আবু নাসের হাসপাতালের ১২ কোটি টাকা ফেরত

অযোগ্যতার প্রমাণ : দাবি
খুলনার সচেতন মহলের

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ আঠারো প্রকারের মালামালের প্রয়োজন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদাপত্র দিয়েছিলেন খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক ডা: মুন্সী মো: রেজা সেকেন্দার। গত ৪ মে দেয়া ওই চাহিদাপত্রের স্মারক নম্বর-৭৯৫/১(৯)। চাহিদাপত্রের আলোকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়া হয় গত ৬ জুন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক(অর্থ) ডা: শেখ মোঃ মনজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক পত্রে ওই অনুমোদন দেয়া হয়। টেন্ডার প্রক্রিয়া আগেই সম্পন্ন হওয়ায় কেবল কার্যাদেশ দিয়ে মালামালগুলো হাসপাতালে নেয়া হলেই ১২ কোটি টাকা ফেরত যেতো না। কিন্তু কি কারণে ওই মালামালগুলো কেনা হলোনা সেটি স্পষ্ট নয়। আর এজন্যই ২০২০-২১ অর্থ বছরের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ সব ফেরত যায়। এভাবেই একটি বিশেষায়িত হাসপাতালকে ভঙ্গুর অবস্থায় ফেলে দেয়া হলো। এর দায়ভার কে নেবে সে প্রশ্নও খুলনাবাসীর।
এদিকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত ১২ কোটি টাকা ফেরত যাওয়াটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা ও অযোগ্যতার প্রমাণ বলে মনে করছেন খুলনার সচেতন নাগরিকবৃন্দ।
তৎকালীন পরিচালক ডা: মুন্সী মো: রেজা সেকেন্দারের দেয়া চাহিদাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছিল প্রয়োজন অনুযায়ী ইডিসিএল ওষুধ ও ইডিসিএল বহির্ভূত ওষুধ, এমএসআর যন্ত্রপাতি(সার্জিক্যাল ইনস্টুমেন্ট), রি-এজেন্ট(কেমিক্যাল), গজ, ব্যান্ডেজ, কটন, লিলেন, ফার্নিচার এন্ড কিচেন সামগ্রী, ষ্টেশনারী, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী, কম্পিউটার এবং আনুসাঙ্গিক মালামাল, ইলেক্ট্রিক্যাল মালামাল, অক্সিজেন, আউটসোর্সিং কর্মচারী, স্ট্যাম্প এন্ড সীল প্যাড এবং ভারী যন্ত্রপাতি প্রয়োজন। এর মধ্যে অনেক চাহিদা আছে এখনই প্রয়োজন। চাহিদাপত্রে তৎকালীন পরিচালক ডা: মুন্সী মো: রেজা সেকেন্দার ছাড়াও স্বাক্ষর রয়েছে উপ-পরিচালক ডা: এস,এম মোর্শেদ, সহকারী অধ্যাপক(এন্ডোক্রাইনোলজী) ডা: আছাদুজ্জামান এবং আবাসিক মেডিকেল অফিসার(আরএমও) ও ষ্টোর কর্মকর্তা ডা: প্রকাশ চন্দ্র দেবনাথের।
সম্প্রতি হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালু হওয়ায় পুনরায় অনেক চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে আউটসোর্সিং জনবলেরও চাহিদা দেয়া হয়েছে। অথচ আগের অর্থ বছরের অনুমোদন অনুযায়ী মালামাল কেনা হলে অনেক চাহিদাই এখন পূরণ হয়ে যেতো। বর্তমানে করোনা ইউনিট চালু হওয়ায় জনবলের বেশ চাহিদা রয়েছে। গতকাল দুপুরে করোনা ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, নার্সিং ইনচার্জসহ অন্যান্যদের দম ফেলার সময় নেই। কর্মচারীদের কাজও করতে হচ্ছে নার্সদের। এতে রোগী সেবা ব্যহত হতে পারে এমন আশংকাও সংশ্লিষ্টদের। শোনা যাচ্ছে, ৪০টি বেড নিয়ে করোনা ইউনিটে যাত্রা হওয়ায় সব বেডই পরিপূর্ণ। এখন আরও বেড বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে। বেড বাড়লে জনবল ও অন্যান্য মালামালেরও প্রয়োজন হবে।
হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: এসএম মোর্শেদ বলেন, করোনা ইউনিটে শীঘ্রই আরও পাঁচটি বেড বাড়তে পারে। কিন্তু বেড বাড়লেই এর সাথে জায়গা দেয়ার পাশাপাশি প্রয়োজন রয়েছে অক্সিজেনের পাইপ লাইন স্থাপন, বৈদ্যুতিক কাজসহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম। সেই সাথে হাসপাতালের ১০টি আইসিইউ বেডের জন্য আগে স্পেক্ট্রা কোম্পানীর ছয় কিলো’র(ছয় হাজার লিটার) একটি অক্সিজেন ট্যাংকি থাকলেও এখন অক্সিজেনের চাহিদাও বাড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে ট্যাংকিও ছয় থেকে ১০ কিলোতে(১০ হাজার লিটার) উন্নীত করার প্রয়োজন হতে পারে। অর্থাৎ প্রয়োজন হবে অক্সিজেনও। সব মিলিয়ে অনেক কিছুই এখন প্রয়োজন।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, কেউ যদি নিজে সততার দাবি করে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করে সে সততার কোন মূল্য ইে। কারণ যে তথাকথিত সততায় জনগণের কল্যাণ হবে না, সে সততার বিরুদ্ধেই সকলকে সোচ্চার হওয়া উচিত। শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল থেকে ১২ কোটি টাকা ফেরত যাওয়ায় সেবা গ্রহীতারা বঞ্চিত হবে। এক বছরে ১২ কোটি টাকা ফেরত যাওয়া মানে ২৪ কোটি টাকা পিছিয়ে পড়া। উন্নয়নের স্বার্থে তিনি এ ধরনের অদক্ষ কর্মকর্তাদের পদায়ন না করারও আহবান জানান।
খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সভাপতি ও নগর আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজি আমিনুল হক বলেন, গত বছর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি জেলা হাসপাতালে আইসিইউ বেড ও অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত অনেক হাসপাতালেই তা হয়নি। এটি দু:খজনক। এজন্য যাদের দেখার দায়িত্ব তাদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, একা প্রধানমন্ত্রী কয় জায়গায় দেখবেন ?
আবু নাসের হাসপাতালের টাকা ফেরত যাওয়ার কথা তুলে ধরে ওই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, সেখানের তৎকালীন পরিচালক খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থাকাবস্থায়ও সাড়ে চার কোটি টাকা ফেরত গিয়েছিল। এটি হয়েছে পরিচালকের অযোগ্যতার কারণে। তিনি বলেন, অযোগ্য লোকদের দায়িত্ব দিলে যা হয় তাই হয়েছে। টাকা ফেরত যাওয়ায় খুলনার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন-বিএমএ’র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও খুলনা বিএমএ’র সভাপতি ডা: শেখ বাহারুল আলম বলেন, আবু নাসের হাসপাতালের কোন গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় মালামাল না কিনে থাকলে সেটি ঠিক হয়নি। আবার তৎকালীন পরিচালক নিজেই চাহিদাপত্র দিয়ে প্রশাসনিক অনুমোদন চাওয়ার পর অনুমোদন হয়ে আসলে তা’ আবার না কেনাটা একটি গর্হিত অপরাধ। সাদা চোখে এমনটিই বলা যায়। কিন্তু এটিকে এভাবে না দেখে আরও গভীরে গিয়ে দেখতে হবে যে, এর সাথে অন্য কোন ঘটনা লুকিয়ে আছে কি না।