টিআইবি’র জরিপ
ফলাফল প্রকাশ

স্টাফ রিপোর্টার ঃ খুলনা জেনারেল হাসপাতালের কোভিড-১৯ টিকাদানকেন্দ্রে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী টিকা প্রদান করলেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অবস্থা ভালো ছিল না বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-টিআইবি’র এক জরিপে উঠে এসেছে। এছাড়া ওই হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রে তথ্য ও পরামর্শ প্রদান সংক্রান্ত ডেস্ক থাকলেও টিকা সংক্রান্ত কোন দিক-নির্দেশনা চিহ্ন ছিল না বলেও জরিপের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি সেখানকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দেখা যায়, একই পাত্রে সকল ধরনের বর্জ্য ফেলা হয়। এমন নানা সংকটের কথা তুলে ধরা হয় জরিপ প্রতিবেদনে।
গত বছর ১২ থেকে ১৪ ডিসেম্বর টিআইবি’র জরিপটি পরিচালিত হয়। যার ফলাফল গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়।
নগরীর স্কুল হেলথ্ ক্লিনিকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভার মাধ্যমে এটি প্রকাশ করা হয়। টিআইবি’র অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি(সনাক) খুলনার উদ্যোগে এ জরিপ কার্য পরিচালিত হয়।
এদিকে, সভায় উপস্থিত থেকে জরিপের তথ্যের সাথে সরাসরি বিরোধিতা করেন খুলনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার(আরএমও) ডা: এসএম মুরাদ হোসেন।
যদিও জরিপ প্রতিবেদনের অধিকাংশ জায়গায়ই টিকাদান কেন্দ্র সম্পর্কে তথ্য দাতাদের পক্ষ থেকে ইতিবাচক মন্তব্য করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, টিকা নিবন্ধনের ১৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ এসএমএস পেয়েছেন। তবে অল্পকিছু সেবাগ্রহীতা বলেছেন, তারা নিবন্ধনের ৬০ দিনের মধ্যে এসএমএস পান। দ্বিতীয় ডোজ টিকার ক্ষেত্রে অধিকাংশই ৩০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে এসএমএস পেয়েছেন। তবে ৯০ দিনের মধ্যে এসএমএস পান এমন মানুষের সংখ্যা তিন দশমিক ৭৭ শতাংশ। যদিও এটি খন্ডন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেন, মডার্না টিকার ক্ষেত্রে এমনটি হতে পারে।
টিকা নিতে গিয়ে শতকরা ৬৫ দশমিক ১২ শতাংশ মানুষের অর্থ খরচ হয়েছে এবং যাতায়াত ও টিকার কাগজপত্র প্রিন্ট করতেও অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে বলেও জরিপে উঠে এসেছে। তবে ওই কেন্দ্রের ৯৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ তথ্যদাতা বলেছেন, তারা কোন অব্যবস্থাপনার মুখোমুখি হননি। যে দুই দশমিক ৩৩ শতাংশ মানুষ অব্যবস্থাপনার কথা জানিয়েছেন তার মধ্যে টিকা কেন্দ্রে অপর্যাপ্ত বুথ ও কর্মী স্বল্পতা, বসার অপর্যাপ্ত স্থান, দীর্ঘ সিরিয়াল এবং সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণের কোন ব্যবস্থা না থাকা, টিকার পাশর্^ প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষনের ব্যবস্থা না থাকা, ও সামাজিক দূরত্ব না মানার বিষয়টি উল্লেখযোগ্য বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। টিকা গ্রহনের ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির শিকার হননি বলেও উত্তরদাতারা জানিয়েছেন বলে সভায় উল্লেখ করা হয়।
জরিপ প্রতিবেদনে অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎসের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে টিকা গ্রহণ সংক্রান্ত তথ্য প্রচারের ব্যবস্থা আরও জোরদার করা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাপনাসহ নারীদের জন্য পৃথক অপেক্ষমান কক্ষের ব্যবস্থা রাখা, টিকাদান কেন্দ্র স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে খোলা এবং বন্ধ রাখাসহ ১২দফা সুপারিশমালা তুলে ধরা হয়।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: মো: মনজুরুল মুরশিদ বলেন, জরিপে যেসব সুপারিশ করা হয় সেগুলো মূল্যায়নের চেষ্টা করা হবে। তবে কোভিডকালীন সময়ে অনেক ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব ছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সবচেয়ে বড় যে সংকটটি ছিল সেটি হচ্ছে স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় ভ্যাকসিনেশনের বিষয়টি ব্যবস্থা করতে বলা। এতে স্বেচ্ছাসেবীদের অনেক সময় সংকটের মধ্যদিয়ে চলতে হয়েছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িতদেরও বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। এজন্য তিনি আগামীতে সমন্বয়ের জায়গাগুলোতে আরও নজর দেয়ার আহবান জানান।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা: সুজাত আহমেদের সভাপতিত্বে এবং খুলনা সনাকের সহ-সভাপতি নাসরিন হায়দারের সঞ্চালনায় এসময় স্বাগত বক্তৃতা করেন, সনাকের স্বাস্থ্য উপ-কমিটির সমন্বয়ক ডা: আশরাফুজ্জামান এবং শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন, খুলনা সনাকের সভাপতি মনোয়ারা বেগম। জরিপ প্রতিবেদনের সার সংক্ষেপ তুলে ধরেন খুলনা টিআইবির ক্লাষ্টার কোঅর্ডিনেটর-সিই মো: ফিরোজ উদ্দীন।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন, ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও প:প: কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ শেখ সূফিয়ান রুস্তুম, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ স্বপন কুমার হালদার, খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র পরিচালক মোঃ মোফিদুল ইসলাম টুটুল, কেসিসির প্যানেল মেয়র আলী আকবর টিপু, বেসরকারি সংস্থা রূপান্তরের নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার গুহ, শিক্ষক মো: মাহবুবুর রহমান, দলিত’র ইশরাত জাহান মুমু, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মনির প্রমুখ। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, স্বাস্থ্যকর্মী, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, কমিউনিটিভিত্তিক সংগঠনের প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিগণ এবং সনাক, স্বজন ও ইয়েস সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।