==দেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচীর উদ্বোধনের পর থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করবে সরকার। বহু প্রতীক্ষিত এ ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহ বাড়ছে জনমনেও। টিকাদান কার্যক্রমের খবরে অর্থনীতিতেও প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। করোনার দুর্যোগের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন অর্থনীতি নিয়ে গভীর চিন্তিত, তখন বাংলাদেশ অধিকাংশ সূচকে ভাল করেছে। সঙ্কটের মধ্যেই স্বস্তি ফিরেছে অর্থনীতিতে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফিরে আসায় চলতি বছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) উচ্চ প্রবৃদ্ধি আশা করেছেন অনেকেই। তবে ঘুরে দাঁড়ানো অর্থনীতিতে বিশ্বজুড়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে শঙ্কা থাকলেও ভ্যাকসিন প্রয়োগে সম্ভাবনাই দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। জানা গেছে, গত ২৭ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি করোনা ভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন। প্রথম দিন ২৬ জনকে টিকা দেয়া হয়। পরের দিন ঢাকার পাঁচ হাসপাতালে আরও ৫৪১ জনকে এই টিকা দেয়া হয়। দেশে করোনার টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হিসেবে মন্ত্রী, সাংসদ, সচিব, অর্থনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার গুরুত্বপূর্ণ (ভিআইপি) ব্যক্তিরাও টিকা নিয়েছেন। চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি সাগ্রহে টিকা নিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, হাসপাতাল প্রধান। এমনকি টিকা নিতে দ্বিধা করেননি চিকিৎসক দম্পতি, প্রবীণ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও। গত দু’দিনে পাঁচ ভিআইপিসহ মোট ৫৬৭ জন অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকা ‘কভিডশিল্ড’ নিয়েছেন। এ পর্যন্ত সবাইকে উপহারের টিকা থেকে দেয়া হয়েছে। শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থানে টিকা পাঠানো শুরু হয়েছে। এরপর আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে টিকা দেয়া কার্যক্রম শুরু করবে সরকার। করোনা মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ নজরুল ইসলাম বলেন, বড় ব্যক্তিরা টিকা নেয়ায় সাধারণ মানুষ টিকা নিতে নতুন করে অনুপ্রেরণা পাবে। মানুষের ভয় ভাঙবে। মানুষের মধ্যে যে একটা ভয় ছিল, সেটা চলে যাবে। আমার কাছে মনে হচ্ছে খুব ভাল হচ্ছে। সবার মধ্যে একটা উৎসাহ কাজ করবে। মানুষের মধ্যে যে ভীতি কাজ করছিল, সেটা চলে যাবে। সবাই উৎসাহের সঙ্গে টিকা নেবে। এ ব্যাপারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, একটা শ্রেণী টিকা নিয়ে অপপ্রচার করছে। আমি টিকা নেয়ার পরে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করিনি। কোন সমস্যা হচ্ছে না। অনেকের ভেতরে যে প্রশ্ন ছিল রাজনীতিবিদরা কেন টিকা নিচ্ছে না, সেই জায়গা থেকেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি টিকা নেব। টিকা নিয়ে অপপ্রচারের বিষয়ে জনগণকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যে ধরনের অপপ্রচার সোশ্যাল মিডিয়ায় ষড়যন্ত্রকারী এবং দেশবিরোধীরা করছে, তাতে কেউ যেন কান না দেয়। সে জন্য আমি মিডিয়ার সামনে টিকা নিয়েছি। টিকা নিরাপদ। সবাই নির্ভয়ে টিকা দিন। গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিএসএমএমইউ কেন্দ্রে টিকা নেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি পুরোপুরি ভাল আছি।’ তিনি বলেন, ‘যারা নিচ্ছেন তারা বেশ আগ্রহ নিয়েই টিকা নিচ্ছেন। কিন্তু যারা এখনও টিকা নিচ্ছেন না, ইতস্তত করছেন তারা আসলে অমূলক বিভ্রান্ত হচ্ছেন।’ সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বাংলাদেশে দেয়ার কথা উল্লেখ করে ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমার দুই বিলেতি বন্ধুর সঙ্গে কথা হলো। গতকাল তারা দুইজনই এ টিকা নিয়েছেন বিলেতে। ওখানেও এ টিকা দিচ্ছে। একই টিকা এখানে দিচ্ছে। সুতরাং টিকা নিয়ে কোন সন্দেহ ছিল না।’ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সব ধরনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের টিকা নেয়ার পরামর্শ দেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা। ‘এটা নিয়ে দ্বিধা থাকার কোন কারণ নেই। অন্য দেশে এ টিকাটি যতটুকু সেইফ, বাংলাদেশেও ততটুকু সেইফ। আমি বলব, যারা ভালনারেবল গ্রুপ রয়েছেন তারা যেন টিকা নিয়ে নেন। আমরা অনেককে হারিয়েছি। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত-তাদের একটি বড় অংশই ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণী রয়েছে।’ এদিকে করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা বাড়ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট ‘কোভিড-১৯ টিকার প্রতি জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৮৪ শতাংশ লোক টিকা নিতে আগ্রহী। কিন্তু বেশিরভাগ লোকই টিকাদান কর্মসূচী চালুর শুরুতেই টিকা নিতে প্রস্তুত নয়। ৩২ শতাংশ লোক টিকা প্রদান কার্যক্রম চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টিকা নিতে চায়, আর বাকি প্রায় ৫২ শতাংশ জনগণ কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস অপেক্ষা করে টিকা নিতে চায়। আমরা আশা করবো, সকলেই স্বতঃপ্রণোদিতভাবে টিকা নেবেন। দেশ হবে করোনামুক্ত।