জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে বক্তারা

স্টাফ রিপোর্টার ঃ উৎপাদন বন্ধকৃত রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকলের মধ্যে (খুলনার খালিশপুর ও দৌলতপুর জুটমিল, চট্টগ্রামের কেএফডি, আর আর এবং সিরাজগঞ্জের জাতীয় জুটমিল) ৫টি জুট মিলের শ্রমিকদের ২০১৫ সালের পয়লা জুলাইয়ের প্রাপ্য বকেয়া বেতন, করোনাকালীন ২ মাসের লকডাউনের টাকা প্রদান, ২ মাসের নোটিশ পে-এর টাকা প্রদান, খালিশপুর জুটমিলের শ্রমিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহার, নাম ভূলের শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত পাওনা সঠিক হিসাব অনুযায়ী পরিশোধের দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত খুলনার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশ চলাকালে খুলনা জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এসময় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কারখানা কমিটির সভাপতি ও সিবিএ সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মনির হোসেন মনি এবং সঞ্চালনা করেন কমিটির সদস্য ডালিম কাজী। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের সদস্য সচিব এস এ রশীদ, বাম গণতান্ত্রিক জোট খুলনা জেলা সমন্বয়ক মিজানুর রহমান বাবু, গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা সমন্বয়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ খুলনা জেলা সমম্বয়ক জনার্দন দত্ত নান্টু, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) খুলনা জেলা সভাপতি মোঃ মোজাম্মেল হক খান, সাধারণ সম্পাদক গাজী নওশের আলী, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ খুলনা জেলা সম্পাদক ডাঃ সমরেশ রায়, সদস্য মোস্তফা খালিদ খসরু, কাজী দেলোয়ার হোসেন, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি) খুলনা জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম চন্দন, শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য খুলনা জেলা সদস্য নিয়াজ মুর্শিদ দোলন, রিকশা-ইঞ্জিনচালিত রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদ খুলনা জেলা নেতা হারুন অর রশীদ, প্লাটিনাম জুটমিলের সাবেক সিবিএ নেতা মোঃ খলিলুর রহমান, কারখানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, দৌলতপুর জুটমিল কারখানা কমিটির উপদেষ্টা পান্নু মিয়া, সভাপতি নূর মোহাম্মদ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জেল হোসেন, যৌথ কারখানা কমিটির সহ-সভাপতি আবু বক্কার সিদ্দিক, খালিশপুর জুটমিল কারখানা কমিটির উপদেষ্টা শফিউদ্দীন, আবুল কালাম, সহ-সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাকিম, প্রচার সম্পাদক চাঁন মিয়া সর্দার, ক্রিসেন্ট জুটমিলের শ্রমিকনেতা মোশাররফ হোসেন, ছাত্র ফেডারেশন খুলনা মহানগর আহবায়ক আল আমিন শেখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বন্ধকৃত রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫ টি পাটকলের মধ্যে ৫টি জুট মিলের মধ্যে খালিশপুর ও দৌলতপুর জুট মিল খুলনা জেলায় অবস্থিত। পাটকল বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত এই ৫টি মিলের শ্রমিকেরা অপরাপর মিলের শ্রমিকদের মতো মজুরি কমিশনের সকল সুযোগ-সুবিধা পেয়ে এসেছে। কিন্তু আজ ১৮ মাসের অধিক সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও ৫টি মিলের শ্রমিকেরা বকেয়া পায়নি। শ্রমিকরা বঞ্চিত হয়েছে সরকার ঘোষিত ২ মাসের লকডাউনের টাকা ও দুই ঈদের বোনাসের টাকা থেকেও।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ২০০৯ সালের জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহারে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন দেশের কোন নাগরিক বেকার থাকবে না, প্রত্যেক ঘরে ঘরে চাকরি দেয়া হবে এবং নির্বাচিত হলে দেশের কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা বন্ধ থাকবে না। বন্ধ সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু করা হবে। অথচ ২০২০ সালের ৩০ জুন পাটকল বন্ধের পর থেকে গত এক বছরের অধিক সময় যাবৎ শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে। চলমান করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের পরিস্থিতি আরও অসহনীয় হয়ে উঠেছে। এই ৫টি মিলে প্রায় ১২ হাজার শ্রমিকের পরিবার সংবিধান স্বীকৃত নূন্যতম মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের সন্তানদের পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বৃদ্ধ পিতা-মাতা ও শিশু, গর্ভবতীদের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় সংগ্রামরত শ্রমিকদের পাওনা অবিলম্বে পরিশোধ করার বিকল্প কিছু নেই। একই সাথে লীজ বা ব্যক্তিমালিকানাধীন নয়, সকল মিল রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পুনরায় উৎপাদন চালু ও আধুনিকায়ন এবং সকল শ্রমিকদের পুনরায় চাকরিতে পূনর্বহাল করতে আহ্বান জানান বক্তারা।