এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সড়ক
অবরোধ, অবশেষে প্রত্যাহার

স্টাফ রিপোর্টার ঃ মায়ের চিকিৎসার জন্য নগরীর দৌলতপুর থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে আসামী হতে হলো দুই ছেলেকে। মায়ের মৃত্যুর জন্য চিকিৎসকদের অবহেলার কথা বলতে গিয়ে কয়েক ঘন্টার জন্য থানায় আটকও থাকতে হয় তাদের। পরে জনরোষের মুখে পড়ে পুলিশ তাদেরকে ছেড়ে দিলেও রাতে ডাক্তারদের পক্ষ থেকে দায়েরকৃত মামলায় তাদেরকে আসামী করা হয়। অর্থাৎ মায়ের লাশ দাফন দিয়েও শোক প্রকাশের সুযোগ না পেয়ে পালিতে বেড়াতে হবে এটিই নিয়তি।
এ চিত্র খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। নগরীর দৌলতপুর থানাধীন পিয়ারুন বেগম নামের এক নারীকে শুক্রবার ওই হাসপাতালে ভর্তির পর হাসপাতালের সার্জারী ইউনিট-২এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার দিবাগত রাতে তার মৃত্যু হয়। এসময় রোগীর ছেলেরা ডাক্তারদের অবহেলার অভিযোগ এনে ডিউটিরত ইন্টার্নী চিকিৎসকদের কাছে গিয়ে জানতে চেয়েছিলেন, তার মায়ের কাছে ডাক্তারদের ডাকা হলেও কেন গেলেন না ? আর তখনই বিপত্তিটি ঘটে। ডাক্তারদের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হবে কেন এমনটি নিয়েই দু’পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে লাশ আটকে দেয়ার পাশাপাশি পুলিশ ডেকে রোগী দু’ছেলে যথাক্রমে মো: তরিকুল ইসলাম কাবির ও সাদ্দাম হোসেনকে কেএমপির সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
এদিকে, লাশ আটকে রাখার পাশাপাশি দুই ছেলেকে পুলিশে দেয়ার প্রতিবাদে গতকাল দুপুরে নগরীর নতুন রাস্তা মোড়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়। পরে পুলিশ ওই দু’ছেলেকে ছেড়ে দেয়ার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়। এরপর হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে দাফন করা হলেও রাতে তাদের নামে মামলা হয়।
সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মো: মমতাজুল হক বলেন, খুমেক হাসপাতালের ইন্টার্নী চিকিৎসকদের ওপর হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় গতরাতে মামলা হয়েছে। এখন তদন্ত অনুযায়ী প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অপরদিকে, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ প্রিন্স বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসকরা মৃত্যুবরণকারী নারীর দুই ছেলেকে আটক রেখে পুলিশে সোপার্দ করার প্রতিবাদে এলাকাবাসী বিকেলে নতুন রাস্তায় সড়ক অবরোধ করে রাখে। রমজানে যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে আধাঘণ্টা পর সড়ক ছেড়ে দেয় তারা। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে আটক দুই ভাইকে ছেড়ে দেয়া হয়।
খুলনা মহানগর ইসলামী আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শেখ নাসির উদ্দীন বলেন, মায়ের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাক-বিতন্ডা ও মারামারির ঘটনায় ইসলামী আন্দোলনের সাবেক নগর প্রচার সম্পাদক মো. তারিকুল ইসলাম কাবির ও তার ভাইকে আটকে রেখে পুলিশে দেন চিকিৎসকরা। এ ঘটনায় স্থানীয়রা নতুন রাস্তায় বিকেল তিনটা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত আধাঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে সড়ক অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
নগর ইসলামী আন্দোলনের বিবৃতি ঃ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা মহানগর কমিটির সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং দৌলতপুর থানা শাখার সাবেক সভাপতি মোঃ তরিকুল ইসলাম কাবির এর মাতার ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা এবং মরহুমার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিবৃতি দিয়েছেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা মহানগর সভাপতি আলহাজ্ব মুফতী আমানুল্লাহ, নগর সেক্রেটারী শেখ মোঃ নাসির উদ্দিন, নগর সহ সভাপতি মাওঃ মোজাফ্ফার হোসাইন, মুফতী মাহবুবুর রহমান, জয়েন্ট সেক্রেটারী মাওঃ ইমরান হোসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওঃ দ্বীন ইসলাম, মোঃ সাইফুল ইসলাম, প্রচার ও দাওয়াহ্ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান, গাজী ফেরদাউস সুমন, মাওঃ আব্বাস আমিন, মোঃ মঈন উদ্দিন ভূইয়া, আলহাজ্ব মোঃ মোমিনুল ইসলাম, মোল্লা রবিউল ইসলাম তুষার, মুফতী আমিরুল ইসলাম, এইচএম খালিদ সাইফুল্লাহ, মাওঃ হাফিজুর রহমান, মাওঃ শায়খুল ইসলাম বিন হাসান, এ্যাডভোকেট মোঃ কামাল হোসেন, আলহাজ্ব মোঃ আমজাদ হোসেন, আলহাজ্ব হাফেজ আব্দুল লতিফ, আলহাজ্ব আবু তাহের, মুক্তিযোদ্ধা জিএম কিবরিয়া, আলহাজ্ব সরোয়ার হোসেন বন্দ, আলহাজ্ব আব্দুস সালাম, নির্বাহী সদস্য শেখ হাসান ওবায়দুল করীম, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে বলেন, মৃত ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে খুলনা মেডিকেলে যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে তা সাধারণ নাগরিক হিসেবে কখনোই কাম্য নয় এ সকল ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং সাথে সাথে ডিউটিরত ডাক্তারদের আচরণ আরো সংযত ও সেবা সুন্দর হওয়ার প্রয়োজন।
মরহুমের জানাজার নামাজ রবিবার বাদ মাগরিব দৌলতপুর পাবলা সবুজ সংঘ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা মহানগর ও জেলার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।