পিতাকে আউটসোর্সিং-এ চাকরী
পরিবারের দায়িত্ব নিল কোম্পানী

স্টাফ রিপোর্টার ঃ নগরীর সোনাডাঙ্গা মডেল থানাধীন বয়রা করিম নগরস্থ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানীর সদর দপ্তরের সীমানা প্রাচীর ধসে নিহত শিশু তামিমকে গতকাল শনিবার ময়না তদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়েছে। এর আগে নিহতের পরিবার, স্থানীয় গন্যমান ব্যক্তিবর্গ এবং ওজোপাডিকো কর্তৃপক্ষের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয় ওজোপাডিকো সদর দপ্তরে। সেখানে কোম্পানী কর্তৃপক্ষ জানান, এখন থেকে নিহত তামিমের পরিবারের দায়িত্ব ওজোপাডিকো কর্তৃপক্ষের। সেই সাথে আজ থেকেই নিহত তামিমের পিতা মো: মিঠুকে ওজোপাডিকোর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৪এর আওতায় নগরীর আমতলা অভিযোগকেন্দ্রে আউটসোর্সিং কর্মচারী হিসেবে চাকরী দেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে কোম্পানীর নির্বাহী পরিচালক(প্রকৌশল) মো: আবু হাসানের কক্ষে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে ডেকে মিঠুকে চাকরীতে যোগদানের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়।
গত শুক্রবার সকালে করিম নগরে ওজোপাডিকোর দেয়াল ভেঙ্গে স্থানীয় তিন শিশু আহত হলে তাদেরকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেলে মৃত্যু হয় সাত বছর বয়সী তামিমের। অন্য দু’শিশু খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। নিহত তামিমের লাশ ময়না তদন্ত ছাড়া দাফন হবে কি না সে বিষয়ে গতকাল সকালে ওজোপাডিকোর সদর দপ্তরে বৈঠক হয়। কোম্পানীর নির্বাহী পরিচালক(প্রকৌশল) মো: আবু হাসানের সভাপতিত্বে এসময় স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ওজোপাডিকোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিহত তামিমের পিতা চা দোকানদার মো: মিঠুকে চাকরী দেয়ার পাশাপাশি তার পরিবারের দায়-দায়িত্ব এখন থেকে ওজোপাডিকো বহন করবে। তবে বৈঠক চলাকালেই সিদ্ধান্তের আগেই খুমেক হাসপাতালের হিমাগার থেকে লাশ এনে গোসল করানো হয়। পরে বাদ জোহর বয়রা সার্কিট হাউজ চত্বরে নামাজে জানাজা শেষে তাকে বসুপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয়। নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন আর্ট কলেজ সংলগ্ন আরাফাত জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতীব হাফেজ মুফতি নাইমুল হাসান।
এদিকে, ওজোপাডিকোর বৈঠক চলাকালে দুপুর ১২টার দিকে নিহত তামিমের শোকাহত পিতা মো: মিঠুকে সেখানে এনে তাকে চাকরী দেয়া ও এ পর্যন্ত চিকিৎসাসহ অন্যান্য বাবদ যে খরচ হয়েছে সেগুলো বহনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। কিন্তু মিঠু ছিলেন অনেকটা বাকরুদ্ধ। পরে সেখানে উপস্থিত মিঠুর মামা বেলাল হোসেন পরিবারের পক্ষ থেকে দায়িত্ব নিয়ে ওই প্রস্তাবে সম্মতি জানালে বৈঠক শেষ হয়।
ওজোপাডিকোর বৈঠকে অবশ্য স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের পক্ষ থেকে মিঠুকে স্থায়ী চাকরী দেয়ার আহবান জানানো হলে কোম্পানী কর্তপক্ষ বলেন, কোম্পানীতে কারও চাকরীই স্থায়ী নয়। সবাই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত। মিঠুকে যে চাকরী দেয়া হচ্ছে সেটি আউটসোর্সিং কর্মচারী হিসেবে। তবে কোম্পানী যতদিন থাকবে ততদিনে তার চাকরী যাবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। এসময় বেতনের ব্যাপারে জানতে চাইলে বলা হয়, আউটসোর্সিং কর্মচারীদের মাসিক বেতন ১০ হাজার টাকা। তবে আট ঘন্টা ডিউটির পর বাকী সময়ে তিনি আগের ন্যয় চা দোকান দিতে পারবেন।
ত্রি-পক্ষীয় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাবেক সভাপতি আলহাজ¦ শেখ মোশাররফ হোসেন, ওজোপাডিকোর বিবিবি-৪এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মামুনুর রহমান, স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের মধ্যে আবু সাইদ, সাইফুল বকশি, কেসিসির ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়ার্ডের সচিব মো: আব্দুল কুদ্দুস প্রমুখ।
পরে জোহর বাদ নামাজে জানাজার আগে ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপক(প্রশাসন) মোহাম্মদ নাজমুল হুদা বলেন, মিঠুকে চাকরী দেয়ার পাশাপাশি পরিবারের সকল প্রকার ভরণ-পোষনের দায়িত্ব এখন থেকে ওজোপাডিকো বহন করবে। নিহত তামিমের জন্য আগামীকাল সোমবার জোহর বাদ করিমনগর ও বয়রার তিনটি মসজিদে দোয়া মাহফিলের যাবতীয় খরচও ওজোপাডিকো বহন করবে বলেও তিনি জানান। স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের পক্ষ থেকে এসময় বক্তৃতা করেন, খুমেক হাসপাতালের সামনের ফজলুল উলুম বহুমুখী মাদ্রাসা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ হাসান আমীর। তিনি বলেন, মিঠুর একমাত্র পুত্র সন্তান হারানোর বেদনা শুধু তার পরিবারকেই নয়, গোটা এলাকাবাসীকেই শোকাহত করেছে। তার মতো একটি ফুটন্ত শিশু অকালেই ঝড়ে পড়ার যে বেদনা সেটি তার পরিবার কেন এলাকাবাসী কাটিয়ে উঠতে পারবে কি না সন্দেহ। তার এ মৃত্যুর মধ্যদিয়ে যে অপূরনীয় ক্ষতি হলো ওজোপাডিকো কর্তৃপক্ষকে সে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা উচিত এবং এ পরিবারের পাশে দাঁড়ানো উচিত বলেও তিনি মনে করেন।
এদিকে, শুক্রবারের দেয়াল ধসে একজন নিহত ও দু’জনের আহতের ঘটনায় ওজোপাডিকো গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বলে কমিটির আহবায়ক প্রকৌশলী মো: আবু হাসান জানিয়েছেন। তদন্তে উক্ত ঘটনার জন্য যার বা যাদের দায় রয়েছে সেটি নির্ধারণ, আহত দু’জনের চিকিৎসার সার্বিক খোঁজখবর রাখা, এ ঘটনায় সার্বিক খরচের পরিমান নির্ণয় এবং পরবর্তীতে করণীয় বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে বলেও কোম্পানীর ব্যবস্থাপক(প্রশাসন) মোহাম্মদ নাজমুল হুদা জানিয়েছেন। এছাড়া দক্ষিণ পাশের যে দেয়ালটি ভেঙ্গে গেছে সেটির পাশাপাশি পশ্চিম পাশের দেয়ালও ভেঙ্গে ফেলা হবে বলেও তিনি জানান। তবে পূর্ব পাশের দেয়াল ভাঙ্গা হবে কি না সে সম্পর্কে তিনি কিছুই জানাননি।
তবে তিন পাশের ১২শ’ ফুট দৈর্ঘ্য দেয়ালের পলেস্তরা খসিয়ে নতুন পলেস্তরা দেয়ার জন্য সাড়ে নয় লাখ টাকার যে টেন্ডার সম্প্রতি আহবান করা হয়েছিল এবং যে কাজটি করতে গিয়ে দেয়াল ধসে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে সে টেন্ডার বাতিল হবে কি না সেটি সম্পর্কেও কারও কোন স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পলাশ এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজটি যে ঠিকাদার করছেন তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের নাম সাজিদ এন্টারপ্রাইজ এবং তার নাম মো: মফিজুর রহমান মান্নান। গতরাতে তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর কাজটি আপাতত: বন্ধ রয়েছে। পরবর্তীতে কি নির্দেশনা আসে তার জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হবে।