স্টাফ রিপোর্টার ঃ খুলনায় পুলিশের লাঠিচার্জে পন্ড হয়ে গেছে বিএনপির মানববন্ধন কর্মসূচি। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের ২০ নেতাকর্মী আহত হন। গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর কে ডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
পরে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটের টুকরা ছোড়া শুরু করে। পুলিশ তাদের তাড়া করে ওই এলাকা থেকে সরিয়ে দেয়। এ সময় কে ডি ঘোষ রোড, হেলাতলা ও বড় বাজার এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। মুহুর্তেই ফাঁকা হয়ে যায় রাস্তাঘাট। ব্যবসায়ীরা আতংকে দোকানপাট বন্ধ করে দেন। ঘটনাস্থল থেকে সালাউদ্দিন নামে বিএনপির এক কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নেতাকর্মীরা জানান, ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে বেলা ১১টায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলো মহানগর ও জেলা বিএনপি। সকাল থেকেই কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ। কর্মসূচি শুরুর আগেই পুলিশ কর্মকর্তারা অনুমতি না থাকায় কোন কর্মসূচি পালন করা যাবে না বলে জানান। কিন্তু বিএনপি নেতারা সড়কে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন ও বক্তব্য শুরু করে দেন। এ সময় পুলিশ মারমুখী হয়ে কর্মসূচিতে লাঠিচার্জ শুরু করে। এ সময় নেতাকর্মীরা দিকবিদিক ছোটাছুটি করে। পুলিশ মানববন্ধনের ব্যানার কেড়ে নেয়।
বেপরোয়া লাঠিচার্জে মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফখরুল আলম ও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আবদুল মান্নান মিস্ত্রি গুরুতর আহত হন। এর মধ্যে ফখরুল আলমের মাথা ফেটে যায় এবং আবদুল মান্নানের হাত ভেঙ্গে যায়।
এছাড়া লাঠির আঘাতে আরও আহত হয়েছেন আমির এজাজ খান, শফিকুল আলম তুহিন, মনিরুল হাসান বাপ্পী, আবু মুসা গাজী, হেমায়েত হোসেন, মিসেস সেতারা, নিঘাত সীমা, মামসুন নাহার লিপি, আমিন আহমেদ, ফিরোজ খান, খান জিয়াউর রহমান জীবন।
খুলনা সদর থানার ওসি হাসান আল মামুন বলেন, মানববন্ধনের কোনো অনুমতি ছিলো না। তাদের সড়ক আটকে কর্মসূচি পালন না করতে অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু তারা অনুরোধ না শুনে উল্টো পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ইতোপূর্বের একটি মামলার আসামিকে আটক করা হয়েছে।
ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে দলীয় কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাকিদের ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন। তিনি বলেন, এর আগে গত বছরের মার্চ মাসে বিএনপি অফিসে বাবুল কাজী নামের এক বিএনপি কর্মীকে পুলিশ বেধড়ক লাঠিচার্জ করে মাথা ফাটিয়ে দেয়। ঘটনার ১০ দিনের মাথায় মারা যান বাবুল কাজী। আজ একই কায়দায় পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে বিএনপি নেতা ফখরুল আলমের ওপর খুলনার থানার ওসি মামুন নিজে হামলা চালায়। লাঠির আঘাতে ফখরুল আলমের কপাল ও চোখ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত। এছাড়া ৩০ থেকে ৪০ জন কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি অবিলম্বে ওসিকে প্রত্যাহার, বিনা উস্কানিতে পুলিশী হামলার ঘটনার তদন্ত করে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। অন্যথায় বিএনপর পক্ষ থেকে ওসির বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করা হবে বলে জানানো হয়।
এর আগে মানববন্ধন কর্মসূচির শুরুতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত ছিলেন মহানগর ও জেলা আহবায়ক কমিটির আমির এজাজ খান, শফিকুল আলম তুহিন, মনিরুল হাসান বাপ্পী, তরিকুল ইসলাম জহির ও আবু হোসেন বাবু। বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স ম আব্দুর রহমান, খান জুলফিকার আলী জুলু, অ্যাড. তছলিমা খাতুন ছন্দা, আশরাফুল আলম নান্নু, আজিজুল হাসান দুলু, মুর্শিদ কামাল, এহতেশামুল হক শাওন, শেখ সাদী, সুলতান মাহমুদ, কে এম হুমায়ুন কবির, হাফিজুর রহমান মনি, আশফাকুর রহমান কাকন, মাহবুব হাসান পিয়ারু, তৈয়েবুর রহমান, শফিকুল ইসলাম হোসেন, সাজ্জাদ হোসেন পরাগ, মাসুদ পারভেজ বাবু, একরামুল হক হেলাল, হাসানুর রশিদ মিরাজ, শেখ ইমাম হোসেন, ইবাদুল হক রুবায়েদ, রফিকুল ইসলাম বাবু, হেলাল আহমেদ সুমন, নুরুল হুদা খান বাবু, আব্দুল মান্নান মিস্ত্রি, ইসতিয়াক আহমেদ ইস্তি, খান ইসমাইল হোসেন, সেতারা সুলতানা, গোলাম মোস্তফা তুহিন, তাজিম বিশ^াস, সজীব তালুকদার প্রমুখ।
অপরদিকে পুলিশী হামলার নিন্দা জানিয়ে বিএনপি ও অঙ্গ দলের নেতাকর্মীরা তাৎক্ষণিক একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। হেলাতলা মোড় থেকে মিছিলটি বের হয়ে বড় বাজারের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে, পিকচার প্যালেস হয়ে এস এম এ রব শপিং কমপ্লেক্সের সামনে গিয়ে পথসভার মাধ্যমে শেষ হয়।