলিশের কোনো সরবরাহ নেই। সমুদ্রগামী ট্রলারগুলো নিষেধাজ্ঞার কারণে ঘাটে বাঁধা, ফলে ইলিশের পাশাপাশি রূপচাঁদা, ভেটকি, লইট্টা, চিটল, কোরাল ও অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের সরবরাহও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। রূপসা মাছ বাজারের বিক্রেতা হানিফ গাজী জানান, সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় বাজারে এখন চাষের মাছই ভরসা। সরবরাহ কম থাকায় দামও বেড়েছে। প্রতিদিনই ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, কিন্তু আমাদেরও কিছু করার নেই।

দেশি ও চাষের মাছের দামের উর্ধ্বগতিবাজারে এখন মূলত তেলাপিয়া, রুই, কাতল, পাঙাশ, কই ও চিংড়ি এই মাছগুলোই বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে এগুলির দামও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেড়েছে । আকারভেদে তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৫০ থেকে ২৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহের তুলনায় ৩০ টাকা বেশি। রুই মাছের কেজি ৩৫০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৩০০ টাকা। পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২২০ টাকা দরে, কই ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে চিংড়ির। ছোট চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা, মাঝারি থেকে বড় আকারের চিংড়ি ৮০০ থেকে ১,০০০ টাকা কেজি দরে। দৌলতপুর বাজারের বিক্রেতা আমিরুল ইসলাম বলেন, সমুদ্রের মাছ না থাকায় এখন চাহিদা পড়েছে মিষ্টি পানির মাছের ওপর। কিন্তু সরবরাহ সীমিত হওয়ায় দাম বাড়ছে প্রতিদিনই। কিছু মাছ পাইকারি বাজার থেকেই বেশি দামে আনতে হচ্ছে।

ময়লাপোতা সান্ধ্য বাজারে মাছ কিনতে আসা গৃহিণী তামান্না ইয়াসমিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আজ বাজারে সামুদ্রিক মাছের দেখাই পেলাম না। যে রুই মাছটি এক সপ্তাহ আগে ৩০০ টাকায় কিনেছি, সেটি আজ ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম নিচ্ছে ।
দৌলতপুর বাজারের ক্রেতা আনসারুল হক একই অভিযোগ করেন, কম দামের মাছ বলতে কিছুই নেই। পাঙাশের কেজি ২০০ টাকা, ছোট চিংড়ি ৬০০ টাকা, আর ভালো মানের বড় চিংড়ি কিনতে গেলে হাজার টাকা লাগে। পরিবারে সবাই মিলে মাছ খাওয়া এখন বিলাসিতা হয়ে গেছে।

বিক্রেতারা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি পরিবহন খরচও মূল্যবৃদ্ধির আরেক কারণ। অনেক সময় চাষের পুকুর থেকে মাছ আনতে দূরপাল্লায় ভাড়া বেড়ে যাচ্ছে। পাইকারি বাজারেও দাম বেশি। ফলে খুচরা বিক্রেতাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। দৌলতপুরের মাছ বিক্রেতা ইসহাক বলেন, আমরা ইচ্ছে করে দাম বাড়াই না। সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে বাজারে স্বাভাবিকভাবেই সংকট হয়। তেলাপিয়া বা পাঙাশের চাহিদা এখন কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।

মাছের পাশাপাশি খুলনার সবজির বাজারেও দেখা দিয়েছে দামের ঊর্ধ্বগতি। বিক্রেতারা বলছেন, বৈরী আবহাওয়া, বৃষ্টিপাত এবং পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে অনেক এলাকার সবজি সময়মতো আসছে না। ফলে প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম। বাজারে এখন লাউ বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৬০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪০থেকে ৫০ টাকা। বেগুনের কেজি ১২০ টাকা, ঝিঙে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পটল ৭০ টাকা, উচ্ছে ৮০ টাকা এবং বরবটি ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

গল্লামারী বাজারের সবজি বিক্রেতা ইউনুস মোড়ল জানান, বৃষ্টি ও রাস্তাঘাটের খারাপ অবস্থার কারণে পাইকারি বাজারে সরবরাহ ঠিকমতো হচ্ছে না। ফলে দাম বাড়ছে প্রতিদিনই। মরিচের দাম কিছুটা কমেছে। তবে কাঁচা মরিচের বাজারে দেখা গেছে সামান্য স্বস্তি। আমদানি বন্ধ থাকায় গত সপ্তাহে কেজি প্রতি মরিচের দাম বেড়ে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় পৌঁছেছিল। কিন্তু গতকাল শুক্রবার বিভিন্ন বাজারে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে মরিচ বিক্রি করতে দেখা গেছে । বিক্রেতারা জানিয়েছেন, আমদানির মরিচ বাজারে আসায় দাম কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। যদিও এখনো আগের তুলনায় দাম অনেক বেশি।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, মা ইলিশের প্রজনন মৌসুমে ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন উপকূলীয় সমুদ্র ও নদীতে সব ধরনের ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা শেষ হলে সামুদ্রিক মাছের সরবরাহ বাড়বে এবং দাম কমে বাজারে স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে। তবে বর্তমানে সাধারণ মানুষের খাদ্য ব্যয়ের চাপ বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই চিন্তিত।