স্টাফ রিপোর্টার ঃ করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে বিদেশ যাওয়ার জন্য গতকাল বিকেলেই ঢাকায় পৌঁছেন হৃদয় বিশ^াস নামের এক ব্যক্তি। গোপালগঞ্জের বাসিন্দা ওই হৃদয় বিশ^াস ভারতে যাবেন চোখের ডাক্তার দেখাতে। আজ মঙ্গলবার তার ফ্লাইট। গতকাল যথারীতি তার মোবাইলে এসএমএস যায় করোনা পরীক্ষার। ফলাফল নেগেটিভ। আবার অনলাইন থেকেও তিনি ফলাফল প্রিন্ট দিয়ে কাছে রাখেন। কিন্তু রাতেই তার কাছে আবার খবর যায় তার নমুনা এখনও খুলনা জেনারেল হাসপাতাল থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যায়নি। অর্থাৎ নমুনা যাওয়ার আগেই ফলাফল অনলাইনে! কেমন করে এটি সম্ভব জানতে চাইলে বিষ্ময় প্রকাশ করেন খোদ সিভিল সার্জন নিজেই। আর যার মাধ্যমে নমুনার ফরওয়ার্ডিং খুলনা মেডিকেলের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে যায় জেনারেল হাসপাতালের সেই মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট বললেন, কি হয়েছে সেটি আজ মঙ্গলবার তিনি অফিসে না গিয়ে বলতে পারবেন না।
ঢাকায় অবস্থানরত গোপালগঞ্জের হৃদয় বিশ^াস গতরাতে পূর্বাঞ্চলকে জানান, তিনি ভারতে যাওয়ার জন্য করোনা টেষ্ট করতে খুলনা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে নমুনা দিয়েই ঢাকায় চলে যান। গতকাল তার ফলাফল তিনি হাতে পেয়েছেন অনলাইনের মাধ্যমে। কিন্তু জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও খুলনার সিভিল সার্জন ডা: সুজাত আহমেদ বলেন, হৃদয় বিশ^াসসহ মোট চার ব্যক্তির নমুনা এখনও খুমেক’র মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে পাঠানো হয়নি। কিন্তু ফলাফল দেখা যাচ্ছে অনলাইনে। বিদেশগামীদের নমুনা পাঠানো হয় সিভিল সার্জনের দপ্তরের মাধ্যমে, আর জেনারেল হাসপাতালের বুথ থেকে সংগ্রহ করা নমুনা সাধারণ রোগীদের জন্য। কিন্তু ওই চারজন কিভাবে ফলাফল পেলেন সেটিই প্রশ্নের বিষয়। এটি তিনি আজ কর্মস্থলে গিয়ে দেখবেন বলেও জানান।
এছাড়া জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট(ল্যাব:) মো: রওশন আলী বলেন, এটি কিভাবে কি হয়েছে সেটি তিনি আজ অফিসে না গিয়ে বলতে পারবেন না।
উল্লেখ্য, খুলনা জেনারেল হাসপাতালের বিদেশগামীদের করোনা টেষ্টের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বর্তমানে সেখানের মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট(ল্যাব:) প্রকাশ কুমার দেবনাথ কারাগারে অবস্থান করছেন। তার বিরুদ্ধে দুদকে মামলাও চলমান রয়েছে। এজন্য করোনা পরীক্ষার বিপরীতে আদায়কৃত অর্থের ব্যাপারে স্বচ্ছতা আনতে সম্প্রতি সিভিল সার্জন ডা: সুজাত আহমেদ বিদেশগামীদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা করেন। জেনারেল হাসপাতালের বুথ থেকে সাধারণ রোগীদের নমুনা সংগ্রহ ও সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে বিদেশগামীদের নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করেন তিনি। দু’টি জায়গা থেকে পৃথকভাবে ফরওয়ার্ডিংও পাঠানো হয় খুলনা মেডিকেলের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে। কিন্তু কিভাবে সাধারণ রোগীদের নমুনা বিদেশগামীদের তালিকায় চলে যায় সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অবশ্য এমন অভিযোগের ভিত্তিতে দৈনিক পূর্বাঞ্চলের একজন রিপোর্টার গত ১৪ মার্চ খুলনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর তথ্য অধিকার আইনে কিছু তথ্য চেয়েছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেখান থেকে কোন তথ্য দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে খুমেক অধ্যক্ষ ডা: মো: দীন-উল-ইসলাম বলেন, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তথ্য প্রস্তুত করছেন। তিনি তার সাথে যোগাযোগ করতে বলায় পূর্বাঞ্চলের সংশ্লিষ্ট রিপোর্টার বিভাগীয় প্রধান ডা: শাহনাজ পারভীনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি গত ২৩ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত তিন দফায় দিচ্ছি-দেবানি বলে সময় ক্ষেপন করেন। সর্বশেষ গত ৩ এপ্রিল বিকেলে তিনি বলেন, আগামীকাল(৪ এপ্রিল সোমবার) কলেজে গিয়ে তিনি দেখবেন। কিন্তু গতকালও কোন তথ্য দেয়া হয়নি। আর তথ্য প্রদানের এই বিলম্বের মধ্যেই ধরা পড়লো রিপোর্ট জালিয়াতি।