প্রস্তাবিত অ্যাপস’র নাম ‘সুন্দরবন’

রফিউল ইসলাম টুটুল : অটোমেশন বা সয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে চালু হতে যাচ্ছে সুন্দরবনের পর্যটন ব্যবস্থাপনা। এতে একটি নির্দিষ্ট অ্যাপস’র মাধ্যমে একজন পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণের যাবতীয় কার্যক্রম ঘরে বসেই সম্পন্ন করতে পারবেন। এর ফলে একদিকে পর্যটকদের ভ্রমণের বুকিং সংক্রান্ত কাজে ভোগান্তি ও সময় সাশ্রয় হবে, অন্যদিকে বনবিভাগেরও পর্যটকদের সেবা কার্যক্রম আরও সহজ হবে। পাশাপাশি একটি সুশৃঙ্খল ভ্রমণ ব্যবস্থাপনাও নিশ্চিত হবে।
বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন মোবাইল গেইম ও এ্যাপ্লিকেশন-এর দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবন ভ্রমণ ব্যবস্থাপনার এই অটোমেশন কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রস্তাবিত অ্যাপ্লিকেশনটির নাম দেয়া হয়েছে ‘সুন্দরবন’। দেশ বিদেশের যেকোন প্রান্ত থেকে একজন পর্যটক এই অ্যাপস’র মাধ্যমে সুন্দরবন ভ্রমণের যাবতীয় তথ্য পেয়ে যাবেন। এখানে পর্যটন কেন্দ্র ও নৌযানের তালিকা ও নৌযান মালিকের ঠিকানা ও নাম্বারসহ অন্যান্য বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। সংরক্ষিত এই বনাঞ্চলে একদিন বা তিনদিনের ভ্রমণের জন্য নির্দিষ্ট কিছু পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। কোন পর্যটক যদি একদিনের জন্য সুন্দরবন ভ্রমণে যেতে চান তাহলে তিনি ঐ অ্যাপস-এ ঢুকে একদিনের কেন্দ্রে চাপ দিলে করমজল, হারবাড়িয়া, কলাগাছিয়া ও শেখেরটেক পর্যটন কেন্দ্রের নাম চলে আসবে এবং প্রতিটি কেন্দ্রের পাশে ঐ কেন্দ্রে যেতে কয়টি নৌযান আছে সেগুলোর নাম, ছবি, ভাড়ার তালিকা ও ছাড়ার স্থান এবং নৌযান মালিকের নাম, ঠিকানা ও রাজস্ব ফিসহ বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে। পর্যটকদের ভিড় ও জীব বৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষায় একদিনের এসব পর্যটন কেন্দ্রে প্রতি ঘন্টায় দু’শো জন পর্যটক একসঙ্গে ভ্রমণ করতে পারবেন। নির্দিষ্ট প্রতি ঘন্টার জন্য দু’শো জনের বেশী পর্যটক হলে তারা পরবর্তী ঘন্টার জন্য নিবন্ধিত হবেন। এভাবে প্রতিদিন আট ঘন্টায় ১৬শ’ পর্যটক একদিনের জন্য সুন্দরবন ভ্রমণ করতে পারবেন। একইভাবে যারা তিনদিনের জন্য সুন্দরবন ভ্রমণে যেতে চান, তারাও কটকা, কচিখালি, দুবলার চর ও নীলকমল(হিরণপয়েন্ট) পর্যটন কেন্দ্রের নাম দেখতে পারবেন এবং একইভাবে নৌযান ও মালিকের নাম, ঠিকানা ও কোন নৌযানে কয়টি আসন খালি আছে তাও দেখতে পারবেন। বিশিষ্ট ভ্রমণপিপাসু মোঃ মাসুম মিয়া বলেন, বিদেশ ভ্রমণের সময় আমরা এ সুবিধা ভোগ করে থাকি। তবে দেশে এ ব্যবস্থা চালু ছিল না। সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য অটোমেশন পদ্ধতি চালু হচ্ছে, এটা পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। এতে সুন্দরবনের প্রতি পর্যটকরা আরও আগ্রহী হয়ে উঠবে। ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবন(টোয়াস)এর সভাপতি মোঃ মইনুল ইসলাম জোয়ার্দার বলেন, অটোমেশন পদ্ধতিতে সুন্দরবন ভ্রমণ ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নকে আরও একধাপ এগিয়ে নেবে। এতে ট্যুরিষ্ট, ট্যুর অপারেটর ও বনবিভাগ সবাই লাভবান হবে বলে আশা করি। তবে এই অটোমেশন ব্যবস্থায় ভ্রমণ বাধাগ্রস্ত হয় এমন কিছু যেন না থাকে সেদিকেও সংশ্লিষ্টদের সজাগ থাকতে হবে।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে সুন্দরবন ভ্রমণ পদ্ধতি অটোমেশন হচ্ছে। এটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রামের আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতে বনবিভাগের পর্যটন কার্যক্রম আরও উন্নত হবে এবং পর্যটন সংশ্লিষ্ট সবাই উপকৃত হবে। অটোমেশন প্রকল্পের ফোকাল পার্সন সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের ডিএফও ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, প্রতি বছর প্রায় দেড় থেকে দু’লাখ পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণে আসেন। এই বিপুল সংখ্যক পর্যটকদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সীমিত জনবল নিয়ে কঠিন হয়ে পড়ে। তবে অটোমেশন পদ্ধতি চালু হলে কাজটি অনেক সহজ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, এ পদ্ধতিতে একটি জাহাজ চলাচলের সমস্ত অনুমতি আছে কিনা তাও উল্লেখ থাকবে। এখানে লুকোচুরির কোন সুযোগ থাকবে না। ভ্রমণ সংক্রান্ত সবকিছু ঠিক থাকলেই একটি জাহাজ সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি পাবে। এছাড়াও সংরক্ষিত এ বনে পর্যটকদের ব্যাপক সমাগম ঠেকাতে প্রতিটি জাহাজের রোস্টার করে দেয়া হবে। প্রতি রাতে একটি পর্যটন কেন্দ্রে ১০টির বেশী জাহাজ থাকতে দেয়া হবে না। তিনদিনের ভ্রমণের চারটি পর্যটন কেন্দ্রে আলাদাভাবে মোট ৪০টি জাহাজ অবস্থান করতে পারবে। পর্যটন কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট বনকর্মকর্তার কাছে কোন জাহাজ কোথায় অবস্থান করবে তার তালিকা থাকবে। ডিএফও আবু নাসের আরও বলেন, এই অটোমেশন পদ্ধতিতে যেন পর্যটকদের ভীতি সঞ্চার না হয় এবং সবাইকে অভ্যস্ত করে তুলতে চলতি বছর ডিসেম্বর থেকে আগামী একবছর অনলাইন ব্যবস্থার পাশাপাশি বর্তমান পদ্ধতিও চালু থাকবে। সবমিলিয়ে এ পদ্ধতিতে সুন্দরবনে একটি সুষ্ঠু পর্যটন ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশা করেন।