সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি
এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ খুলনার শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের(এসএইচএমইউ) নবযিুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ডা: মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেছেন, তাঁকে ভিসি নিয়োগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ওপর যে আস্থা রেখেছেন সে আস্থার প্রতিফলন ঘটানোই হবে তাঁর প্রধান কাজ। সেই সাথে স্বাস্থ্যশিক্ষার পাশাপাশি গবেষণার ক্ষেত্র তৈরি করা এবং সর্বোপরি একটি বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার মধ্য দিয়ে তিনি এ বিশ^বিদ্যালয়কে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবার ভরসাস্থলে পরিণত করতে চান। দৈনিক পূর্বাঞ্চলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।
গতকাল শনিবার দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের চিকিৎসা-১ শাখার গত ২৯ এপ্রিলের এক প্রজ্ঞাপনে তাকে চার বছর মেয়াদের জন্য উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি ইতোমধ্যেই প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করেছেন। তিনি খুলনা সফর করে বিশ^বিদ্যালয়ের জন্য সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শনসহ খুলনার জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ ও প্রশাসনের সাথে কথা বলেছেন। খুলনাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ বিশ^বিদ্যালয় স্থাপনের দিকে বেশি গুরুত্ব দেন। খুলনাবাসীর দাবির পাশাপাশি খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ¦ তালুকদার আব্দুল খালেক, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন, খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো: ইসমাইল হোসেন, খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফল এ বিশ^বিদ্যালয়।
ভিসি হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পর আপনার প্রধান কাজ কি হবে এবং পরিকল্পনাগুলো কি এমন প্রশ্নের জবাবে এসএইচএমইউ ভিসি অধ্যাপক ডা: মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, তিনি খুলনাবাসীর আকাক্সক্ষা বাস্তবায়ন করতে চান। খুলনার সাথে তার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, তিনি ভিসি হিসেবে নিয়োগ না পেলেও খুলনার মানুষের চাওয়ার সাথে তার চাওয়াকে এক করে এ বিশ^বিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতেন। কেননা তিনি একদিকে যেমন এই অঞ্চলের মানুষ এবং খুলনায়ই কেটেছে তার শিক্ষাজীবনের প্রাথমিক সময়। তবে এটাতো একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে। সবেমাত্র বিল পাশ ও ভিসি নিয়োগ হয়েছে। এখন পর্যন্ত জনবল নিয়োগ হয়নি, অফিস নেয়া হয়নি। তারপরও তিনি কিছু পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, গত ৭ মে তিনি সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করেছেন। স্থানটি দেখে তার ভাল লেগেছে। খুলনার মেয়রসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে জায়গাটি প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছে। যেটি রূপসা সেতু বাইপাস সড়কের দক্ষিণ পাশে খুলনা-মংলা রেল লাইন সংলগ্ন মাথাভাঙ্গা মৌজায় অবস্থিত। যেখানে ১১৪একর জমি রয়েছে উল্লেখ করে ভিসি বলেন, পুরো জমিই তিনি শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের জন্য চাইবেন। এরপর সেখানে বিশ^বিদ্যালয়ের একাডেমিক, প্রশাসনিকসহ অন্যান্য ভবন নির্মাণসহ অন্যান্য কার্যক্রম শুরু করা হবে।
এসএইচএমইউ’র ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে প্রথম ভিসি বলেন, আগে প্রকল্প তৈরি করে একনেকে অনুমোদনের পরই কাজ শুরু করতে হবে। তবে যেহেতু এটি একটি বিশ^বিদ্যালয়, সেহেতু স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যবস্থাতো অবশ্যই এক নম্বরে থাকবে। বিশেষ করে আন্ডার গ্রাজুয়েট মেডিকেল শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং বিশ^বিদ্যালয়কে কিভাবে সম্প্রসারণ করা যায় সে চেষ্টা তিনি করবেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় ছাড়া খুলনায় পোষ্ট গ্রাজুয়েশন লেবেলের কোন কোর্স যেহেতু নেই, বিশেষ করে শিক্ষা ক্ষেত্রে সেহেতু খুলনাঞ্চলের যারা শিক্ষার্থী আছেন তারা এ বিশ^বিদ্যালয়েই যাতে শিক্ষালাভের সুযোগ পান সে চেষ্টাও তিনি করবেন।
দ্বিতীয়ত এখানে রিসার্চ সেন্টার হবে। তিনি গবেষণাকে উৎসাহিত করতে চান উল্লেখ করে বলেন, মেডিকেল শিক্ষার্থী, শিক্ষক, চিকিৎসক সবাই এখানে গবেষণা করুক এটা তিনি চান। শিক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে এ বিশ^বিদ্যালয়ে চিকিৎসা পেশার সাথে সংশ্লিষ্টরা গবেষণা করুক সেটিকেও তিনি উৎসাহিত করবেন বলে জানান।
তৃতীয়ত লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দেবেন উল্লেখ করে বলেন, খুলনায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালসহ অন্যান্য বেশকিছু স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান থাকলেও পোষ্ট গ্রাজুয়েশন লেবেলে যে চিকিৎসাটা দেয়া দরকার সেটি নেই। বিশেষ করে ভালো কার্ডিওলজি সেন্টার, নেফ্রোলজি সেন্টার, হিমাটোলজি সেন্টার, ক্যান্সার সেন্টার, বোনমেরু ট্রান্সপ্লান্টেশন, অর্গান ট্রান্সপ্লান্টেশন এসবের ক্ষেত্রে এ অঞ্চলে বেশ ঘাটতি আছে। অনেক ক্ষেত্রে নেই বললেই চলে। এজন্য এ অঞ্চলের রোগীদের হয় ঢাকায় যেতে হয় অথবা যারা একটু বিত্তশালী আছেন তারা দেশের বাইরে চলে যান। এজন্য তিনি চান এ অঞ্চলের মানুষের এ ধরনের স্বাস্থসেবা যেন এখানেই দেয়া যায়। অর্থাৎ বিশ^মানের স্বাস্থ্যসেবাটা যেন খুলনায়ই দেয়া যায় এবং স্বল্পমূল্যে যতটা সম্ভব তাদের আয়ত্তের মধ্যে রেখে স্বাস্থ্যসেবাটা নিশ্চিত করা যায় সে ব্যাপারে তিনি কাজ করবেন বলেও জানান।
এছাড়া এখানে একটি টিচিং হসপিটাল কাম সার্ভিস হসপিটাল করারও পরিকল্পনার কথা তিনি উল্লেখ করেন। যেটি প্রাথমিকভাবে ৫শ’ বেডের হবে এবং পর্যায়ক্রমে সেটি এক হাজার বেড বা তারও বেশি করা যায় কি না সে চেষ্টা করা হবে। সেভাবেই তিনি তার পরিকল্পনা সাজাবেন বলেও জানান। যার শুরুটা তিনি করার চেষ্টা করবেন। কিন্তু পরে যাতে সম্প্রসারণ করা যায় সেভাবে বিশ^বিদ্যালয়ের অবকাঠামো তৈরি করা হবে।
বিশ^বিদ্যালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে ভিসি বলেন, ইতোমধ্যে তিনি কাজ শুরু করে দিয়েছেন। ২৯ এপ্রিল নিয়োগ পাওয়ার পর তিনি গত ৩ মে যোগদান করেছেন। খুলনায় এসে সম্ভাব্য জায়গা দেখেছেন। সিটি মেয়র, বিএমএ, স্বাচিপ, প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছেন। মন্ত্রণালয়েরও পরামর্শ তিনি নিয়েছেন। খুলনায় একটি ভালো মানের বিশ^বিদ্যালয় ও হাসপাতাল হোক এটি তিনি মনে প্রাণে চান। এটি তিনি ভিসি না হলেও চাইতেন উল্লেখ করে বলেন, যেহেতু তিনি খুলনায়ই বেড়ে উঠেছেন এবং খুলনার আলো বাতাসের সাথে তার রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক সেহেতু খুলনাবাসীর সাথে তিনিও এটি মনেপ্রাণে চাইবেন।
উল্লেখ্য, গোপালগঞ্জ জেলায় ১৯৬৪ সালের পয়লা জানুয়ারি জন্মগ্রহণকারী অধ্যাপক ডা: মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান সর্বশেষ ঢাকার মহাখালিস্থ জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের হেমোটলজি বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭৮ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি, ১৯৮০ সালে সরকারি বিএল কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৮৭ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস উত্তীর্ণ হওয়ার পর ১৯৯৫ সালে এফসিপিএস ডিগ্রী অর্জন করেন। এছাড়াও ইউএসএ ও ইউকে থেকে তিনি যথাক্রমে এফএসিপি ও এফআরসিপি ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি বরিশালের গৌরনদী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, ঢাকার ক্যান্সার রিচার্স এন্ড হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি খুলনার চতুর্থ পাবলিক বিশ^বিদ্যালয় শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের প্রথম ভিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েও ইতিহাসের সাক্ষী হলেন।