অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আওতাধীন পরিচালিত করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের জন্য অবশেষে স্থাপিত হলো সেন্ট্রাল লিকুইড অক্সিজেন প্লান্ট। পাইপ লাইনসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করে ওই প্লান্ট দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করা যাবে সপ্তাহখানেক পর। এছাড়া ভ্যাকুম রুম স্থাপন করে অক্সিজেন সরবাহের পরিপূর্ণতা পেতে সময় লাগবে আরও অন্তত: দুই মাস। খুমেক হাসপাতালের সাথে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এমনটাই আভাস দিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আর একটি প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর(এইচইডি) ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে এ প্লান্টটি স্থাপন করছে।
এদিকে, ঢাকা বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টার অস্থায়ী গ্রীড হাসপাতাল থেকে আনা ওই লিকুইড অক্সিজেন প্লান্টটি স্থাপন নিয়ে দীর্ঘ প্রায় তিন মাস ধরে পত্র চালাচালির পর অবশেষে স্থাপন হওয়ায় স্বস্তি ফিরে এসেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে। কোম্পানীর পক্ষ থেকে সরবরাহ নিশ্চিত করা হলে এখন থেকে অন্তত: অক্সিজেনের অভাবে রোগীদের আর ভোগান্তিতে পড়তে হবে না। করোনা রোগীদের পাশাপাশি অন্যান্য রোগীদের মধ্যেও যাদের অক্সিজেনের প্রয়োজন রয়েছে তাদেরকে নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ করা যাবে এ প্লান্টের মাধ্যমে। এ নিয়ে খুমেক হাসপাতালে দু’টি সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট হলো। যা দিয়ে পুরো হাসপাতালের প্রতিটি বেডের সাথেই অক্সিজেন পাইপ স্থাপন করা সম্ভব হবে। ১০ হাজার লিটার করে দু’টি প্লান্ট দিয়েই হাসপাতালে যাতে অক্সিজেন সরবরাহ করা যায় সে ব্যবস্থা করা হবে উল্লেখ করে হাসপাতালের পরিচালক ডা: মো: রবিউল হাসান বলেন, এর ফলে একটি প্লান্ট কোন কারনে বন্ধ হলে অন্যটি দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করা যাবে। সুতরাং এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
খুমেক হাসপাতালের করোনা প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সার্বিক সমন্বয়কারী ও খুলন মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজ বলেন, এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি খুলনাবাসী কৃতজ্ঞ। কেননা তার চেষ্টায়ই বসুন্ধরা থেকে স্পেক্ট্রা কোম্পানীর এ প্লান্টটি এখানে আনা হয়েছে। তবে শত চেষ্টার পরও যে প্লান্টটি বসানো হয়েছে এজন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের তিনি ধন্যবাদ জানান। অবশ্য প্লান্টটি বসাতে দেরি হওয়ায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর সাথে সাথেই তারা বিকল্প পাইপ লাইনের মাধ্যমে হাসপাতালের আগের প্লান্টটি থেকে অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক রেখেছেন বলেও তিনি জানান। এ প্লান্টটি খুমেক হাসপাতালের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী সম্পদ হয়ে থাকলো বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
খুমেক হাসপাতাল এবং করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ ডা: দিলীপ কুমার কুন্ডু বলেন, এ প্লান্টটি বসানোর ফলে সিলিন্ডার অক্সিজেনের খুব বেশি প্রয়োজন হবে না। কেননা এখন ১০ হাজার লিটারের দু’টি সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট থেকে রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ করা যাবে। যেহেতু এ প্লান্টে যে অক্সিজেন থাকে তা’ লিকুইড ফর্মে থাকে। আর রোগীদের কাছে সরবরাহ করা হয় অক্সিজেন ফর্মে। অর্থাৎ এখানের এক লিটার অক্সিজেন মানে ৮৩৮ লিটার।
অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন হলেও পাইপ লাইন সংযোগ দিতে এখনও সপ্তাহ খানেক সময় লাগবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর পরেও ভ্যাকুম রুম স্থাপনের কাজ চলছে। সেটি হতে আরও অন্তত: দু’মাস সময় লাগবে। তবে পাইপ লাইন হলেই অক্সিজেন সরবরাহ করা যাবে। আর ভ্যাকুম রুম হলে অক্সিজেন প্লান্টটি পূর্ণাঙ্গতা পাবে।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর(এইচইডি) খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আশুতোষ কর্মকার বলেন, এইচইডির প্রধান কার্যালয়ের মাধ্যমে প্লান্টটি বসানো হচ্ছে। তবে এজন্য সর্বমোট ৯৭ লাখ টাক খরচ হচ্ছে। এর মধ্যে ভ্যাকুম রুমের জন্যই লাগবে ৪০ লাখ টাকার মতো। বাকী টাকা প্লান্ট ও পাইপ লাইন স্থাপন বাবদ খরচ হবে। আগামী দুই মাসের মধ্যে ভ্যাকুম রুমের কাজ সম্পন্ন করে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্টটিকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়া যাবে বলেও তিনি জানান। এইচইডির কাজ শুধুমাত্র প্লান্টটি স্থাপন করে দেয়া। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্পেক্ট্রা কোম্পানী থেকে নিয়ম অনুযায়ী অক্সিজেন কিনে সরবরাহ করবেন।
খুলনা ১৩০ শয্যা বিশিষ্ট করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের মুখপাত্র ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, নতুন এ প্লান্টটি স্থাপন হলে রোগীদের আর অক্সিজেন সংকট থাকবে না। এটি এ হাসপাতালের জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। তাছাড়া যখন করোনা হাসপাতালের প্রয়োজন হবে না তখন খুমেক হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ ভবনের জন্যও এ প্লান্টটি প্রয়োজন হবে। যে কারণে এটি হাসপাতালের জন্য একটি বড় সম্পদ।
উল্লেখ্য, বসুন্ধরা থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্পেক্ট্রা কোম্পানীর এ প্লান্টটি এনে হাসপাতাল অভ্যন্তরে দীর্ঘদিন ফেলে রাখা হয়। এটি স্থাপনের জন্য এইচইডি থেকে ৯৭ লাখ টাকার প্রস্তাব দেয়। যেটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় মার্চ মাসে। পরে মন্ত্রণালয় থেকে আবারো সেটি পাঠানো হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। এভাবে কয়েক দফায় পত্র চালাচালির পর শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিজস্ব অর্থায়নে এটি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হলে গত সপ্তাহ থেকে স্থাপন কাজ শুরু হয়। বর্তমানে প্লান্টের ট্যাংকি বসানো হলেও এর চারপাশে বাউন্ডারী এবং পাইপ লাইন স্থাপন কাজ চলমান রয়েছে। চলছে পাশর্^বর্তী স্থানে ভ্যাকুম রুম স্থাপনের কাজও।