সংবাদ আপডেট

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সিলেটে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলাকালে অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। এসময় দুই সাংবাদিক ও এক শিশু গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের মধ্যে শিশুটির অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছে হাসপাতাল সূত্র।

আজ শুক্রবার নগরের আখালিয়া এলাকায় আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে অন্তত শতাধিক রাউন্ড টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও শটগানের গুলি নিক্ষেপ করে পুলিশ। এসময় আন্দোলনকারীদের অর্ধশতাধিক আহত হন। এতে দুই সাংবাদিক, এক শিশু গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।  

পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছে দৈনিক কালবেলার সিলেট প্রতিনিধি মিটু দাশ জয় ও বার্তা২৪ ডটকমের স্টাফ রিপোর্টার মোশাহিদ আলী আহত হয়েছেন।  

মিটু দাশ জয় জানান, তার চোখের নিচেসহ শরীরে ৪টি ছররা গুলি লেগেছে। তাৎক্ষণিক নগরের একটি হাসপাতালে গিয়ে স্প্লিন্টার অপসারণ করেছেন।

এছাড়া বার্তা২৪ ডটকমের স্টাফ রিপোর্টার মোশাহিদ আলীর কানের পেছনে গুলি লাগে।

এদিকে, সংঘর্ষ চলাকালে আখালিয়া বিজিবি ক্যাম্পের সামনে পুলিশের ছোড়া শটগানের গুলিতে ১২/১৩ বছরের একটি শিশু আহত হয়েছে। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে ভর্তি করে। গুরুতর অবস্থায় ওই হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে।

এর আগে শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এতে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সিলেটের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঁচ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।

এরপর বিকাল সাড়ে ৩টায় শাবিপ্রবির প্রধান ফটক থেকে গণমিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা। বিকাল ৪টার দিকে মিছিলটি সিলেটের আখালিয়ায় মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের সামনে আসলে পুলিশ পেছন থেকে টিয়ারগ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় শিক্ষার্থীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। এতে শিক্ষার্থীদের হাতে ইট-পাটকেল ও লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে অবস্থান করতে দেখা গেছে।

অন্যদিকে, প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলমান এ সংঘর্ষে পুলিশ অন্তত শতাধিক টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় নগরের আখালিয়া এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এসময় আন্দোলনকারীদের ৮ জনকে ধাওয়া দিয়ে আটক করেছে পুলিশ।

সংঘর্ষ চলাকালে আন্দোলনকারী ছাত্ররা মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশও পাল্টা শটগানের গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এসময় মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ হাসপাতালের ভেতরে গা-ঢাকা দেওয়া আন্দোলনকারীদের বের করে দিতে আহ্বান জানান। অন্যথায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, পুলিশ অভিযান চালিয়ে কাউকে পেলে হাসপাতালের লোকজনও মামলার আসামি হবেন।  

এসময় এক নারী এগিয়ে এসে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হন।

এদিকে, পরিস্থিতি খানিকটা নিয়ন্ত্রণে আসলে ফের বাসা-বাড়িতে অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশকে নারীদের তোপের মুখে পড়ে ফিরে আসতে হয়।

প্রায় দুই ঘণ্টা থেমে থেমে সংঘর্ষ হয়। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সংঘর্ষের জেরে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নগরের বিভিন্ন এলাকায় সেনা, বিজিবি ও পুলিশ মোতায়েন থাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও মানুষের মধ্যে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে।

আলোচিত সংবাদ

বিজ্ঞাপন