চাল আর আমদানি নয়, সরকার রফতানির কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি বলেন, ‘ আমাদের দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ বছর বিদেশ থেকে চাল আমদানি করতে হয়নি। সামনের দিনগুলোতে আমরা বিদেশে চাল রফতানি করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখছি।’ সোমবার (১৬ অক্টোবর) বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল মিলনায়তনে বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জীবনে পানির ব্যবহার সর্বত্র। তাই পানির সঠিক ব্যবহার করতে হবে। পানি না হলে ফসল উৎপাদন হবে না। ফসল না হলে আমরা বাঁচতে পারবো না। অনেকে বলেন এক কেজি ধান উৎপাদন করতে চার হাজার লিটার পানি লাগে। কৃষকেরা অনেক সময় প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পানি সেচ কাজে ব্যবহার করে। তাই তাদের সচেতনতা বাড়িয়ে পানির অপচয় কমাতে হবে।’ ‘ ভোক্তারা লাল চাল খেলে মিল মালিকরাও ব্যবসায়ীক কারণে চকচকে চাল তৈরি করার আগ্রহ হারাবে। আমরা জনগণের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করেই লাল চাল খাওয়ার কথা বলি। বেশির ভাগ মানুষ সরু ও চকচকে চাল খেতে পছন্দ করে। বারবার ছাটাই করায় চালের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়। প্রায় বিশ লাখ মেট্রিকটন চাল হাওয়া হয়ে যায়। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ এখন লাল চাল খায়। কারণ লাল চালে পুষ্টি বেশি ।’ দেশে জমি কমেছে কিন্তু জনসংখ্যা বাড়ছে। সরকার জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করতে অনেক পদক্ষেপ নিচ্ছে। চাল, মাছ, আম ও সবজি উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। অনেক ফসল মৌসুমের সময় সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়। প্রসেসিং করে আম ও সবজি রফতানি করতে পারলে আমাদের কৃষকরা লাভবান হবে। দেশে খাদ্য সংকট নেই, দুর্ভিক্ষ হবে না। তবে ব্যবসায়ীদের সচতেন হতে হবে, ভোক্তাবান্ধব হতে হবে। দিনাজপুরে যে দামে চাল বিক্রয় হয় সে চাল ঢাকায় এসে অনেক বেড়ে যায়। এ প্রবণতা ছাড়তে হবে। আমাদের এই কৃষি প্রধান দেশে কৃষিকে যদি ঠিকমত পৃষ্টপোষকতা দেয়া যায় তাহলে শুধু চাল নয় অন্যান্য কৃষি পণ্যেও আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবো। কারণ আমাদের রয়েছে নদীবিধৌত পলি মাটি। সারা দেশে জালের মত ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৭শ’ নদী, উপনদী, শাখা নদী এবং নদীর প্লাবন ভূমিসহ হাজার হাজার খাল আমাদের কৃষি জমির অন্যতম প্রধান সেচপ্রবাহের মাধ্যম। এছাড়াও এ নদীগুলির পলিও কৃষিজমিকে উর্বরতা বাড়াতে সহায়তা করছে। প্রকৃতির এমনি অকৃত্রিম অবদানে বাংলাদেশ হয়েছে সুজলা সুফলা শস্য শ্যামল দেশ। বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থা অনাদী কাল আগে থেকেই নদী মাতৃকতার এ সুবিধা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে করেছে কৃষিপ্রধান দেশ। এখন অবশ্য জলবায়ু পরিবর্তনসহ পরিবেশগত নানা কারণসহ মনুষ্যসৃষ্ট কিছু কারণে কৃষি উৎপাদন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। তারপরও আধুনিক প্রযুক্তি ও অদম্য কৃষক সমাজের হার না মানা প্রত্যয়ে আমাদের কৃষির অনেক উপখাতে আমরা বিশ্বমানের সাফল্য পেয়েছি। আমরা এ ধারা অব্যাহত রাখতে চাই। আমরা মনে করি আমাদের মেধাবী কৃষি বিশেষজ্ঞগণ এবং আবহমানকালের কৃষক সমাজের দীর্ঘকালের অভিজ্ঞতা, শ্রম এবং তাদের প্রণীত নতুন নতুন কৌশলে কৃষি এখন আধুনিক বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির সংমিশ্রণে নতুন মাত্রা পেয়েছে। যার ধারাবাহিকতায় এখন আর আমাদের কোন বিশেষ পরিস্থিতি ছাড়া চাল আমদানী করার প্রয়োজন হয়না। আমরা আমাদের নিজস্ব উৎপাদন দিয়েই নিজেদের চাহিদা পূরণ করতে পারছি। এটি আমাদের এই বিপুল জনসংখার দেশের জন্য এক বিরাট সাফল্য। আমরা প্রত্যাশা করি কৃষি খাতের এই বিপ্লব অব্যাহত থাকবে। কৃষি, কৃষক এবং সাধারণ মানুষের একটি সুন্দর মেলবন্ধনের মাধ্যমে ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার আমাদের সকলের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। আমরা মনে করি চাল উৎপাদনে পানি ব্যবহারে আমাদের সাশ্রয়ী হতে হবে। অল্প পানি ব্যবহার করে ধান চাষের পদ্ধতিও আবিস্কার করতে হবে। জনগণের স্বাস্থের কথা ভেবে সাদা চকচকে রাসায়নিক ব্যবহার করা এবং কৃত্রিমভাবে সরু করা চাল উৎপাদন বন্ধ করার ব্যবস্থা করতে হবে। মানুষের প্রধান খাদ্য চাল উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণে এই অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ব্যবস্থা নিবেন আমরা এ প্রত্যাশা করছি। সর্বোপরি আমরা স্বাস্থ্যসম্পত কৃষি এবং নির্ভেজাল কৃষিকে সহায়তা করার আহবান জানাই। আমরা মনে করি, আমাদের দেশে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কৃষি উৎপাদন টিকে আছে। কৃষির বহুমুখীকরণ শুরু হয়েছে। প্রধান ফসল ধান গম ভুট্টা পাট আখ উৎপাদনের পাশাপাশি সবজি ও মাছ উৎপাদনে অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। এখন প্রয়োজন অর্গানিক কৃষি। একই সাথে কৃষিতে শিক্ষিত যুবক যুবতীদের যুক্ত করতে হবে।