গত বাজেটে শিক্ষাখাতে যে বরাদ্দ ছিল, এবারের বাজেটে তার থেকে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। তবে কোভিডে শিক্ষাখাতে যে বিপর্যয় হয়েছে, সেটি কাটিয়ে উঠতে প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়ানো উচিত ছিল মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও শিক্ষাবিদ আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি শিক্ষাখাতে বাজেট আরও বেশি বাড়ানো উচিত ছিল। প্রস্তাবিত বাজেটে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। কোভিডের কারণে সরকারের অর্থনীতির একটা সীমাবদ্ধতা আছে। তারপরও কোভিডে গত দুই বছরে শিক্ষাখাতে যে বিপর্যয় হয়েছে, তাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানো উচিত ছিল।’

জাতীয় সংসদে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষাখাতে টাকার অংকে মোট বরাদ্দ বেড়েছে। চলতি অর্থ বছরের তুলনায় আসন্ন অর্থ বছরে মোট ৯ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই দুই মন্ত্রণালয়ের জন্য আসন্ন অর্থ বছরে মোট ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা চলতি বছরের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ৭১ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা।

‘শিক্ষাখাতে বাজেট মোটেও পর্যাপ্ত নয়’‘শিক্ষাখাতে বাজেট মোটেও পর্যাপ্ত নয়’
বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩১ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

মাধ্যমিকের চেয়ে প্রাথমিকে বরাদ্দ অনেকগুণ বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে শিক্ষাবিদ আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘প্রাথমিক খাতের সঙ্গে যদি মাধ্যমিক খাতের তুলনা করি-তাহলে প্রাথমিক খাতে বরাদ্দ আরও অনেকগুণ বাড়ানো দরকার ছিল।’

বঙ্গবন্ধুর সময়কার শিক্ষা কমিশনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষাখাতকে পুনর্বিন্যস্ত করতে চেয়েছিলেন। সেখানে কুদরত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশনের একটা প্রস্তাব ছিল-প্রজাতন্ত্রের বাজেটের ৬৫ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষাখাতে রাখতে হবে। ২০ শতাংশ মাধ্যমিক খাতে আর ১৫ শতাংশ যাবে উচ্চ শিক্ষাখাতে। এবার আমরা দেখলাম মাধ্যমিকে প্রাথমিকের চেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি মাধ্যমিকের চেয়ে প্রাথমিকে বরাদ্দ বাড়ানো উচিত ছিল।’শিক্ষাকে আরও বেশি যুগোপযোগী করে তুলতে প্রাথমিক শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে বলে মনে করেন এই শিক্ষাবিদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য বলেন, ‘গত বাজেটে বৃত্তিমূলক বা কারিগরি শিক্ষাখাতে ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ ছিল। এবারও সেইরকম রাখা হয়েছে। বৃত্তিমূলক শিক্ষার খাতে যদি বরাদ্দ বাড়ানো না হয়-তাহলে আমাদের দেশের যেসব শ্রমিকদের বিদেশে পাঠানো হয়, তাদের আয় কিন্তু একই রকম থেকে যাবে। বৃত্তিমূলক-কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হলে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষাখাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেটার মধ্যে সামঞ্জস্য করা এবং খাতওয়ারি কম-বেশি করা দরকার।’

তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিখাতে ৩ লাখ টাকা আয়করমুক্ত রাখা হয়েছে। গত বাজেটেও তাই ছিল, এটা অপরিবর্তিত থাকাটা সমীচীন হয়নি। কারণ কোভিড ও নানা কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম যেভাবে বেড়ে গেছে, মানুষের আয় যদি বেড়েও থাকে, তাতে মানুষের জীবনযাত্রা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৩ লাখ টাকা নয়, কমপক্ষে ৬ লাখ টাকা করমুক্ত রাখা সমীচীন হবে বলে মনে করি।’

বাজেটকে ইতিবাচক উল্লেখ করে আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘সরকারের সার্বিক সীমাবদ্ধতা ও উন্নয়ন প্রকল্প হিসাব করলে এবারের বাজেট ইতিবাচক। তবে আমি মনে করি খাতওয়ারি বরাদ্দ কিছু কমবেশি করার সুযোগ এখনো রয়েছে। সংসদ সদস্যরা যখন বাজেটের ওপর আলোচনা করবেন, তখন যেন এই বিষয়গুলো গুরুত্ব পায় সেটাই আমার প্রত্যাশা।’