ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী দেশ। ভারতের সাথে বাংলাদেশের ব্যবসা-বিনিয়োগসহ অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রেই পার্টনারশীপ রয়েছে। এছাড়াও ভারত বাংলাদেশে বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিশ্বস্ত এবং সহযোগী হিসেবেই স্বীকৃত। ঐতিহাসিকভাবেই ভারত-বাংলাদেশ নিকট সম্পর্কীয়। এমনি বাস্তবতায় দুই দেশের সাথে সহযোগিতা এবং পার্টনারশীপের নানা ক্ষেত্রের দূয়ার উন্মোচিত হবে এটাই স্বাভাবিক। এছাড়াও বৈশ্বিক পরিমন্ডলে ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাংলাদেশেরও গুরুত্ব অনেক। বৈশ্বিক রাজনীতির কারণেই ভারতও চায় বাংলাদেশের সাথে সুসম্পর্ক বজায় থাক। আবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল লক্ষ্যও হলো কারো সাথে বৈরিতা নয়, সকলের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা। এমনি অবস্থায় বাংলাদেশের সাথে কারোরই বৈরী সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশ খুবই কৌশলে এবং দূরদৃষ্টির সাথে ভূ-রাজনীতির এ কূটনীতিকে চালিয়ে যাচ্ছে। আজকাল পৃথিবীতে অর্থনীতিকে রাজনীতির মূল উপাদন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সে বিবেচনায় প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশের উদীয়মান অর্থনীতি এবং এ দেশের বিশাল ভোক্তা বাজার বিবেচনার বিষয়। এ জন্য ভারতও চায় বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকুক। বাংলাদেশের নীতিও তাই- সুসম্পর্ক বজায় থাকুক। অর্থনীতি, কূটনীতি এবং রাজনীতি- এ তিনটি উপাদান এখন ভূরাজনীতির প্রধান আলোচ্য। তাই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খুবই দক্ষতার সাথে বিষয়গুলিকে সমন্বয় করছে। যার কারণে ভারত, চীন, রাশিয়াসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের কোন টানাপোড়েন নেই। পত্রিকায় খবর বের হয়েছে যে, ভারত বাংলাদেশীদের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসার কথা ভাবছে। বাংলাদেশিদের জন্য ভারতে অন-অ্যারাইভাল ভিসার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা। মঙ্গলবার সচিবালয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন হাইকমিশনার। সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধা চালুর ব্যাপারে আলোচনা করা হবে। এদিকে, ভারতের নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশে অন-অ্যারাইভাল ভিসার বিষয়ে বিমানমন্ত্রী বলেন, ভারতের নাগরিকদের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অন্যদের সাথে আলোচনার পর সমন্বিত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি প্রণয় ভার্মার সঙ্গে বৈঠক করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। বৈঠক শেষে নৌপ্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ভিসা নিয়ে আমাদের কথা হয়েছে। যারা চিকিৎসা করতে যায় এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের সব ফর্মালিটি শেষ হয়। অন-অ্যারাইভাল ভিসা নিয়ে কথা বলেছি, এগুলো নিয়ে তারা কাজ করবে। এ বিষয়ে আমরা আরও ভালো সংবাদ পাব’। পৃথিবীর অনেক দেশেই অন-অ্যারাইভাল ভিসার প্রচলন রয়েছে। ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক এবং পরস্পরের স্বার্থের কথা বিবেচনায় আমরা মনে করি এই অন-অ্যারাইভাল ভিসার প্রচলন করা গেলে সেটি খুবই ফলপ্রসু হবে। কারণ প্রতিদিনই হাজার হাজার বাংলাদেশী ভারতে বিভিন্ন প্রয়োজনে ভ্রমণ করে। একইভাবে ভারতীয়রাও বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করে। চিকিৎসাসহ পড়াশোনা, ব্যবসা বাণিজ্যসহ হরেক রকমের কার্যাদির জন্য দুই দেশের নাগরিকদের আসা-যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এমনি বাস্তবতায় অন-অ্যারাইভাল ভিসা ভোগান্তি কমানোর একটি অন্যতম উদ্যোগ হতে পারে। ভারতের পক্ষ থেকে বিষয়টি ইতিবাচকভাবে ভাবা হচ্ছে বলে ভারতীয় হাই কমিশনার বলেছেন। একইভাবে ভারতের জন্যও একই ভিসা প্রদানের বিষয়টির ভাবা হচ্ছে। আমরা মনে করি দুই দেশ ইতিবাচকভাবেই এ বিষয়টি নিয়ে এগুতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশীদের জন্য ৩০টিরও বেশী দেশে অন-অ্যারাইভাল ভিসার সুবিধা রয়েছে। এছাড়াও এই অন-অ্যারাইভাল ভিসা প্রথা আরও অনেক দেশে রয়েছে। অন-অ্যারাইভাল ভিসা চালু হলে নিঃসন্দেহে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত বাড়বে এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিকসহ নানা ক্ষেত্রের সহযোগিতার ক্ষেত্রও উভয় দেশেই সম্প্রসারিত হবে। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে কোন দেশ এককভাবে এগিয়ে যেতে পারে না। তাই ছোট বড় নির্বিশেষে সকল দেশই অন্য দেশের সাথে সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণের মাধ্যমেই নিজদেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করে উন্নয়ন করতে চায়। এমনি অবস্থায় বাংলাদেশও নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণ করেই ভারতসহ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশ এবং বিশ্বের সকল দেশের সাথে সম্পর্কের আরও উন্নয়ন ঘটাতে পারবে সে প্রত্যাশা আমাদের রয়েছে।
আমরা মনে করি বাংলাদেশ-সুসম্পর্কেও উচ্চতার এ সুযোগে অন-অ্যারাইভেল ভিসার বিষয়টি আরও সহজ হওয়া দরকার। ভোগান্তি ছাড়াই যেনো তা সহজে ও দ্রুত কার্যকর হয়। একই সাথে আমাদের সীমান্ত স্থলবন্দর এবং বিশেষ করে বেনাপোলসহ অন্যান্য স্থানগুলো আধুনিকায়ন করা হোক।