আছে ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত
ইতিহাস সম্বলিত টেরাকোটার কারুকার্য

জি.এম মিজানুর রহমান ও এইচএম নাসির উদ্দিন ঃ শেখ হেলাল উদ্দিন ডিগ্রী কলেজ শহীদ মিনারটি শুধু বাগেরহাটের সর্ববৃহৎ শহীদ মিনার নয়, এটি এক অনন্য ও বিচিত্র শৈল্পিক নিদর্শন। কলেজ পরিদর্শনে আগত জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মনোমুগ্ধকর এই শহীদ মিনারটি। ভাষার মমত্ব আর দেশের প্রেমত্বের নিদর্শন স্বরূপ এটি নির্মিত হয়েছে।
“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি-আমি কি ভুলিতে পারি”-বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক আব্দুল গাফফার চৌধুরীর ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে রচিত ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সম্বলিত গান বাংলার মানুষের এক রক্ত ভেজা মমত্বের গান। বাংলার মানুষের কথা বলার ইতিহাস বিশ্বের এক অনন্য নজির। তাইতো এই বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের মমত্ব ও প্রেম অনন্ত। ভাষা নিয়ে একমাত্র বাঙালীরাই গর্ব করতে পারে। এই ভাষা শহীদদের স্মরণে আমরা পালন করি শহীদ দিবস। তাই শহীদ মিনার বাংলার অস্তিত্ব। সালাম, জব্বার, রফিক, বরকতসহ অসংখ্য ভাষা শহীদদের স্মৃতি সম্বলিত এই শহীদ মিনার। মন, আত্মা, ভালবাসা আর শ্রদ্ধা দিয়েই আমরা এই দিবসটি পালন করি। বাংলার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্মিত হয়েছে স্মৃতি ও ইতিহাস সম্বলিত শহীদ মিনার। বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলাধীন শেখ হেলাল উদ্দিন ডিগ্রী কলেজের শহীদ মিনারটিকে আরও স্মৃতি ও ইতিহাস সম্বলিত করতে কলেজ কর্তৃপক্ষের এক অনন্য শৈল্পিক নৈপূণ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন।
সূত্রটি জানায়, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত ভাষা দিবস বাঙালীর গর্ব। শহীদ দিবসের গুরুত্ব বাঙালীর চেতনায় রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে আছে। তাই বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মতো ফকিরহাট উপজেলার শেখ হেলাল উদ্দিন ডিগ্রী কলেজে ভাষা দিবসটি পালিত হচ্ছে। দিবসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য আরও সুদৃঢ় আর অন্যবদ্য করতে কলেজের শহীদ মিনারটিকে আকর্ষণীয় ও মোহনীয়ভাবে তৈরি করা হয়েছে। কলেজ প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পর ২০১৯ সালের ৮ জানুয়ারী বাগেরহাট ০১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন বাগেরহাটের সর্ববৃহৎ ও অনন্য এই শহীদ মিনারটির উদ্বোধন করেন।
সূত্রটি আরও জানায়, বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দীন-এর পৃষ্ঠপোষকতায় তারই নামে প্রতিষ্ঠিত শেখ হেলাল উদ্দিন ডিগ্রী কলেজ ফকিরহাট উপজেলার উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম একটি নাম। উপজেলার শেষ প্রান্তে অথাৎ শুভদিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত শেখ হেলাল উদ্দীন ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়টি ২০০০সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ফকিরহাট উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি স্বপন দাশ-এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবং সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দীন-এর পৃষ্ঠপোষকতায় কলেজটির বিভিন্ন স্থাপনা আজ দর্শনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহীদ মিনার এসব দর্শনীয় স্থাপনার মধ্যে অন্যতম। কলেজ প্রাঙ্গণে ত্রিশ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সদ্য নির্মিত হয়েছে শহীদ মিনারটি। শহীদ মিনারে রয়েছে ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ইতিহাস সম্বলিত টেরাকোটার কারুকার্য। শহীদ মিনারটি নির্মিত বেদির দৈর্ঘ্য ৫৫ ফুট এবং প্রস্থ ৪০ ফুট। শহীদ মিনারটির উচ্চতা ২৫ ফুট। বাগেরহাটের সর্ববৃহৎ শহীদ মিনার হিসাবে দাবি করে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। এই কলেজটিতে পরিদর্শনে এসে শহীদ মিনার দেখে বিমোহিত হয়েছেন অনেক জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, জলবায়ু ও পরিবেশ বিষয়ক উপমন্ত্রী হাবিবুন্নাহার, বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, খুলনা অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর হারুন-অর রশীদ, বাগেরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগৈর সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামরুজ্জামান টুকু, বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মো: মামুনুর রশীদ, বাগেরহাট পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায়, জেলা প্রশাসক পতœী ফারজানা আফরোজ, উপ-পরিচালক-স্থানীয় সরকার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দেব প্রসাদ পাল, ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা: শাহানাজ পারভীন, বাগেরহাট জেলা শিক্ষা অফিসার মো: কামরুজ্জামান প্রমুখ পরিদর্শনে এসে শহীদ মিনারের প্রশংসা করেছেন।
কলেজের অধ্যক্ষ বটু গোপাল কলেজ প্রাঙ্গণে সদ্য নির্মিত শহীদ মিনারটিকে বাগেরহাটের সর্ববৃহৎ দাবি করে জানান, গত ৮ জানুয়ারী’১৮ বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন এই শহীদ মিনারটির উদ্বোধন করেন। গত বছরই এই নির্মিত শহীদ মিনারে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। নতুন শহীদ মিনারটি নির্মিত হবার পর ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানগুলি অধিকতর অড়ম্বরপূর্ণভাবে হয়। বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ এই কলেজ পরিদর্শনে এসে শহীদ মিনারটি দেখে আত্মতৃপ্তি পান।
কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বপন দাশ জানান, এই এলাকাটি ছিল একটি অন্ধকারচ্ছন্ন জনপদ। এই কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ অঞ্চলে আলো জ¦লতে শুরু করেছে। যাদের কারণে আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারছি। কথা বলে আতœতৃপ্তি পাচ্ছি। তাদের নাম ও অবদান শুধুমাত্র স্থাপনার মধ্যে নয়, মনের কুঠারে স্থান দিতে হবে।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মো: মামুনুর রশীদ জানান, তিনি কলেজটি পরিদর্শন করেছেন । তিনি কলেজটির টেরাকোটা শহীদ মিনার ও ক্যাম্পাসের প্রশংসা করেন। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এ ধরনের স্থাপনা প্রশংসার দাবি রাখে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, খুলনা অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর হারুন-অর রশীদ জানান, তিনি কলেজটিতে আকস্মিক পরিদশন করেছিলেন। কলেজটির পারিপাশির্^ক পরিবেশ, কলেজ ক্যাম্পাস, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, একাডেমিক ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম তাকে মুগ্ধ করেছে। তবে কলেজটির শহীদ মিনারটি অসাধারণ শৈল্পিক স্থাপনা। এটি নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভাষার ইতিহাস জানতে উদ্বুদ্ধ করবে।