/ তেরখাদার বারাসাত গ্রাম পুরুষ শূন্য, আবারও সংঘর্ষের আশংকা

তেরখাদার বারাসাত গ্রাম পুরুষ শূন্য, আবারও সংঘর্ষের আশংকা

তেরখাদার বারাসাত গ্রামের কলহ প্রবণ এলাকায় এখন পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। আবারও সংঘর্ষের আশংকা করছেন এলাকাবাসী। যদিও নৌবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর দিন রাত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আধিপত্য বিস্তার এবং কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা নিয়ে দীর্ঘ যুগ যুগ ধরে তেরখাদা উপজেলার বারাসাত গ্রামে সংঘর্ষ-সংঘাত, হামলা-পাল্টা হামলা, মামলা-পাল্টা মামলা একের পর চলে আসছে।

বারাসাতের পাশে রয়েছে হরিদাসবাটী ও চালিতাতলা নামে আরও দুইটি গ্রাম। ওই গ্রামের মানুষও বারাসাত গ্রামের সাথে মিলেমিশে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। বর্তমানে গোটা বারাসাত হরিদাসবাটী ও চালিতাতলা এলাকা জুড়ে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে দ্বন্দ সংঘাত চলছে। সর্বশেষ গত ১৩ জুন সকাল ৯টার দিকে উপজেলার বারাসাত গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিবদমান দু’টি গ্রæপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এলাকাবাসী জানায়, ১২জুন রাতে টুটুল মেম্বারের পক্ষের শতাধিক লোক এক সংগে বাড়িতে ওঠে। এদের উষ্কানিতে প্রতিপক্ষ গ্রæপের লোকজন ফুসে ওঠে বলে জনশ্রæতি রয়েছে। প্রতিপক্ষ গ্রæপের লোকেরা ১৩জুন সকাল থেকেই সুযোগ খোঁজা শুরু করে। সকাল ৯টার দিকে এক পর্যায়ে উভয় গ্রæপ মুখোমুখি হয়ে গেলে সংঘর্ষ বাধে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, এ সময় দেশী তৈরী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দুই পক্ষই ঝাপিয়ে পড়ে। সংঘর্ষ চলাকালে কে বা কারা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি ছোড়ে। গুলির স্প্রিন্টার বাবু শেখ(২২) নামে এক যুবকের পায়ে লাগে আহত হয়। বাবু শেখ নিজেই স্বীকার করে তাকে গুলি করা হয়েছে। সংঘর্ষে বাবু শেখ ছাড়াও আরও ১০/১২জন আহত হয়। এ সময় ২/৩টি বাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে ৬জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বারাসাত এলাকায় সংঘর্ষের খবর ছড়িয়ে পড়লে নৌবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনীর সদস্যরা দ্রæত ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। যৌথবাহিনীর সদস্যরা ঘটনার সাথে জড়িত ১৯জন কে গ্রেফতার করে। গুলির বিষয়টি নৌবাহিনী এবং থানা পুলিশ খতিয়ে দেখছে। যৌথবাহিনীর সদস্যরা বারাসাত গ্রামে তল্লাসী চালিয়ে দেশী তৈরী বিপুল পরিমান দেশী তৈরী অস্ত্র উদ্ধার করে। পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিককালে বারাসাত গ্রামের পলাশ শেখ(মেম্বার) ও রবিউল ইসলাম টুটুল(মেম্বার) গ্রæপের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে। এর আগের ঈদ পরবর্তী সময়েও উভয় পক্ষের মধ্যে কয়েকদফা হামলা,মামলা, সংঘর্ষ, ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া সংঘটিত হয়।

গত ১৩ জুন সকাল ৯টার দিকে সংঘটিত সংঘর্ষে উভয় গ্রæপের কমপক্ষে ১০/১২জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে টুটুল মেম্বার গ্রæপের বাসার শেখ(৪৮), খায়ের শেখ(৪২) উভয় পিতা-আফসার শেখ, আসলাম কাজী(৪৮) পিতা- মৃত বাদশা কাজী,হাসিব মোল্যা(৩০) পিতা-ফিরোজ মোল্যা, দানা সরদার(৫০)পিতা-বজলার সরদার এবং পলাশ মেম্বার গ্রæপের ইসরাফিল ম্যোলা (৬২) পিতা- আহমেদ মোল্যা সর্ব সাং বারাসাতকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। আহত অন্যান্যরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করে। এ ঘটনার পর নৌবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনীর সদস্যরা উভয় পক্ষকে হটিয়ে দেয়।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতার আতংকে বারাসাত গ্রাম এখন পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। তবে উভয় পক্ষই গ্রামের পাশ দিয়েই বিলের মধ্যে অবস্থান করছে এবং পরবর্তী সংঘাতে জড়ানোর পরিকল্পনা করছে। নৌবাহিনী ও পুলিশ শিথিল হলেই যেকোনো মুহূর্তে আবারও বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে এমন আশংকা করছেন এলাকার সচেতন মহল।

তেরখাদা থানার অফিসার ইনচার্জ মেহেদী হাসান বলেন, বারাসাত গ্রামে সংঘর্ষ চলাকালে গুলির শব্দ হয়েছে এ কথাটি তিনি জানতে পারেন নি। তবে তিনি লোকমুখে শুনেছেন বলে জানান। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন বলে জানান।