বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ হলেও এখন আর ৬ ঋতুর দেখা মিলে না। ঋতুবৈচিত্রের দেশে এখন মূলত ২ বা ৩টি ঋতুর উপস্থিতি চোখে পড়ে। অন্য ঋতুগুলোর উপস্থিতি শুধু কবিতা, গল্পে, উপন্যাসে অথবা আমাদের অনুভবে বা স্মৃতিতে। কিন্তু একটি সময়ে ৬ ঋতুর বৈচিত্রময় আবহে দেশের পরিবেশে প্রকৃতিতে থাকত জীবনদায়ী আবাহন। এখন পরিবেশের সে আবেদন বা আবাহন নেই। এখন কোন বছর শীত হয় অতি সংক্ষিপ্ত। আবার কোন বছর হয় অতি শীত। কখনো অতি গরম, অতি শীত বা অতি বৃষ্টি বা অল্প বৃষ্টি। প্রকৃতির এমনি অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণের স্বীকার মানুষ, মানুষের জীবিকা এবং প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল জীবকূল। এমনি অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণে এবার উপস্থিত শীত। অগ্রহায়নের শেষে শীতের উপস্থিতি বেশ জোরেসোরেই অনুভূত হচ্ছে। শীতের তীব্রতা কেমন হবে বলা যাচ্ছে না। তবে বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, এবার শীতের তীব্রতা কম হতে পারে। কারণ এ বছর ছিল বিশ্বে সবচেয়ে বেশী তাপমাত্রা। দিন যত যাচ্ছে ততই তাপ বাড়ছে। এমনি অবস্থায় শীত-গরমের সামঞ্জস্য থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। তবে প্রকাশিত বিভিন্ন খবরে জানা যায়, হিমেল হাওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। বিশেষ করে রংপুরসহ উত্তরের বিভিন্ন জেলায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে। গতকাল ভোর থেকে এসব অঞ্চলে ঘন কুয়াশার কারণে যানবাহন চলাচল করেছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। দুর্ঘটনা এড়াতে রেলপথেও গতি কমেছে ট্রেনের। রংপুর নগরের শাপলা চত্বর, নিউ আদর্শপাড়া, বাবুখাঁ, কামারপাড়া, লালবাগ, টার্মিনাল রোডসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঘন কুয়াশার কারণে সড়কে মানুষের উপস্থিতি কম ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মস্থলের উদ্দেশে বের হওয়া মানুষ দেখা গেছে। রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত রংপুরে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিভাগের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১৩ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১৩ দশমিক ২, ডিমলায় ১৩ দশমিক ৬, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১৪ দশমিক ৮ এবং গাইবান্ধায় ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে নীলফামারীতে ঘন কুয়াশার কারণে আকাশ ও সড়কপথে যান চলাচলে বিঘœ ঘটছে। গতকাল সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সৈয়দপুর বিমানবন্দরে কোনো ফ্লাইট ওঠানামা করেনি। এতে বেসরকারি দুই কোম্পানির দুটি ফ্লাইটের প্রায় ৮০ যাত্রী বিমানবন্দরে আটকা পড়ে। কোনো ফ্লাইট বাতিলের সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এছাড়া উত্তরের হিমেল বাতাসে নওগাঁয় বাড়ছে শীতের অনুভূতি। জেলার বদলগাছীতে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। খুলনাসহ দক্ষিণের জেলাসমূহেও বাড়ছে শীতের প্রকোপ। কনকনে শীত জেঁকে বসেছে উত্তরের জেলা লালমনিরহাটেও। ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল বেলা ১১টা পর্যন্ত ট্রেন-বাস গুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করেছে। এছাড়া সড়কে ট্রাক, বাস, মাইক্রোসহ বিভিন্ন যানবাহনও হেডলাইড জ্বালিয়ে চলাচল করেছে। তবে কুড়িগ্রামে কুয়াশা কিছুটা কমলেও তাপমাত্রা রয়েছে নিম্নগামী। হঠাৎ করে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম। কুড়িগ্রাম আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, গতকাল সকালে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখন থেকে প্রতিদিনই তাপমাত্রা কমতে থাকবে। ২০ ডিসেম্বরের পর এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে অগ্রহায়ণের শেষে এসে চুয়াডাঙ্গায় দ্রুত কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রা। একদিনের ব্যবধানে জেলার তাপমাত্রা কমেছে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর উপর প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় আমরা বলতে চাই শীতের সময় স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট হয় বেশী। এছাড়াও বয়োবৃদ্ধ এবং শিশুরা নানাবিধ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রস্তুতি আমাদের রাখতে হবে। সরকারী সংস্থা, হাসপাতাল এবং অন্যান্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলিকেও এ বিষয়টিতে নজর রাখার জন্য আহবান জানাচ্ছি। দেশে এমনিতেই ডেঙ্গুর প্রকোপ চলছে। শীত আমাদের দেশের অন্যতম একটি ঋতু। ঋতুর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বিশেষ করে তাপমাত্রা ১২ডিগ্রির নিচে নেমে গেলে বেশ শীত অনুভূত হয়। আর ১০ডিগ্রির নিচে নামলে তীব্র শীত অনুভূত হয়। শীতের সময় শৈত্যপ্রবাহ বা বৃষ্টিপাত কুয়াশার মতো বেশ কিছু বিষয় রয়েছে। যার সাথে আমাদের স্বাস্থ্য সমস্যা জড়িত। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধ মানুষের জন্য শীতের ধকল সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। শীতে ঠান্ডাজনিত নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটস, শ্বাসকষ্ট, ডায়েরিয়াসহ অনেক রোগের প্রকোপ দেখা দিতে পারে। এজন্য সচেতন থাকা দরকার। আবার ঘনকুয়াশায় যানবাহন চলাচলে বিপত্তি দেখা দেয়। এসব বিষয় ছাড়াও আরও একটি দিক রয়েছে। শীতে গরম কাপড়ের অভাব। অনেক মানুষের শীত মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় গরম কাপড় নেই। দরিদ্র মানুষের এই কষ্ট নিবারণে সরকার, সংগঠন ও স্বচ্ছল ব্যক্তিদেও এগিয়ে আসা দরকার।