জ্বালানি পরিবহনে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা পর্যন্ত ২৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করছেন কর্মীরা। জ্বালানি পরিবহনে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা পর্যন্ত ২৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করছেন কর্মীরা। ঢাকায় জ্বালানি তেলের সরবরাহ নির্বিঘœ করতে চট্টগ্রাম থেকে পাইপলাইন স্থাপনের কাজ ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী বছরের ডিসেম্বরে এই পাইপলাইন দিয়ে তেল ঢাকায় পাঠানো যাবে বলে আশা করছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। যদিও প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফা বাড়ায় এর ব্যয় বেড়েছে ৮০০ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল আসে নদী ও সড়কপথে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মাঝেমধ্যেই তেল পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া নদী ও সড়কপথে তেল পরিবহনের কারণে খরচ যেমন বেশি, তেমনি তেল চুরির অভিযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে শুষ্ক মৌসুমে নৌপথে নাব্যতা কমে যাওয়ায় তেল পরিবহন করাও কঠিন হয়ে পড়ে। এসব সংকট নিরসনেই ২০১৮ সালের অক্টোবরে ২ হাজার ৮৬১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম হতে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন’ নামে প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এ প্রকল্পের অধীনে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা পর্যন্ত ২৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। জ্বালানি তেল পরিবহনে পাইপলাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, জ্বালানি পরিবহনে সংকট নিরসনে পাইপলাইন স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। তখন চট্টগ্রাম থেকে গাজীপুর পাইপলাইন স্থাপনের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে এই প্রকল্প তখন বাস্তবায়ন হয়নি। পরে ২০১৫ সালে ক্ষমতাসীন সরকারের আমলেই ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয় এবং সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। এরপর ২০১৮ সালে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, নির্মাণকাজের তত্ত্বাবধানে রয়েছে সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা গুপ্তখাল থেকে ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ হয়ে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল পর্যন্ত স্থাপন করা হচ্ছে পাইপলাইন। এ পর্যন্ত পাইপলাইনের দৈর্ঘ্য ২৪১ দশমিক ২৮ কিলোমিটার পাইপলাইন। পতেঙ্গা থেকে গোদনাইল পর্যন্ত ভূগর্ভে স্থাপন করা এসব পাইপলাইনের ব্যাস ১৬ ইঞ্চি। আবার নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে ৮ দশমিক ২৯ কিলোমিটার পাইপলাইন। এই এলাকায় পাইপলাইনের ব্যাস থাকছে ১০ ইঞ্চি। পতেঙ্গা থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত পাইপলাইন যাচ্ছে ২২টি নদীর তলদেশ ছুঁয়ে। এ প্রকল্পের ২৫০ কিলোমিটার পাইপলাইনের মধ্যে ২৩২ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। চট্টগ্রাম এবং ফেনী অংশে ১৮ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানোর কাজ বাকি। তবে চলতি বছরের ডিসেম্বরেই এই কাজ শেষ হবে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ ছাড়া ৯টি স্টেশন নির্মাণের ৮০ শতাংশ কাজও শেষ হয়েছে। পাশাপাশি ৪টি পাম্প হাউস বসানোর কাজ চলছে। আর কুমিল্লার বরুড়ায় ২১ হাজার টনের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন নতুন একটি ডিপো স্থাপন করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রকল্পের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। ২০১৮ সালে হাতে নেওয়া এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২-এর ডিসেম্বরে। তবে এই সময়ে কাজ শেষ হয়নি। দুই দফায় মেয়াদ বাড়ায় প্রায় ৮০০ কোটি টাকা খরচ বেড়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, পাইপলাইন স্থাপনের পর বছরে ২৭ থেকে ৩০ লাখ টন জ্বালানি তেল পরিবহন করা সম্ভব হবে, যা পর্যায়ক্রমে ৫০ লাখ টন পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। বাংলাদেশের শিল্পায়নের যে প্রবৃদ্ধির হার তাতে জ্বালানী নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিশেষ করে আমাদের জ্বালানীর প্রায় পুরোটাই আসে জীবাষ্ম জ্বালানী থেকে যার মজুদ বিশ্বব্যাপীই কমে আসছে। আর বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিমাণও প্রায় শেষের দিকে। নতুন কোন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়েও বাংলাদেশের কাছে ভাল সংবাদ নেই। তাই আমদানীকৃত তেল এবং গ্যাসই নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশে প্রধান উৎস। যদিও সরকার বায়ু শক্তি, সৌরশক্তিসহ হাইড্রোলোজিক্যাল পাওয়ার ও অন্যান্য নানা উৎস হতে জ্বালানী সংগ্রহের সম্ভাব্য প্রাপ্রিতা নিয়ে চিন্তা করছে। আমরা মনে করি শুধু ঢাকা- চট্টগ্রাম নয় পর্যায়ক্রমে সারাদেশের সাথেই বিশেষ করে শিল্পপ্রধান শহরগুলোর সাথে পাইপলাইনে জ্বালানী পৌছানোর নেটওয়ার্ক চালু করতে হবে। ভবিষত্যের শিল্পায়নের প্রাক্কলন এবং বিনিয়োগের প্রক্ষেপণ বিবেচনায় এমন পরিকল্পনা এখনই গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি আহবান জ্বানাচ্ছি। একইভাবে যে প্রকল্পটির কাজ শেষের দিকে সেটি যেন সঠিক সময়ে শেষ হয়ে দ্রুতই উৎপাদনে যেতে পারে সে উদ্যোগ নেয়ার জন্য আবহান জানাচ্ছি সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি। আমরা মনে করি, দেশে জ্বালানী তেল পরিবহন অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং দাহ্য পদার্থও বটে। জ্বালানি তেলের সরবরাহ কোনো কারণে ব্যাহত হলে পুরো দেশের অর্থনৈতিক ও যোগাযোগের ওপর সরসরি প্রভাব পড়ে। বর্তমান সরকার পাইপ লাইনে তেল সরবরাহে যে প্রকল্প নিয়েছে তা অত্যন্ত সময়োপযোগী। এ প্রকল্পের কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন করা জরুরি।